Samakal:
2025-05-06@00:47:49 GMT

প্রধান পেশা কৃষি, নাকি রিকশা

Published: 5th, May 2025 GMT

প্রধান পেশা কৃষি, নাকি রিকশা

বিদেশি পণ্যের কদর বাঙালিদের কাছে খুব যে বেশি, তার উত্তম নমুনা কচুরিপানা ও রিকশা। বাংলাদেশে কচুরিপানা আসে ১৮৮৪ সালে। এর আগে এ দেশে কচুরিপানা ছিল না। ফুল দেখে মুগ্ধ হয়ে জর্জ মরগান নামে এক ব্যবসায়ী ব্রাজিল থেকে ঢাকায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন। এর পর খালবিল, জমি, জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৬ সালে এক কৃষি প্রতিবেদনে সারাবাংলায় ২০ শতাংশ জমি কচুরিপানায় ছেয়ে গিয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়; ১৯৩৭ সালে আইন পরিষদ নির্বাচনে শেরেবাংলা এ.

কে. ফজলুল হকের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল– ক্ষমতায় গেলে তিনি ‘কচুরিপানা উৎখাত’ করবেন! ব্রিটিশ-ভারত ও বাংলার সরকার ‘কচুরিপানা সপ্তাহ’, ‘কচুরিপানা বিধি’, ‘কচুরিপানা উৎখাত কর্মসূচি’র মতো দৃশ্যমান প্রকল্পও হাতে নিয়েছিল। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘সওগাত’-এ কচুরিপানা নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন– ‘ধ্বংস কর এই কচুরিপানা!/ (এরা) লতা নয়, পরদেশি অসুর-ছানা!’

দ্বিতীয় যে বিদেশি জিনিসটির বাংলাদেশে অতি দ্রুত বিস্তার হয়, তা হলো রিকশা। ঢাকায় রিকশার আগমন ১৯৪০ সালে। কলকাতায় এসেছিল ১৯০০ সালে। বিবিসি এক রিপোর্টে লিখেছে, ১৯৪১ সালে ঢাকায় রিকশা ছিল মাত্র ৩৭টি। ১৯৪৭ সালে ১৮১টি। ১৯৯৪ সালে রিকশা নিবন্ধন শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় রিকশার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭২-এ। ২০১৮ সালে বিলস নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় রিকশা ছিল ১১ লাখ। রিকশা-সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ছিল ২৭ লাখ। এখন নিশ্চয় তা বেড়েছে। 

ঢাকায় রিকশা চলে দুই শিফটে; দিনে ও রাতে। বেশির ভাগ চালক রিকশা চালান ১৫ দিন। বাকি ১৫ দিন অলস কাটান। সেই হিসাবে চালক সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ এবং ঢাকায় রিকশা চালানো পেশার ওপর নির্ভর জনসংখ্যা আধা কোটির কম নয়, অনুমান করি। রিকশা চালানোই সম্ভবত ঢাকার প্রধানতম পেশা। কৃষির পর সারাদেশে এটিই সম্ভবত বৃহত্তম একক পেশা হতে পারে বৈ কি!
যদিও এসব নিয়ে সরকারি পর্যায়ে খুব একটা উপাত্ত নেই। রিকশা নিয়ে এত কথার কারণ, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত ও পদচালিত রিকশার বাহুল্য। এ নিয়ে গলিতে গলিতে অভিযান, বিশৃঙ্খলা, ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বুয়েটের মতো খ্যাতিমান বিদ্যাপীঠে রিকশার মডেল নিয়ে অঢেল গবেষণাও নাকি হচ্ছে। কিছুদিন আগে শাহবাগে রিকশা জমাট কর্মসূচির ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। 
রিকশা আসার পরে আগাছার মতো বেড়েছে; জংলার মতো নগরে ছড়িয়েছে। রিকশা ঢাকার গতি মন্থর করেছে সত্য। অন্যদিকে যুক্তি আছে, রিকশা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমুন্নত রেখেছে। হিসাবটা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। গড়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার হিসাবে ১১ লাখ রিকশা প্রতিদিন সম্মিলিতভাবে ৬ কোটি ৬০ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। এই পথ ডিজেলচালিত একটি গাড়িতে পাড়ি দিতে প্রায় ৬৬ লাখ লিটার তেল লাগত, যার বাজারমূল্য দৈনিক প্রায় ৭০ কোটি টাকা। বছরে ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা! ডলারের হিসাবে প্রায় ২০০ কোটির বেশি। এ তো শুধু ঢাকা শহরের হিসাব। পুরো দেশের হিসাব আরও বড়। এই হিসাব গড়পড়তা ও আনুমানিক!

