পিছিয়ে যাওয়ার কারণ, উত্তরণের উপায় কী?
Published: 6th, May 2025 GMT
ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশ ক্রিকেটের গর্বের জায়গা। প্রতিপক্ষকে চোখ রাঙানি দিয়ে হারাতে পারা, প্রতিপক্ষের সমীহ আদায়, হারের আগেই হেরে না যাওয়া, দৃঢ় চেতা মনোবল, শতভাগ নিবেদন এবং মাঠে ও মাঠের বাইরে গোছানো একটি দল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে প্রচন্ড খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে রঙিন পোশাকে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে বিবর্ণ সময়টাই কাটাচ্ছে বাংলাদেশ। আইসিসির সর্বশেষ বাৎসরিক হালনাগাদ র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০ নম্বরে। সবশেষ বাংলাদেশের র্যাংকিংয়ে এমন অবনতি হয়েছিল ২০০৬ সালে।
বাংলাদেশের ওপরে কারা-নিচে আছে কে?
৪ রেটিং পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশ নয় থেকে দশ নম্বরে নেমেছে। ৭৬ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দশে। বাংলাদেশের ওপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও ভারত। বাংলাদেশের পেছনে জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, কানাডা, নেপাল, নামিবিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আরো পড়ুন:
শ্রীলঙ্কা সফরে তাসকিনকে পাচ্ছে বাংলাদেশ
নিজের টাকায় সোহানকে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার দেন আশিক
বাংলাদেশের পরে যে সমস্ত দল আছে তাদের মধ্যে জিম্বাবুয়ে বাদে বাকিরা ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় পর্যায়ে একেবারেই অনিয়মিত। খেলার সুযোগ হয় না বৈশ্বিক আসরগুলোতে। পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করার তাই সুযোগ কম। সেক্ষেত্রে নিয়মিত আন্তর্জাতিক মঞ্চে থাকা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশই।
র্যাংকিং হালনাগাদ কিভাবে হলো?
আইসিসির বাৎসরিক র্যাংকিংয়ের হালনাগাদ নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে মাস থেকে দলগুলির পারফরম্যান্স শতভাগ বিবেচনায় আনা হয়েছে। এছাড়া আগের দুই বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনা এসেছে শতকরা ৫০ ভাগ। ৫০ ওভারের সংস্করণে গত বছর আট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে। ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ও দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হয়। এর আগে নভেম্বরে শারজাহতে আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে। তারপর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়। ২০২৪ সালে ৯ ম্যাচে মাত্র তিনটি জিতেছে। হেরেছে নয়টি।
শেষ ১০ বছরের পারফরম্যান্স কেমন?
পহেলা জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর, এই ১০ বছরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে দেখা যায় ২০১৫ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেরা সময় কাটিয়েছে। এরপর ২০২৩ এবং ২০২২। ২০১৫ সালে ১৮ ম্যাচে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ১৩টি। ওই বছরই বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলেছিল। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল। রঙিন পোশাকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু হয়েছিল ওই বছর থেকে। যে সাফল্যের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ২০১৮ সালে ২০ ম্যাচে ১৩ জয় বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে ৩২ ম্যাচে ১১ জয় এবং ২০২২ সালে ১৫ ম্যাচে ১০ জয়।
পিছিয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ…
সমন্বয়ের বিশাল ঘাটতির কারণে দল পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সময়ের সাথে সাথে যেই দলটার এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, বিশ্ব ক্রিকেটে আরো পদচারণা বাড়ানোর সুযোগ ছিল সেখানে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে।
এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পারফর্মারের ঘাটতি। বারবার সুযোগ পাচ্ছেন এমন অনেকেই নিয়মিত পারফর্ম করতে পারছেন না। ব্যাটিং অনেকটাই নিষ্প্রাণ, বর্ণহীন, ছন্দহীন। ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার। এরপর লেট অর্ডার। সবখানেই পারফর্মারদের ঘাটতি চোখে পড়ছে। দলের বাইরে থেকে কাউকে এনেও মিলছে না সুফল।
স্থানীয় কোচের দাবি, ‘‘আমরা নিয়মিত যাদেরকে সুযোগ দিচ্ছি তারা প্রত্যেকে হেলায় নষ্ট করছেন। আপনি ওপেনারদের কথা দেখেন, ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করার সুযোগ থাকলেও করতে পারছেন না। আবার হয়তো শুরুতেই নিজের ভুলে পথ ভুলে যাচ্ছেন। আবার দলের বাইরে থেকে যে আসছে তার থিতু হতে সময় লাগছে। ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে বিশাল পার্থক্য তা বোঝা যাচ্ছে।’’
সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বোঝাতে চাইলেন, ‘‘আমার লক্ষ্য কী, কোন পথে দলকে নেব, কে আমার দলকে এগিয়ে নেবে, কে ম্যাচ জেতাবে সেই ভাবনা কারো মধ্যেই দেখছি না। শুধু অনুশীলন আর ম্যাচ খেলেই কী এগিয়ে যাওয়া যায়। সমস্যার গভীরে কেউই ঢুকছে না।’’
উত্তরণের উপায় কী?
বাংলাদেশ ‘এ’ দলের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল বললেন, ‘‘আমরা উত্তরণের উপায় খুঁজি, ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলি। কিন্তু মাঠে যদি সেই খেলাটা খেলতে না পারি তাহলে এতো কিছু আয়োজন করে লাভ কী? র্যাংকিংয়ে আমাদের অবনমন হচ্ছে এটা সত্যিই হতাশার। আমাদের যেমন দায়িত্ব আছে, ঠিক তেমন খেলোয়াড়দেরও দায়িত্ব আছে ভালো খেলা। তাদেরকে মাঠে সেই ভালো খেলাটা খেলে প্রমাণ করতে হবে।’’
‘এ’ দলের ম্যাচ আয়োজনে বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘‘৮-১০ বছর ধরে বলে আসছি…জাতীয় দলের যতগুলো খেলা হয় ততটুকু বা তার চেয়েও বেশি ‘এ’ দলের খেলার প্রয়োজন। আপনি যদি ‘এ’ দলকে প্রস্তুত না রাখেন, তাদের যদি নিয়মিত খেলার সুযোগ না দেন তাহলে খেলোয়াড় পাবেন কই জাতীয় দলের জন্য। তারা ভালো করলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। কিন্তু সেটা তো হচ্ছেই না। জাতীয় দলের ১১ জনের জন্য ২-৩ জন প্রস্তুত রাখতে পারলে এবং সেই প্রতিযোগিতা থাকতে পারলেই আপনার উন্নতি সম্ভব।’’
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইস স র প রফরম য ন স জ ত য় দল র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ফনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
পুঁজিবাজারের খাতে তালিকাভুক্ত ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ। ফলে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ১ টাকা নগদ লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারহোল্ডারা।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এই লভ্যাংশ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকা স্টক একাসচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
লাভেলোর শেয়ার অধিগ্রহণ ও ঋণ চুক্তি যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি
রেনাটার ৯ মাসে মুনাফা কমেছে ৩০ শতাংশ
এর আগে সোমবার (৫ মে) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।
তথ্য মতে, ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৩ জুলাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হবে। লভ্যাংশ প্রদানে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনের জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৩ জুন।
সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৫১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.৫৯ টাকা।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩২.৪২ টাকা।
এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্যসীমা থাকবে না।
ঢাকা/এনটি/এস