রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রতি দখলবৃত্তির যে লালসা, তার একটি উৎকট প্রতিফলন কুমিল্লার লাকসামের দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনের জমিতে গজিয়ে ওঠা তথাকথিত ‘হকার্স মার্কেট’। প্রায় ৯ বছর ধরে বন্ধ থাকা স্টেশনের পাশে রেলওয়ের লুপলাইন ও জলাশয় ভরাট করে নির্মিত হয়েছে পাঁচ শতাধিক দোকানের একটি স্থায়ী মার্কেট, যার প্রতিটি ভিটি বিক্রি ও ইজারা প্রদানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর নিকটজনেরা। এই মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে একদিকে জাতীয় সম্পত্তি দখল করা হয়েছে; অন্যদিকে রেলের স্বাভাবিক চলাচল ও কার্যক্রমে তৈরি হয়েছে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এটি পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দখলের ঘটনা। এ দখলদারি রুখতে গিয়ে রেলকর্মীরা রাজনৈতিক প্রভাব, স্থানীয় প্রশাসনের নিস্পৃহতা এবং ক্ষমতাসীন দলের ভয়ংকর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে অপমানিত হয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন, যা রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার প্রতি এক নির্লজ্জ তাচ্ছিল্য বৈ কিছু নয়। এই দখলদারির নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তাঁর শ্যালক মহব্বত আলী, সাবেক মেয়র আবুল খায়েরসহ তাঁদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা।
এখানে একদিকে রেলওয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্থার জমি দখল হয়েছে, অপর দিকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান—যেমন লাকসাম পৌরসভা—নিজেই সেই দখলদারি কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হয়ে উঠেছে। মার্কেট নির্মাণ, টোকেনের মাধ্যমে দোকান বিক্রি, পরে ইজারা প্রদান—এই প্রতিটি ধাপেই রয়েছে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তরের এক সুপরিকল্পিত প্রয়াস।
উদ্বেগের বিষয়, ক্ষমতার পালাবদলের পর এই অবৈধ ব্যবসার উত্তরাধিকার গেছে বিএনপি নেতাদের হাতে। বিএনপির স্থানীয় নেতারা সেই একই অবৈধ ইজারা আদায়ের প্রক্রিয়া পরিচালনা করছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিকে রাজনৈতিক লুণ্ঠনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের এই প্রবণতা যে কেবল একটি দলের নয়, বরং গোটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক ভয়াবহ অধঃপতনের প্রতীক, তা এখানে স্পষ্টতই দৃশ্যমান।
প্রশ্ন জাগে—একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার জমি, যার ওপর ট্রেন চালনা নির্ভর করে, তা কীভাবে আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ইজারা দিতে পারে? একটি স্টেশনের লুপলাইন নিশ্চিহ্ন করে কীভাবে একটি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা যায়? কেন স্থানীয় প্রশাসন বারবার নির্লিপ্ত থাকে এবং কেন অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয় না? এসব প্রশ্নের জবাব রাষ্ট্রের কাছে জনগণের পাওনা।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। রেলওয়ের দখল করা সম্পত্তি অবিলম্বে উদ্ধার করতে হবে এবং সেই সম্পত্তিতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্ছেদ করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিরোধ আসবে, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু রাষ্ট্র যদি তার মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারে, তবে সেই রাষ্ট্রে আইনের শাসন ও জনস্বার্থ কথার কথা হয়ে থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র লওয় র দখলদ র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় যানজট নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন
খুলনা নগরীর যানজট নিরসন ও ফুটপাত অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করতে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কেএমপির সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘অবিলম্বে নগরী যানজটমুক্ত না হলে নগর জীবন অচল হয়ে পড়বে।’’
আরো পড়ুন:
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী নিহত
কুমিল্লায় অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, নিহত ২
এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও খুলনা আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি খান মনিরুজ্জামান। বক্তৃতা করেন নাগরিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসিন, সরদার আবু তাহের, মানবাধিকার কর্মী জামাল মোড়ল, মেজবাহ উদ্দিন পাপ্পু, বৃহত্তর খুলনাবাসীর সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান খোকন, মির্জা নুরুজ্জামান, শেখ আব্দুল হালিম, আলমগীর হোসেন খান, সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, মাহাবুবুর রহমান মুন্না, শেখ আইনুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রাণিপ্রেমী এস এম সোহরাব হোসেন।
সভায় বক্তারা কুয়েট গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘নগরীর পিটিআই মোড়, ময়লাপোতা মোড়, রয়্যাল মোড়, গল্লামারী, শিববাড়ি মোড়, ডাকবাংলা মোড়ে দিনে ও রাতে অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’’
কুয়েট গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পিটিআই মোড়ে এক ঘণ্টায় ৩ হাজার ২৫৩টি ইজিবাইক চলাচল করেছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইকের সংখ্যা ১০ হাজার। অথচ ৪৫ হাজারের বেশি ইজিবাইক চলাচল করায় ৩ লাখ যাত্রীর চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।
যানজটকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ‘‘রোগী পরিবহনে ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। লোয়ার যশোর রোড, ক্লে রোড, স্যার ইকবাল রোডের ফুটপাত অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে যাওয়ায় পথচারী চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।’’
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল