Samakal:
2025-09-22@17:09:32 GMT

প্রধান পেশা কৃষি, নাকি রিকশা

Published: 5th, May 2025 GMT

প্রধান পেশা কৃষি, নাকি রিকশা

বিদেশি পণ্যের কদর বাঙালিদের কাছে খুব যে বেশি, তার উত্তম নমুনা কচুরিপানা ও রিকশা। বাংলাদেশে কচুরিপানা আসে ১৮৮৪ সালে। এর আগে এ দেশে কচুরিপানা ছিল না। ফুল দেখে মুগ্ধ হয়ে জর্জ মরগান নামে এক ব্যবসায়ী ব্রাজিল থেকে ঢাকায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন। এর পর খালবিল, জমি, জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৬ সালে এক কৃষি প্রতিবেদনে সারাবাংলায় ২০ শতাংশ জমি কচুরিপানায় ছেয়ে গিয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়; ১৯৩৭ সালে আইন পরিষদ নির্বাচনে শেরেবাংলা এ.

কে. ফজলুল হকের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল– ক্ষমতায় গেলে তিনি ‘কচুরিপানা উৎখাত’ করবেন! ব্রিটিশ-ভারত ও বাংলার সরকার ‘কচুরিপানা সপ্তাহ’, ‘কচুরিপানা বিধি’, ‘কচুরিপানা উৎখাত কর্মসূচি’র মতো দৃশ্যমান প্রকল্পও হাতে নিয়েছিল। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘সওগাত’-এ কচুরিপানা নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন– ‘ধ্বংস কর এই কচুরিপানা!/ (এরা) লতা নয়, পরদেশি অসুর-ছানা!’

দ্বিতীয় যে বিদেশি জিনিসটির বাংলাদেশে অতি দ্রুত বিস্তার হয়, তা হলো রিকশা। ঢাকায় রিকশার আগমন ১৯৪০ সালে। কলকাতায় এসেছিল ১৯০০ সালে। বিবিসি এক রিপোর্টে লিখেছে, ১৯৪১ সালে ঢাকায় রিকশা ছিল মাত্র ৩৭টি। ১৯৪৭ সালে ১৮১টি। ১৯৯৪ সালে রিকশা নিবন্ধন শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় রিকশার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭২-এ। ২০১৮ সালে বিলস নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় রিকশা ছিল ১১ লাখ। রিকশা-সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ছিল ২৭ লাখ। এখন নিশ্চয় তা বেড়েছে। 

ঢাকায় রিকশা চলে দুই শিফটে; দিনে ও রাতে। বেশির ভাগ চালক রিকশা চালান ১৫ দিন। বাকি ১৫ দিন অলস কাটান। সেই হিসাবে চালক সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ এবং ঢাকায় রিকশা চালানো পেশার ওপর নির্ভর জনসংখ্যা আধা কোটির কম নয়, অনুমান করি। রিকশা চালানোই সম্ভবত ঢাকার প্রধানতম পেশা। কৃষির পর সারাদেশে এটিই সম্ভবত বৃহত্তম একক পেশা হতে পারে বৈ কি!
যদিও এসব নিয়ে সরকারি পর্যায়ে খুব একটা উপাত্ত নেই। রিকশা নিয়ে এত কথার কারণ, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত ও পদচালিত রিকশার বাহুল্য। এ নিয়ে গলিতে গলিতে অভিযান, বিশৃঙ্খলা, ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বুয়েটের মতো খ্যাতিমান বিদ্যাপীঠে রিকশার মডেল নিয়ে অঢেল গবেষণাও নাকি হচ্ছে। কিছুদিন আগে শাহবাগে রিকশা জমাট কর্মসূচির ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। 
রিকশা আসার পরে আগাছার মতো বেড়েছে; জংলার মতো নগরে ছড়িয়েছে। রিকশা ঢাকার গতি মন্থর করেছে সত্য। অন্যদিকে যুক্তি আছে, রিকশা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমুন্নত রেখেছে। হিসাবটা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। গড়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার হিসাবে ১১ লাখ রিকশা প্রতিদিন সম্মিলিতভাবে ৬ কোটি ৬০ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। এই পথ ডিজেলচালিত একটি গাড়িতে পাড়ি দিতে প্রায় ৬৬ লাখ লিটার তেল লাগত, যার বাজারমূল্য দৈনিক প্রায় ৭০ কোটি টাকা। বছরে ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা! ডলারের হিসাবে প্রায় ২০০ কোটির বেশি। এ তো শুধু ঢাকা শহরের হিসাব। পুরো দেশের হিসাব আরও বড়। এই হিসাব গড়পড়তা ও আনুমানিক!

