বগুড়া হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম মিল্লাত হোসেনকে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মার্কেট এলাকা থেকে এস এম মিল্লাত হোসেনকে আটকের পর মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীরা। মিল্লাত স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের নাটাইপাড়া এলাকায় বসবাস করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বগুড়া সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক (এসআই) রাজীব হোসেন জানান, গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের টেম্পল সড়কে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের জেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই দিন জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল আলম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ ১৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে এস এম মিল্লাত হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

আজ দুপুরে মিল্লাত হোসেনকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে (সদর আমলি আদালত) হাজির করা হয়। তবে বিকেল চারটা পর্যন্ত আদালত তাঁর বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি বলে জানান বগুড়া আদালত পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকেলে নিজ চেম্বারে রোগী দেখছিলেন মিল্লাত হোসেন। রাত আটটার দিকে এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক আবদুল্লাহ আল সানীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী চেম্বারে গিয়ে মিল্লাতকে ধরে বাইরে নিয়ে যান। এরপর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়সংলগ্ন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে সোপর্দ করা হয়। শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, কালিবাড়ী মোড় ও পৌরসভা লেন হয়ে ডিবি কার্যালয় পর্যন্ত নেওয়ার সময় মিল্লাতকে থেমে থেমে মারধর করা হয় এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল সানী গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৫ বছর এস এম মিল্লাত ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন। অনেকের কাছ থেকে চাকরির কথা বলে টাকা নিয়ে ফেরত দেননি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে নানাভাবে সহায়তা করছেন। তাঁকে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত এবং এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কথাও বলা হয়েছিল; কিন্তু তিনি শোনেননি। এ কারণে তাঁকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় টেনেহিঁচড়ে নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় তিন নারীর নামে মামলা

কুষ্টিয়ায় টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে নারী চিকিৎসক ও তাঁর স্বামীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় হওয়া মামলায় তিনজন নারীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী চিকিৎসক শারমিন সুলতানার স্বামী মুহাম্মদ মাসুদ রানা বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

মামলার এজাহারে বাদী করেছেন, সোমবার দুপুরে তাঁর স্ত্রী শারমিন সুলতানা (৩৭) শহরের কোর্টপাড়া র‌্যাব গলির লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ফোনকল পেয়ে রোগী দেখতে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর রিকশা থেকে নামা মাত্রই সংঘবদ্ধভাবে ওঁৎ পেতে থাকা এজাহারনামীয় আসামিরা তাঁর স্ত্রীর পথরোধ করেন এবং গালাগাল করতে থাকেন। তখন তাঁর স্ত্রী আসামিদের গালাগাল করতে নিষেধ করেন এবং গালাগালের কারণ জিজ্ঞাসা করলে আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁর স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, একপর্যায়ে আসামিরা চিকিৎসক শারমিন সুলতানার পরনের কাপড় টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে শ্লীলতাহানি করে। খবর পেয়ে তিনি (স্বামী) ও তাঁর গাড়িচালক স্ত্রীকে রক্ষা করতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। আসামিরা স্মার্টফোনসহ তাঁর স্ত্রীর কাছে থাকা সোনার গয়না ও দেড় লাখ টাকা নিয়ে নেয়। পরে তাঁদের হুমকিধমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

আরও পড়ুনটেনেহিঁচড়ে রাস্তার ওপর মারধর : থানা থেকে বাড়ি ফিরলেন ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক ১০ ঘণ্টা আগে

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, মামলায় তিনজন নারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের সবার বাড়ি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ জনকে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।

বিএনপির নিন্দা

চিকিৎসক দম্পতিকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও আক্রান্ত চিকিৎসক পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অতিসত্বর দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেনের পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ও ড্যাবের নেতা নাসিমুল বারী।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সারা বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসক নির্যাতনের ঘটনা চলমান রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবার প্রত্যাশা ছিল ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হবে; কিন্তু সেই সব ঘটনার আদৌ কোনো অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয়। আবারও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, এবার কুষ্টিয়ায় এক চিকিৎসক দম্পতি দুর্বৃত্তদের হিংস্রতার শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুননারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার ওপর মারধর, রক্ষা পাননি চিকিৎসক স্বামীও০৫ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