শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় সরকার অটল অবস্থানের কথা তুলে ধরে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত এম সাখাওয়াত হোসেন ব‌লে‌ছেন, সব খাতের শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তার মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর।

সোমবার (৫ মে) ঢাকায় বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনভেনশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক ও বহ্নিশিখা যৌথভাবে শ্রম দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এই জাতীয় সংলাপ আয়োজন করে। এতে শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কর্মস্থলে সহিষ্ণুতা ও পরিবর্তনের কণ্ঠস্বরকে স্বাগত জানানো হয়।

‘বিল্ডিং বেটার ফিউচার: সেলিব্রেটিং ভয়েসেস অব রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড চেঞ্জ ফর ওয়ার্কপ্লেস ইনক্লুশন’ শিরোনামে আলোচনা সভাটি হয়। 

আরো পড়ুন:

সামাজিক-অর্থনেতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতিতে জোর

সিলেটে এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ

সেখানে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “গত  ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশে শিল্পায়ন হলেও তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য খাতের বিকাশ সীমিত। বড় নির্মাণ কোম্পানিগুলো যদি শ্রম আইন মেনে কেন্দ্রীয় তহবিলে লভ্যাংশ জমা না দেয়, তাহলে তারা সরকারি ক্রয় থেকে বাদ পড়বে।”

“এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর সকল হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ও সুপার শপকে  শ্রম আইন ২০০৬-এর আওতায় বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হবে,” বলেন তিনি।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশি পণ্যের  ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান রাখা হয়েছে।  শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (ওএসএইচ) নিশ্চিত করে এবং অনানুষ্ঠানিক খাত ও কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে শ্রম আইন সংশোধন করা হবে।

সভায় অংশ নেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর তুমো পুটিয়ানিন,  বিবিডিএন ও  বহ্নিশিখার পরিচালক এবং বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা।

সভার একাংশে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনেন অতিথিরা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতি অপরিহার্য

বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনরা জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশে ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে একটি কার্যকর জাতীয় নীতির প্রয়োজন, যাতে কেউ কর্মক্ষেত্রের জন‌্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সক্ষমতা ও মনোভাব থাকা সত্ত্বেও কর্মবাজার থেকে বঞ্চিত না হন।

উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে সোমবার (৫ মে) রাজধানীতে এক জাতীয় সংলাপে বিষয়টি উঠে এসেছে।

ইউসেপ বাংলাদেশ-এর শিক্ষার্থী মো. রুবেল ইসলাম বাস্তব দক্ষতার অভাব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আরো সুযোগ সৃষ্টি করার দাবি তোলেন।

আরো পড়ুন:

সিলেটে এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গোপালগঞ্জে ভবন থেকে পড়ে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিল্পের মধ্যে কি এমন কোনো যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে, যা যুবসমাজকে কর্মক্ষেত্রের চাহিদার বিষয়ে আপডেট রাখবে?” তিনি এমন উদ্যোগ চান, যাতে যুবসমাজের অর্জিত দক্ষতা শ্রমবাজারে প্রয়োগযোগ্য হবে।

চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে আসা লিলি প্রু মারমা কর্মক্ষেত্রে আদিবাসীদের চ্যালেঞ্জ- যেমন প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগের অভাব, ভৌগোলিক ও ভাষাগত বাধা তুলে ধরে তাদের কর্মসংস্থান নীতিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ ও জবাবদিহিতার কাঠামো গড়ে তোলার অনুরোধ করেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক ও বহ্নিশিখা যৌথভাবে শ্রম দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এই জাতীয় সংলাপ আয়োজন করে। এতে শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কর্মস্থলে সহিষ্ণুতা ও পরিবর্তনের কণ্ঠস্বরকে স্বাগত জানানো হয়।

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, “আমরা একত্রিত হয়েছি সকল শ্রমিকের, বিশেষ করে যাদের কণ্ঠস্বর প্রায়ই অশ্রুত হয়েছে, তাদের ধৈর্য, আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার স্বীকার করার জন্য। বাংলাদেশ যখন জনগণের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা গড়ছে, তখন সকল নারী ও পুরুষের জন্য সমান সুযোগের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা যাবে না।”

সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা সমাজে দৃষ্টান্তস্থাপন করা নারীদের ও পুরুষদের কথা শোনেন, যারা সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর অর্ন্তভুক্ত হলেও তাদের কাজের জগতে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং কর্মস্থলের প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।

বক্তারা বলেন, বৈষম্য কাঠামোগত এবং অচেতনভাবে এখনো বিদ্যমান। তাই তারা স্পষ্টভাবে নীতি এবং সংস্কৃতি ও মনোভাব পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

শ্রমিক প্রতিনিধি ও ন্যাশনাল কো-অরডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই) এর চেয়ারম্যান বাদল খান বলেন, কার্যকর অন্তর্ভুক্তি কেবল শ্রম অধিকারের ভিত্তিতেই অর্জন করা সম্ভব; এটি অবশ্যই অন্তর্ভুক্তি এবং সমতার ভিত্তি হতে হবে।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট তাহমিদ আহমেদ বলেন, অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই নীতির বাইরেও যেতে হবে। এটি কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতির অংশ হতে হবে, যা সকল কর্মীকে মর্যাদা এবং সুরক্ষা দেয়। আজ আমরা যে অভিজ্ঞতালব্ধ গল্পগুলো শুনেছি, তা আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র তৈরিতে আরো কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিউজ্জামান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার শুধু একটি উন্নয়ন লক্ষ্য নয়, এটি সবার জন্য মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। অন্তর্ভুক্তি কেবল ব্যক্তিদের উপকার করে না, এটি সমগ্র সম্প্রদায় ও অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে।

নারী ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ঘর থেকে শুরু করে যাতায়াতের পথে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার বিষয়টিকে নারীদের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির পথে মূল বাধা হিসেবে মনে করেন।

শারমিন এস মুরশিদ বলেন, গণপরিবহন এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ব্যাপকতা একটি বড় সমস্যা।

তিনি বলেন, “নারীদের কর্মজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতি সংস্কারের প্রয়োজন। আমরা শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।”

শ্রম উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এ সময় তিনি যৌন হয়রানি এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভয়াবহ হবে।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতি অপরিহার্য