ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশ ক্রিকেটের গর্বের জায়গা। প্রতিপক্ষকে চোখ রাঙানি দিয়ে হারাতে পারা, প্রতিপক্ষের সমীহ আদায়, হারের আগেই হেরে না যাওয়া, দৃঢ় চেতা মনোবল, শতভাগ নিবেদন এবং মাঠে ও মাঠের বাইরে গোছানো একটি দল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে প্রচন্ড খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে রঙিন পোশাকে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে বিবর্ণ সময়টাই কাটাচ্ছে বাংলাদেশ। আইসিসির সর্বশেষ বাৎসরিক হালনাগাদ র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০ নম্বরে। সবশেষ বাংলাদেশের র‌্যাংকিংয়ে এমন অবনতি হয়েছিল ২০০৬ সালে।

বাংলাদেশের ওপরে কারা-নিচে আছে কে?
৪ রেটিং পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশ নয় থেকে দশ নম্বরে নেমেছে। ৭৬ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দশে। বাংলাদেশের ওপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও ভারত। বাংলাদেশের পেছনে জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, কানাডা, নেপাল, নামিবিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

আরো পড়ুন:

শ্রীলঙ্কা সফরে তাসকিনকে পাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজের টাকায় সোহানকে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার দেন আশিক

বাংলাদেশের পরে যে সমস্ত দল আছে তাদের মধ্যে জিম্বাবুয়ে বাদে বাকিরা ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় পর্যায়ে একেবারেই অনিয়মিত। খেলার সুযোগ হয় না বৈশ্বিক আসরগুলোতে। পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করার তাই সুযোগ কম। সেক্ষেত্রে নিয়মিত আন্তর্জাতিক মঞ্চে থাকা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশই।

র‌্যাংকিং হালনাগাদ কিভাবে হলো?
আইসিসির বাৎসরিক র‌্যাংকিংয়ের হালনাগাদ নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে মাস থেকে দলগুলির পারফরম্যান্স শতভাগ বিবেচনায় আনা হয়েছে। এছাড়া আগের দুই বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনা এসেছে শতকরা ৫০ ভাগ। ৫০ ওভারের সংস্করণে গত বছর আট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে। ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ও দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হয়। এর আগে নভেম্বরে শারজাহতে আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে। তারপর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়। ২০২৪ সালে ৯ ম্যাচে মাত্র তিনটি জিতেছে। হেরেছে নয়টি।

শেষ ১০ বছরের পারফরম্যান্স কেমন?
পহেলা জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর, এই ১০ বছরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে দেখা যায় ২০১৫ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেরা সময় কাটিয়েছে। এরপর ২০২৩ এবং ২০২২। ২০১৫ সালে ১৮ ম্যাচে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ১৩টি। ওই বছরই বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলেছিল। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল। রঙিন পোশাকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু হয়েছিল ওই বছর থেকে। যে সাফল্যের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ২০১৮ সালে ২০ ম্যাচে ১৩ জয় বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে ৩২ ম্যাচে ১১ জয় এবং ২০২২ সালে ১৫ ম্যাচে ১০ জয়।

পিছিয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ…
সমন্বয়ের বিশাল ঘাটতির কারণে দল পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সময়ের সাথে সাথে যেই দলটার এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, বিশ্ব ক্রিকেটে আরো পদচারণা বাড়ানোর সুযোগ ছিল সেখানে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে।

এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পারফর্মারের ঘাটতি। বারবার সুযোগ পাচ্ছেন এমন অনেকেই নিয়মিত পারফর্ম করতে পারছেন না। ব্যাটিং অনেকটাই নিষ্প্রাণ, বর্ণহীন, ছন্দহীন। ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার। এরপর লেট অর্ডার। সবখানেই পারফর্মারদের ঘাটতি চোখে পড়ছে। দলের বাইরে থেকে কাউকে এনেও মিলছে না সুফল।

স্থানীয় কোচের দাবি, ‘‘আমরা নিয়মিত যাদেরকে সুযোগ দিচ্ছি তারা প্রত্যেকে হেলায় নষ্ট করছেন। আপনি ওপেনারদের কথা দেখেন, ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করার সুযোগ থাকলেও করতে পারছেন না। আবার হয়তো শুরুতেই নিজের ভুলে পথ ভুলে যাচ্ছেন। আবার দলের বাইরে থেকে যে আসছে তার থিতু হতে সময় লাগছে। ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে বিশাল পার্থক্য তা বোঝা যাচ্ছে।’’

সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বোঝাতে চাইলেন, ‘‘আমার লক্ষ্য কী, কোন পথে দলকে নেব, কে আমার দলকে এগিয়ে নেবে, কে ম্যাচ জেতাবে সেই ভাবনা কারো মধ্যেই দেখছি না। শুধু অনুশীলন আর ম্যাচ খেলেই কী এগিয়ে যাওয়া যায়। সমস্যার গভীরে কেউই ঢুকছে না।’’

উত্তরণের উপায় কী?
বাংলাদেশ ‘এ’ দলের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল বললেন, ‘‘আমরা উত্তরণের উপায় খুঁজি, ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলি। কিন্তু মাঠে যদি সেই খেলাটা খেলতে না পারি তাহলে এতো কিছু আয়োজন করে লাভ কী? র‌্যাংকিংয়ে আমাদের অবনমন হচ্ছে এটা সত্যিই হতাশার। আমাদের যেমন দায়িত্ব আছে, ঠিক তেমন খেলোয়াড়দেরও দায়িত্ব আছে ভালো খেলা। তাদেরকে মাঠে সেই ভালো খেলাটা খেলে প্রমাণ করতে হবে।’’

‘এ’ দলের ম্যাচ আয়োজনে বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘‘৮-১০ বছর ধরে বলে আসছি…জাতীয় দলের যতগুলো খেলা হয় ততটুকু বা তার চেয়েও বেশি ‘এ’ দলের খেলার প্রয়োজন। আপনি যদি ‘এ’ দলকে প্রস্তুত না রাখেন, তাদের যদি নিয়মিত খেলার সুযোগ না দেন তাহলে খেলোয়াড় পাবেন কই জাতীয় দলের জন্য। তারা ভালো করলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। কিন্তু সেটা তো হচ্ছেই না। জাতীয় দলের ১১ জনের জন্য ২-৩ জন প্রস্তুত রাখতে পারলে এবং সেই প্রতিযোগিতা থাকতে পারলেই আপনার উন্নতি সম্ভব।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইস স র প রফরম য ন স জ ত য় দল র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে 
  • নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
  • পাড়ার মঞ্চ থেকে বড় পর্দায় 
  • বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%