শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারসহ ৫ দাবিতে আল্টিমেটাম কুয়েট শিক্ষক সমিতির
Published: 5th, May 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) কিছুদিন আগেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। এখন আন্দোলন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। তারা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানোসহ পাঁচ দাবি জানিয়েছে। এজন্য তারা সাত কার্যদিবসের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
সোমবার (৫ মে) দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা এ আল্টিমেটাম দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড.
আরো পড়ুন: ক্ষমা প্রার্থনা ও অবস্থান স্পষ্ট করে কুয়েট শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি
আরো পড়ুন:
ক্ষমা প্রার্থনা ও অবস্থান স্পষ্ট করে কুয়েট শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি
গোপালগঞ্জে নার্স-মিডওয়াইফ শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন
প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, “সোমবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাঁটটি দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকরা সব প্রকার প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকবেন।”
শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, গত ২৫ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধি দল যে পক্ষপাতিতমূলক আচরণ করেছে তাতে শিক্ষকরা উপেক্ষিত হয়েছেন, শিক্ষকবৃন্দ এই ঘটনায় মর্মাহত এবং এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন, আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সহিংস ঘটনায় জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে একাডেমিক ও সব প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকবেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কুয়েটের শিক্ষকদের নিয়ে সব প্রকার সাইবার বোলিং, অবমাননা ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত-পূর্বক দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ে দাবিকৃত ৫ দফা, যার সঙ্গে শিক্ষকরা শুরু থেকেই একমত ছিল এবং যে দাবি পুরো না হওয়ার অভিযোগে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে- সেগুলো অতি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়েট বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত সব পেজ ও ব্যক্তিকে শনাক্ত করে অবিলম্বে সেগুলো বন্ধসহ আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. হযরত আলী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয়ে কুয়েট অডিটোরিয়ামে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে সভা।
সোমবার বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভিসির মাধ্যমে খোলা চিঠি প্রদান করেন। সেখানে তারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কুয়েট ভিসি, প্রো ভিসি, ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ ও ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কুয়েট কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা জোর করে ক্যাম্পাসের প্রবেশে করে হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। গত ১৫ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ ছাত্রকে বহিষ্কার এবং আগামী ২ মে হল খুলে দেওয়া ও ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত দেয় সিন্ডিকেট সভা।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৬ এপ্রিল ছয়টি আবাসিক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা। একই দিন দুপুরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। শিক্ষার্থীদের মিছিলের পরপরই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিপক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় এক দফার পক্ষে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) একই দাবিতে গ্রাফিতি এঁকেছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু কথা থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি শিক্ষকরা। ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র র পদত য গ উপ চ র য শ ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
মারধরের শিকার ছেলেকে পুলিশে দিলেন বাবা, মামলা করলেন, কেন
পরিবারে ১০ ভাই, ১ বোন। সবাই মোটামুটি সচ্ছল। কেউ ব্যবসা, কেউ অন্য কোনো কাজ করেন; কিন্তু এক ভাই ‘বিপথে’ যাওয়ায় এখন পুরো পরিবারের লজ্জায় মাথা ‘কাটা’ যাচ্ছে। পথেঘাটে কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। যাকে নিয়ে এই কাণ্ড, তাঁর নাম ইছা মিয়া (৩৫)। বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সাধেরখলা গ্রামে।
