জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত, দ্বিধান্বিত: মাহফুজ আলম
Published: 8th, May 2025 GMT
জুলাই অভুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত ও দ্বিধান্বিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হলেন মো. মাহফুজ আলম। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন ছাত্র জনতার সরকারের রূপরেখা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অংশীজন নির্ধারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা এই ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, ছাত্রদের কয়েকটি দল হয়ে যাওয়াতে তারা এখন বিভক্ত। তারপরও অন্য রাজনৈতিক দলের মতই তারা ট্রিটেড হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমএফসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেছেন।
‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ শিরোনামে তাঁর ফেসবুকটি পোস্টটি নিচে উল্লেখ করা হলো। তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। ফলে কাজের দায় সরকারের, কিন্তু কাজ করে ক্ষমতার অন্যান্য ভরকেন্দ্র। জোড়াতালি দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব না, সম্ভব নয় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরের পর সহযোগী ভূমিকায় নেই। কিন্তু ঠিকই প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশে তারা স্টেইক নিয়ে বসে আছেন। এস্টাবলিশমেন্ট দ্বিদলীয় বৃত্তে ফিরতে এবং ছাত্রদের মাইনাস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
তিনি লিখেছেন, ‘প্রায় তিন ডজন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র মাত্র দু’জন। ছাত্র প্রতিনিধিদেরও এস্টাবলিশমেন্ট রাষ্ট্রপতি অপসারণের ঘটনার পর থেকে কোণঠাসা করে রেখেছে। আমরা দু’জন সর্বোচ্চ ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট করতে পারছি, কিন্তু প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে হলে সরকারে সুষম ছাত্র প্রতিনিধিত্ব লাগবে। ছাত্রদের কয়েকটি দল হয়ে যাওয়াতে তারা এখন বিভক্ত, তদুপরি অন্য রাজনৈতিক দলের মতই তারা ট্রিটেড হচ্ছেন। এজন্য নাগরিক কমিটিই ছিল দীর্ঘমেয়াদে অভ্যুত্থানের ফোর্স হিসেবে টেকসই। যাই হোক! এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্ম দেশব্যাপী ছাত্রদের গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অভুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত ও দ্বিধান্বিত।’
মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র কম্প্রোম্পাইজড। মিডিয়া ও ব্যবসায়ে লীগের আধিপত্য কমেনি। লীগের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে হাত দেওয়া যায়নি। পুরাতন দ্বিদলীয় বন্দোবস্ত টিকে গেছে। বিচার বিভাগ এখনো দ্বি-দলীয় বৃত্তে বন্দি। বাম-ডানের কালচারাল ক্যাচাল জুলাইকে দুর্বল করেছে এবং শাহবাগ-শাপলাকে চিরন্তন করে তুলেছে। ডানপন্থীরা ভুল রাজনীতি করেছেন এবং নতুন বাস্তবতায় আবগের বশে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছেন। বামপন্থীরা প্রথম থেকেই সরকারের প্রতি স্কেপ্টিক্যাল এবং অভ্যুত্থানের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রাখতে অসফল।’
তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি আর কোরামবাজির খপ্পরে পড়েছেন। আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ হাতেগোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে, কিন্তু ডিমোরালাইজড হয়েছে সমগ্র ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রতিষ্ঠান ও নতুন সিভিল সোসাইটি গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অ্যালায়েন্সের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার কোনো হিস্যা নেই। শহীদ-আহতদের ক্ষেত্রে এবং বিচারের প্রশ্নে সরকারসহ সকল অংশীজন অসফল। অভ্যুত্থান শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়নি। এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থবাদী চিন্তা ও কর্মের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব এজন্য দায়ী। সর্বোপরি ছাত্রদের মাইনাস করে (ছাত্রদের ব্যর্থতা অনস্বীকার্য বটে) দ্বিদলীয় বন্দোবস্তে ফেরার জন্য এস্টাবলিশমেন্ট অপেক্ষমান। ছাত্রদের পরিপূর্ণ অসহযোগিতার মুখে ইতোমধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সমাধান? রাষ্ট্র ও এস্টাবলিশমেন্টে ছাত্রদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঘাত করা। এগুলো করার পূর্বশর্ত হলো, ছাত্রদের মধ্যে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা। পুরাতন বন্দোবস্তের সৈনিকদের অকার্যকর করে তোলা।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন র ছ ত র জনত সরক র র বন দ ব দল য় ব
এছাড়াও পড়ুন:
এক কোটির অধিক নতুন সদস্য সংগ্রহে কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
এক কোটির অধিক নতুস সদস্য সংগ্রহে দুই মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ১৫ মে থেকে শুরু হয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) প্রাথমিক সদস্য নবায়ন সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকের পর রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, “এবার শুধুমাত্র নবায়ন নয়, আমাদের কাজ শুরু হবে আগামী ১৫ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। দুই মাস এটি চলবে সেটা হচ্ছে নবায়ন এবং দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য দ্রুত গতিতে দেশব্যাপী আমাদের যে টার্গেট, আমরা টার্গেট করেছি প্রায় এক কোটির অধিক এবার প্রাথমিক সদস্য করব ইনশাল্লাহ।”
আরো পড়ুন:
হাসনাতের ওপর হামলায় বিএনপি নেতা আসামি, প্রতিবাদে মানববন্ধন
দল ছেড়ে ইসলামী আন্দোলনে মোস্তাফিজুর, যা বলছেন বিএনপি নেতারা
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আপনারা জানেন যে, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী যে দুঃসময় গেছে, সেই দুঃসময় স্বাভাবিকভাবে কোনো রাজনৈতিক কার্যত্রম করা যায়নি। আপনারা দেখেছেন, প্রায় দিনের পর দিন তারা এই দলীয় কার্যালয় আক্রমণ করেছে। আমাদের দলের প্রয়োজনীয় যে জিনিসপত্র থাকে-কম্পিউটার, টাইপ টাইটার, ফ্যাক্স মেশিন ইত্যাদি তারা ভাঙচুর করেছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণতন্ত্রের জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠান একটি সুষ্ঠু নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। সেই নিয়ম-শৃঙ্খলাকে একেবারে পর্যুদস্ত করার জন্য এবং একচ্ছত্র একদলীয় দুঃশাসনকে কায়েম রাখার জন্য তারা বিরোধীদলগুলোর ওপর মুহূর্মুহূ আক্রমণ করেছে। এই দলীয় কার্যালয় কতবার যে ভাঙচুর করেছে, তছনছ করেছে, আমাদের কম্পিউটার, দলিল, ফাইল-সব রাস্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেক কিছু তারা এখান থেকে নিয়ে গেছে। সেই পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে পুনর্গঠন করা আমাদের জন্য কঠিন ব্যাপার, সেটা আমাদের করতে হচ্ছে। আমাদের দল করতে কত লোক আগ্রহী, সেটাও আমাদের যে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে, সেটি এই অভিযানের মধ্য দিয়ে জানতে পারব।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত প্রমুখ ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/এসবি