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মাত্র কয়েক দিন আগে ঢাকায় ইলেকট্রিক-ব্যাটারি রিকশা চলার ঘোষণা দিয়েছিল। এ জন্য কোনো সমীক্ষা তারা চালিয়েছিল কিনা, নজরে আসেনি। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে শুরু করলে হিসাবটা ঠিক উল্টে যাবে।
এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো, রিকশা নিয়ে গবেষণা নেই। ঢাকার যে বিশাল জনচাপ, তাতেও রিকশার দায় আছে। রিকশা শ্রমিক ও তার পরিবার-স্বজন মিলে আধাকোটির বেশি লোক ঢাকা ও আশপাশে থাকে। রিকশায় আয় বেশি। কৃষি শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য অংশ রিকশায় মাইগ্রেট হয়েছে। এর ফলে কৃষি খাত শ্রমিক সংকটে ভুগছে।  
হাজার হাজার হেক্টর জমি খালি পড়ে আছে। যেগুলো চাষাবাদ হচ্ছে, তাও শ্রমিক সংকটে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে যেতে পারছে না। আমাদের পেঁয়াজ সংকট, চাল সংকট, তেল সংকট প্রকট। পেঁয়াজ-আলু-সরিষা উৎপাদনের জন্য কৃষিজমির অভাব নেই। শ্রমিক সংকট প্রকট। শ্রমিক যা পাওয়া যায়, তাদের শ্রমমূল্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়ায় কৃষক পড়ছে বিপদে। কৃষির চেয়ে রিকশা চালানোই বেশি আরামের ও অর্থকরী। 

রাষ্ট্রে পর্যাপ্ত জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও খাতওয়ারি সুষম শ্রম বণ্টনের অভাবে বাংলাদেশে উৎপাদনশীলতা কমেছে বা কাম্য অবস্থায় নেই। ঢাকায় কোনো ওয়ার্ডে কতটি রিকশা থাকা দরকার কিংবা কৃষিতে কোন মৌসুমে কত শ্রমিক থাকা দরকার, সে উপাত্ত থাকা জরুরি। রবিশস্যের মৌসুমে কৃষিতে যে শ্রমিক থাকা দরকার, তারা তখন ঢাকায় অটোরিকশার মতো আরামদায়ক যান চালানোর জন্য জড়ো হচ্ছেন। 
রাষ্ট্রের উচিত শ্রম মাইগ্রেশন কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, কতটা– তা দেখা এবং খাতগুলোতে ভারসাম্য অবস্থা বজায় রাখা। তা করা গেলে এ বছর আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়লেও পরের বছরগুলোতে এমন হবে না বোধ করি। মহানগরও হবে শান্তিময়।

মনোয়ার রুবেল: প্রাবন্ধিক 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ডাকসু নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ 

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়ছে।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) চীনের রাষ্ট্রদূতে আমন্ত্রণে বাংলাদেশ অবস্থিত চীনা দূতাবাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ডাকসু নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

আরো পড়ুন:

রাবিতে কমপ্লিট শাটডাউনে ইবির জিয়া পরিষদের সংহতি

বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় রাবির ১৮ গবেষক

এতে ডাকসু সভাপতি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ এবং ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এইচএম মোশারফ হোসেনসহ সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদকবৃন্দ।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসন সুবিধা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নিজেদের মতামত প্রদান করেন সম্পাদকবৃন্দ। 

প্রস্তাবিত ৫০০০ ছাত্রীদের আবাসন সুবিধা সম্বলিত চায়না-বাংলাদেশ মৈত্রী হলের নির্মাণ কাজ এ বছরের মধ্যেই শুরু হবে বলে আলোচনা হয়। ডাকসুর নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আরো দুটো হল নির্মাণের প্রস্তাব দেন এবং রাষ্ট্রদূত তা বাস্তবায়নে দ্বিতীয় ধাপে যৌথভাবে কাজ করার আশ্বাস দেন। এছাড়াও তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া, স্বাস্থ্য, স্কলারশিপ, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ডাকসুর নব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে স্মারক প্রদান করা হয় এবং ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও শুভেচ্ছা স্মারক উপহার প্রদান করেন চীনের রাষ্ট্রদূত।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