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মাত্র কয়েক দিন আগে ঢাকায় ইলেকট্রিক-ব্যাটারি রিকশা চলার ঘোষণা দিয়েছিল। এ জন্য কোনো সমীক্ষা তারা চালিয়েছিল কিনা, নজরে আসেনি। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে শুরু করলে হিসাবটা ঠিক উল্টে যাবে।
এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো, রিকশা নিয়ে গবেষণা নেই। ঢাকার যে বিশাল জনচাপ, তাতেও রিকশার দায় আছে। রিকশা শ্রমিক ও তার পরিবার-স্বজন মিলে আধাকোটির বেশি লোক ঢাকা ও আশপাশে থাকে। রিকশায় আয় বেশি। কৃষি শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য অংশ রিকশায় মাইগ্রেট হয়েছে। এর ফলে কৃষি খাত শ্রমিক সংকটে ভুগছে।  
হাজার হাজার হেক্টর জমি খালি পড়ে আছে। যেগুলো চাষাবাদ হচ্ছে, তাও শ্রমিক সংকটে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে যেতে পারছে না। আমাদের পেঁয়াজ সংকট, চাল সংকট, তেল সংকট প্রকট। পেঁয়াজ-আলু-সরিষা উৎপাদনের জন্য কৃষিজমির অভাব নেই। শ্রমিক সংকট প্রকট। শ্রমিক যা পাওয়া যায়, তাদের শ্রমমূল্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়ায় কৃষক পড়ছে বিপদে। কৃষির চেয়ে রিকশা চালানোই বেশি আরামের ও অর্থকরী। 

রাষ্ট্রে পর্যাপ্ত জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও খাতওয়ারি সুষম শ্রম বণ্টনের অভাবে বাংলাদেশে উৎপাদনশীলতা কমেছে বা কাম্য অবস্থায় নেই। ঢাকায় কোনো ওয়ার্ডে কতটি রিকশা থাকা দরকার কিংবা কৃষিতে কোন মৌসুমে কত শ্রমিক থাকা দরকার, সে উপাত্ত থাকা জরুরি। রবিশস্যের মৌসুমে কৃষিতে যে শ্রমিক থাকা দরকার, তারা তখন ঢাকায় অটোরিকশার মতো আরামদায়ক যান চালানোর জন্য জড়ো হচ্ছেন। 
রাষ্ট্রের উচিত শ্রম মাইগ্রেশন কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, কতটা– তা দেখা এবং খাতগুলোতে ভারসাম্য অবস্থা বজায় রাখা। তা করা গেলে এ বছর আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়লেও পরের বছরগুলোতে এমন হবে না বোধ করি। মহানগরও হবে শান্তিময়।

মনোয়ার রুবেল: প্রাবন্ধিক 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠাতে বিধিমালা হচ্ছে

সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত হলে এক কর্মস্থলে কেউ আর দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন না। এতে মাঠের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয়ে এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা-উপজেলা প্রশাসনে বদলি করা যাবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য সচিবালয়ের কর্মচারীদের মতো নিয়োগবিধি প্রণয়নের প্রস্তাব ওঠে। পর্যায়ক্রমে এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার ‘জনপ্রশাসন এবং মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য গত ৩০ এপ্রিল আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বর্তমানে ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪। এই বিধিমালা অনুযায়ী, সচিবালয়ের কর্মচারীরা পদোন্নতির মাধ্যমে উপসচিব (পঞ্চম গ্রেড) হতে পারেন। 
আর ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (দশম গ্রেড) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অভিন্ন বিধিমালা হলে একই নিয়মে হবে পদোন্নতি।

এ বিষয়ে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নিয়োগ বিধিমালা-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগির কমিটি বৈঠকে বসবে। আলোচনার পর বোঝা যাবে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। কেন এই বিধিমালা প্রয়োজন, সেটিও পর্যালোচনা করা হবে।’
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসন থেকেও দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটা করার। কারণ উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের ধরন একই। তাই এটিকে ভালো উদ্যোগ বলা যায়। তবে বিধিমালা চূড়ান্ত হলে বদলিসংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে জানা যাবে। 

এক পক্ষের সমালোচনা, আরেক পক্ষের স্বাগত
সচিবালয়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় ১৩ হাজার জন। নন-ক্যাডাররা (প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা এও এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বা পিও) পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী সচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব হতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাদের পদ দেওয়া হয় না। এজন্য ৫ আগস্টের পর আন্দোলনও করেন কর্মচারীরা। পরে কয়েক দফায় সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি হয় তাদের। এখন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী সচিব ৩৫৬ জন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ৭৮ জন ও উপসচিব পদে ৯ জন কর্মরত। আরও বেশি পদ সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন চলছে। 
ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এও পদ আছে ৮৩১টি। এর মধ্যে কর্মরত ৪৭৫ জন। বাকি পদে পদোন্নতি ও নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হলে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনে ব্রিটিশ আমল থেকে এও পদ থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ২০১৯ সালে সংখ্যা বাড়ানো হয়। মাঠ পর্যায়ে সব মিলে এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন অন্তত ১৫ হাজার।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আন্দোলন করেন কর্মচারীরা। সমস্যার সমাধান হলে কেউ আন্দোলন করবেন না। তিনি বলেন, ‘নন-ক্যাডারদের বান্দরবানে পোস্টিংয়ের ভয় দেখানোর জন্য এ উদ্যোগ। আন্দোলন বন্ধের কৌশল হিসেবে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা কেউ মানবে না। সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে।’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় এবং মাঠ প্রশাসন এক করলে সমস্যা তৈরি হবে। এজন্য সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠে বদলি করা হয় না। সচিবালয়ে এটা করা হলে অন্যান্য দপ্তরে জটিলতা বাড়বে।
বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম জাহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি পাচ্ছেন। অথচ আমাদের দশম গ্রেডের পর পদোন্নতির সুযোগ নেই। এটা বৈষম্য। আমরা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছি। সবার সুযোগ-সুবিধা সমান হওয়া উচিত।’

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