বাংলাদেশে উল্লুক ও চশমাপরা হনুমান বিলুপ্তির ঝুঁকিতে
Published: 5th, May 2025 GMT
বিলুপ্তির সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বানরগোত্রীয় প্রাণীর (প্রাইমেট) একটি বৈশ্বিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশে থাকা উল্লুক (Western Hoolock Gibbon) ও চশমাপরা হনুমান (Phayre’s Langur)।
‘প্রাইমেটস ইন পেরিল: দ্য ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফাইভ মোস্ট এনডেঞ্জারড প্রাইমেটস’ (২০২৩-২৫) শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এই তথ্য এসেছে। প্রতিবেদনটির (১২ তম সংস্করণ) ৮ মে প্রকাশিত হবে।
প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করছে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের স্পিশিজ সারভাইভাল কমিশনের (আইইউসিএন-এসএসসি) প্রাইমেট স্পেশালিস্ট গ্রুপ (পিএসজি), প্রকৃতি সংরক্ষণ-পুনরুদ্ধারে কাজ করা সংস্থা রি-ওয়াইল্ড ও ইন্টারন্যাশনাল প্রাইমেটোলজিক্যাল সোসাইটি (আইপিএস)।
প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন ২৫টি প্রাইমেটের উল্লেখ আছে। এর বাইরে আরও বেশ কিছু প্রাইমেটের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো বিপন্ন বলে বিবেচিত। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উল্লুক ও চশমাপরা হনুমান রয়েছে।
প্রতিবেদনে চশমাপরা হনুমানবিষয়ক অংশের বিবরণ প্রস্তুতে ভূমিকা রেখেছেন জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের বাংলাদেশি গবেষক তানভীর আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই তালিকা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংরক্ষণ কৌশল প্রণয়ন, গবেষণা পরিকল্পনা ও আন্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের এই দুটি প্রাণীকে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, গবেষণায় অর্থায়ন ও নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সীমান্তবর্তী বনাঞ্চলে এই প্রজাতিগুলোর টিকে থাকার জন্য ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
তানভীর আহমেদ জানান, ২০২৩ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল প্রাইমেটোলজিক্যাল সোসাইটির ২৯ তম কংগ্রেসে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। বিপন্ন বন্য প্রাণীদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার, নীতিনির্ধারক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সচেতন করতে প্রতি দুই বছর পরপর এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
মৌলভীবাজারের আদমপুর বিটের উঁচু গাছে বাচ্চাসহ স্ত্রী উল্লুক.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি আরবে এক দিনে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
সৌদি আরবে এক দিনে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটিতে সম্প্রতি মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের হার বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশটিতে এক দিনে এত বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বলেছে, গত শনিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান এলাকায় সোমালিয়ার চারজন ও ইথিওপিয়ার তিনজন নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সৌদিতে হাশিশ (গাঁজার মতো একধরনের মাদকদ্রব্য) চোরাচালানের অভিযোগ ছিল।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া অন্য ব্যক্তি হলেন সৌদি আরবের নাগরিক। মাকে হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এএফপির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে ২৩০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে মাদক–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ ছিল।
এই হারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে থাকলে চলতি বছর দেশটিতে ২০২৪ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর দেশটিতে ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধের’ কারণেই মূলত সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। এ অভিযানের সময় যাদের আটক করা হয়েছিল, এখন বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।
প্রায় তিন বছর বন্ধ রাখার পর ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে মাদক–সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আবার শুরু করে সৌদি আরব।
সৌদি আরবে ২০২২ সালে মাদক-সম্পর্কিত অপরাধে ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই ধারাবাহিকতা সৌদি আরবের ‘উন্মুক্ত ও সহনশীল সমাজ’ গঠনের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করছে। অথচ এটাই ছিল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘোষিত ভিশন ২০৩০ সংস্কার কর্মসূচির মূল ভিত্তি।
তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ড অপরিহার্য এবং সব ধরনের আপিলপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই এই ধরনের সাজা কার্যকর করা হচ্ছে।