চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব।
বুধবার (৭ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৯৪ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মার্চে রেমিট্যান্স এসেছে ৫০ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে এসেছে ৩১২ কোটি ২ লাখ মার্কিন ডলার। সৌদি আরব থেকে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে মোট ২ হাজার ১৭৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
শুধু মার্চ মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। এই মাসে অন্যান্য সময়ের ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিভাগে রেমিট্যান্স এসেছে সবচেয়ে বেশি। এর হার ৪৯ শতাংশ। এরপরের অবস্থানেই আছে চট্টগ্রাম বিভাগ, হার ২৯ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে আছে সিলেট বিভাগ, হার ৯ শতাংশ।
মার্চ মাসে রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য (ইউকে) থেকে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ২৯ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার, ওমান থেকে ১৮ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার, কুয়েত থেকে ১৮ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার, ইতালি থেকে ১৫ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার, কাতার থেকে ১১ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
ঢাকা/এনএফ/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম ট য ন স এস ছ অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প শুল্ক: বাংলাদেশ জিতল না হারল
বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। গত ২ এপ্রিল বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের জন্য শুল্কহার হবে ৩৭ শতাংশ। পরে ৮ জুলাই তা কিছুটা কমিয়ে করা হয় ৩৫ শতাংশ। আর ৩১ জুলাই চূড়ান্তভাবে ২০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশ আপাতত খুশি। স্বস্তি এসেছে অনেকটা। তারপরও প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কি জিতল না হারল?
তার আগে জেনে নেওয়া যাক কোন দেশের ওপর কত হারে শুল্কহার আরোপ করা হলো।
কোন দেশের ওপর কত শুল্কযুক্তরাষ্ট্র সরকার পাল্টা শুল্ক আরোপ–সংক্রান্ত যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছে, সেখানে কোন দেশের ওপর কত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী মোট ৬৯টি দেশ ও অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতির আওতায় পড়েছে। এর মধ্যে দেশের সংখ্যা ৬৬। তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য দুটি পৃথক হারভিত্তিক শ্রেণি এবং সবচেয়ে ছোট অঞ্চল হিসেবে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জকে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।
এখন দেখা যাক শুল্কহার অনুযায়ী কোন দেশ কোন শ্রেণিতে পড়ছে।
১০ শতাংশ শুল্ক: তিনটি দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যেমন ব্রাজিল, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ও যুক্তরাজ্য।
এর বাইরে তালিকায় যেসব দেশের নাম নেই, তাদের সবার ওপরেই ১০ শতাংশ হারে শুল্কহার ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এসব দেশ তাদের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।
১৫ শতাংশ শুল্ক: সর্বোচ্চসংখ্যক দেশের ওপর বসানো হয়েছে ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। এ রকম দেশের সংখ্যা ৩৯। যেমন আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, বলিভিয়া, বতসোয়ানা, ক্যামেরুন, চাদ, কোস্টারিকা, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো (ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক), ইকুয়েডর, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ফিজি, ঘানা, গায়ানা, আইসল্যান্ড, ইসরায়েল, জাপান, জর্ডান, লেসোথো, লিচেনস্টাইন, মাদাগাস্কার, মালাউই, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, নাউরু, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, নরওয়ে, পাপুয়া নিউগিনি, দক্ষিণ কোরিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, উগান্ডা, ভানুয়াতু, ভেনেজুয়েলা, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে।
এ ছাড়া ১৫ শতাংশ শুল্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর একটি ব্যাখ্যা আছে। যেমন যেসব ইউরোপীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই কম শুল্ক (১৫ শতাংশের নিচে) নিচ্ছিল, তাদের ওপর এখন এমনভাবে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যাতে মোট শুল্কহার হয় ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্রযোজ্য শুল্কহার হচ্ছে ১৫ শতাংশ।
১৮ শতাংশ শুল্ক: কেবল একটি দেশের জন্য এই হার আরোপ করা হয়েছে। দেশটি হচ্ছে নিকারাগুয়া।
১৯ শতাংশ শুল্ক: ৬টি দেশ এই শ্রেণিতে রয়েছে। যেমন কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড।
২০ শতাংশ শুল্ক: বাংলাদেশসহ আরও তিনটি দেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অন্য তিন দেশ হলো, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম।
২৫ শতাংশ শুল্ক: এই তালিকায় আছে ৫টি দেশ। যেমন ব্রুনেই, ভারত, কাজাখস্তান, মলদোভা ও তিউনিসিয়া।
৩০ শতাংশ শুল্ক: চারটি দেশের ওপর ৩০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যেমন আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, লিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
৩৫ শতাংশ শুল্ক: তালিকায় আছে দুটি দেশ। যেমন ইরাক ও সার্বিয়া।
৩৯ শতাংশ শুল্ক: মাত্র একটি দেশ, সুইজারল্যান্ড।
৪০ শতাংশ: মিয়ানমার, লাওস।
৪১ শতাংশ শুল্ক: সিরিয়া।
তাহলে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্রটা কেমন হলো?
বাংলাদেশ কী পেলযুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৪৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি। এসব পণ্যের ওপর দেশটি শুল্ক আদায় করেছে ১২৭ কোটি ডলার।
ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। ৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে এই শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। আগের গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ, নতুন শুল্কসহ গড় হার হবে ৩৫ শতাংশ। তবে পণ্যভেদে শুল্কহার আলাদা হবে। কারণ, মোস্ট ফেডারড নেশন বা এমএফএন অনুযায়ী পণ্যভেদে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব হার শূন্য থেকে ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গড় কার্যকর শুল্ক ২০২৫ সালের ১ জুন পর্যন্ত ছিল ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
পোশাক খাত: ২০২৪ সালে গড় শুল্কহার ছিল ১৬.৭৭ শতাংশ, পাল্টা ২০ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হলে নতুন গড় কার্যকর শুল্ক দাঁড়াবে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। পোশা ভেদে উদাহরণ হচ্ছে:
ম্যানমেইড ফাইবার সোয়েটার: আগের শুল্ক ৩২ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ৫২ শতাংশ।
তুলার সুতা দিয়ে তৈরি সোয়েটার: আগের শুল্ক ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সুতার কাপড়ে তৈরি ছেলেদের আন্ডারপ্যান্ট: আগের শুল্ক ৬ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ২৬ শতাংশ।
নিম্নশুল্কবিশিষ্ট পোশাক (যেমন ১ শতাংশ): নতুন মোট শুল্ক হবে ২১ শতাংশ।
জুতা: ২০২৪ সালে গড় শুল্কহার ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, পাল্টা শুল্কসহ গড় মোট শুল্ক ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, পণ্যভেদে শুল্কহার শূন্য থেকে ৫৫ শতাংশ।
হ্যাটস ও হেডগিয়ার: আগের গড় শুল্কহার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, পাল্টা শুল্কসহ নতুন গড় হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, পণ্যভেদে শুল্ক শূন্য থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।
চামড়াজাত পণ্য আগের গড় শুল্কহার: ১২ দশমিক ২০ শতাংশ, নতুন গড় হার: ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ, পণ্যভেদে হার শূন্য থেকে ২০ শতাংশ।
চামড়ার হাতব্যাগ: আগের শুল্ক ৯ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ৩১ শতাংশ।
এখন প্রশ্ন হলো, মার্কিন প্রশাসন কিসের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ওপর ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক আরোপ করল।
একটি নির্বাহী আদেশে সই করার পর সেটি দেখাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প