পৃথিবীর সব প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে গেলে কী হবে
Published: 7th, May 2025 GMT
সমুদ্রের তলদেশে থাকা রঙিন প্রবালপ্রাচীর পৃথিবীর সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বাস্তুসংস্থান হিসেবে পরিচিত। পানির নিচে থাকা এসব রঙিন ও জটিল কাঠামো মহাসাগরের প্রাণের আধার হিসেবেও আলোচিত। অসাধারণ সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এসব প্রবালপ্রাচীর পৃথিবী থেকে পুরোপুরি অদৃশ্য বা ধ্বংস হয়ে গেলে আমাদের গ্রহের সামগ্রিক পরিবেশ বদলে যাবে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, প্রবালপ্রাচীরগুলো সাধারণভাবে সমুদ্রের রেইনফরেস্ট হিসেবে কাজ করে। এসব প্রাচীরে প্রায় ২৫ শতাংশ সামুদ্রিক প্রজাতির আবাস। বিভিন্ন প্রাণীর প্রজননক্ষেত্র ও খাদ্যের উৎস এসব প্রাচীর। প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে গেলে অগণিত প্রজাতি তাদের আশ্রয় হারাবে। তখন ব্যাপক হারে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাবে। ছোট মাছ থেকে শুরু করে বড় শিকারি মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়ার আচরণ বদলে যাবে। হারিয়ে যাবে অনেক প্রজাতি। বিভিন্ন ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী—প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রবালপ্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল। প্রবালের অনুপস্থিতি খাদ্যশৃঙ্খলে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
আরও পড়ুনপ্রবালপ্রাচীর রক্ষায় অভিনব উদ্যোগ ২১ মার্চ ২০২৪বিভিন্ন প্রবালপ্রাচীর উপকূলীয় সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাচীর ঢেউয়ের শক্তি শোষণ করে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব কমিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। প্রবালপ্রাচীর হারিয়ে গেলে উপকূলীয় জনপদ ও অবকাঠামো সরাসরি ঢেউয়ের আঘাতের মুখে পড়বে। বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র ও নিচু উপকূলীয় দেশ বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়বে।
আরও পড়ুনরং হারাচ্ছে রঙিন প্রবালপ্রাচীর২৯ নভেম্বর ২০২৩সমুদ্রের প্রবালপ্রাচীর মৎস্যশিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোরিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার মতো বিভিন্ন দেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে প্রবালপ্রাচীরের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাঁদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রবালপ্রাচীরে থাকা বিভিন্ন মাছের ওপর নির্ভরশীল। প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হলে এসব মৎস্যভান্ডার পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপর চরম আঘাত দেখা যাবে। সাধারণভাবে প্রবালপ্রাচীর কার্বন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রবাল ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি। সমুদ্র থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে তৈরি হয় এসব প্রাচীর। প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হলে কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও আরও বাড়বে। সমুদ্রের লবণাক্ততা বৃদ্ধি করবে, যা অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জন্যও হুমকি তৈরি করবে।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপক ল য এসব প র প রব ল ক র বন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভারতকে পাল্টা জবাব দিতে হবে’: ট্রাম্পের শুল্ক ইস্যুতে শশী থারুর
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আগ্রাসনের জবাব দেওয়া উচিত।
কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।
সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের শশী থারুর বলেন, ‘প্রথমে আমাদের আলোচনায় বসা উচিত। জানি না, ট্রাম্প আমাদের ওপর এত রেগে আছেন কেন। চীনকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল, আর আমাদের মাত্র ২১ দিন। এখন যদি তারা শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, তবে আমাদের জবাবও হতে হবে পাল্টা শুল্ক।’
থারুর জানান, বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে গড়ে ১৭ শতাংশ শুল্ক নেয়। তাঁর কথায়, ‘আমাদেরও সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা উচিত। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি এটা করে, আমরাও একই কাজ করব।’
বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।শশী থারুর, কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতাগতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভারত বারবারই বলেছে, তার জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার সস্তা তেল কেনা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।
ট্রাম্পের চাপের মুখেও ভারত কি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে—এমন প্রশ্নে থারুর বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে, কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।’
বর্তমানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা কার্যত স্থগিত রয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে কৃষিসহ বেশ কিছু কৌশলগত খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার দিতে ভারতের রাজি না হওয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে। দেশীয় কৃষকদের স্বার্থেই এমন অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারতের কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। আমি জানি, এর জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হতে পারে, কিন্তু আমি প্রস্তুত। দেশের কৃষক, মৎস্যজীবী ও পশুপালকদের স্বার্থে ভারত প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন‘ট্রাম্প-মোদি ব্রোমান্স’ সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে কেন, সামনে কী১ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শশী থারুর বলেন, ‘ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষির সঙ্গে যুক্ত। সরকার যে–ই হোক—মোদির কিংবা আমাদের; কৃষকের পাশে দাঁড়াতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে থারুর বলেন, ‘বিদেশে আমাদের সত্যিকার বন্ধুরা বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু যাঁরা বুঝতে প্রস্তুত নন, আমাদের সম্পর্ককে আমাদের মতো করে মূল্য দেন না, তাঁদের বাদ দিয়ে আমাদের অন্য বন্ধু খুঁজতে হবে।’