ইছা মিয়ার বাবার নাম সায়েদ মিয়া। এলাকায় তাঁর পরিচিতি এখন ‘চোর’, ‘নেশাখোর’। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা ও শাসনের পরও তাঁকে সুপথে ফেরানো যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে পুলিশে দিয়েছে পরিবার। বাবা বাদী হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
ইছা মিয়ার বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য হযরত আলী আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘নষ্ট একজনই যথেষ্ট। এক ভাইয়ের লাগি সমাজে মুখ দেখাইতাম পারি না। কত চেষ্টা করছি। আসলে সঙ্গদোষে ভাইটা আমার নষ্ট অইছে।’ তাঁর ভাষ্য, এলাকার কিছু ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে ইছা নেশায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি শুরু করেন। মানুষের বসতঘর, দোকানপাট, মসজিদ—কোনো কিছুই বাদ যায়নি। ধরাও পড়েছে বহুবার।
হযরত আলী ও তাঁর বাবা সায়েদ আলী বিএনপির রাজনীতি করেন। ইছা মিয়া করেন যুবলীগ। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ৩ জুন ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ইছা মিয়াকে নিয়ে। সেখানে দেখা যায়, তাঁকে একটি দোকানঘরের পাকা খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। নানাজন তাঁকে প্রশ্ন করছেন। তিনি হাঁপাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার ঘরও মালটি আছে। মালটি আইন্যা দেই। আমারে একটু পানি খাওয়াও। তোমরা যা কও, আমি তা–ই রাজি। আমারে তোমরা আর মাইরো না, অত্যাচারটা কইরো না...।’
এ ঘটনার পর ইছা মিয়ার পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়; কিন্তু কেউ আসেননি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কয়েকজন মুরব্বিকে আনা হয়। ইছার কাছ থেকে চুরি করা জিনিস উদ্ধার করা হয়। এরপর মুচলেকা রেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এক যুবককে চুরির অভিযোগে প্রকাশ্যে মারধর, খবর দেওয়ার পরও পরিবারের কেউ না আসা, পরে থানায় মামলা করা—এসব ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে একটি পরিবারের কষ্টের কথা জানা গেল।
বড় ভাই হযরত আলী বলেন, তিনি এলাকায় কয়লার ব্যবসা করেন। এলাকার একতা বাজারে তাদের একটি কাপড়ের দোকান আছে। সেখানে তাদের বাবা বসেন। ইছা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। একসময় পরিবার থেকে তাঁকে একটি বেকারি করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর ভাড়ায় চালানোর জন্য একটি মোটরসাইকেল চায় ইছা। সেটিও কিনে দেওয়া হয়। মোটরসাইকেল চালানোর কাজ করতে গিয়ে কিছু খারাপ ছেলের সঙ্গে তাঁর মেলামেলা শুরু হয়। সেখান থেকে নেশায় জড়ান।
শুরুতে পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পারেননি। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, ইছা মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁকে শাসন করা হয়; কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসেনি। এরপর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁর নামে চুরির অভিযোগ আসতে থাকে। বাবা ও অন্য ভাইয়েরা তাঁকে এসব ছেড়ে দিতে বলেন। বোঝানোর চেষ্টা করেন, মারধর করেন। পরিবারের কাছে আবার মোটরসাইকেল চান। সেটা কিনে দেওয়া হয়। আবার বিক্রি করে দেন, চুরির অভিযোগ আসতে থাকে। বছর দুই আগে বাড়ি থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।
ইছা মিয়া বউ আর তিন সন্তানকে নিয়ে চলে যান শ্বশুরবাড়ি, এলাকার লাকমা গ্রামে। কিন্তু স্বভাবে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি অব্যাহত রেখেছেন বলে পরিবারের লোকজনের ভাষ্য। বিভিন্ন সময় লোকজন চুরির অভিযোগে তাঁকে ধরলেও কখনো মারধর করা হয়নি। তবে ৩ জুন বেধড়ক মারধরের শিকার হন তিনি। ছাড়া পাওয়ার পর পরিবারের লোকজন তাঁকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে যান। এরপর পরিবারের অন্যরা খোঁজ করে তাঁকে ধরে তাহিরপুর থানায় নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে পুলিশে দেওয়ার পর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। এখন তিনি জেলা কারাগারে আছেন।
হযরত আলী বলেন, ভাইকে নানাভাবে শোধরানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। তাঁকে নিয়ে পরিবারের লোকজন কতটা কষ্টে আছে, অন্যরা তা বুঝতে পারবেন না। মানুষ ভাইয়ের কাছ থেকে চুরির জিনিস কম দামে কিনে নেন, কেউ কেউ অগ্রিম টাকাও দিয়ে রাখেন; আবার সমালোচনাও করেন। কতটা অসহায় হলে একজন বাবা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন, ছেলেকে নিয়ে পুলিশে দেন—এটা যিনি এ পরিস্থিতিতে পড়েননি, তিনি বুঝতে পারবেন না, আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন ইছার বড় ভাই!
আরও পড়ুনতাহিরপুরের সেই যুবলীগ নেতাকে পুলিশে দিল পরিবার১৫ জুন ২০২৫