‘ফাইনালে ওদের মুখোমুখি হওয়া দুঃস্বপ্নের মতো’— বার্সাকে নিয়ে এনরিকে
Published: 8th, May 2025 GMT
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রোমাঞ্চকর সেমিফাইনাল শেষে বার্সেলোনার বিদায় নিয়ে হতবাক প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) কোচ লুইস এনরিকে। দুই লেগ মিলিয়ে ছয় গোল করেও ফাইনালে উঠতে না পারায় সাবেক বার্সা কোচ এই পরিণতিকে ‘অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে একই সঙ্গে স্বীকার করেছেন, ফাইনালে সাবেক ক্লাব বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়াই হতো তার কাছে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’।
৩১ মে মিউনিখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হবে ফরাসি ক্লাব পিএসজি ও ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলান। তবে সান সিরোতে বার্সেলোনার বিদায়ের ধরন ছিল রীতিমতো নাটকীয়। নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সেসকো অ্যাচারবির গোলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেই দাভিদে ফ্রাত্তেসির নাটকীয় গোলে বার্সার স্বপ্নভঙ্গ হয়।
গত রাতে আর্সেনালকে হারানোর পর স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল মুন্দো দেপোর্তিভোকে লুইস এনরিকে বলেন, আপনি কল্পনা করতে পারেন? বার্সেলোনা ছয় গোল করেছে সেমিফাইনালে, তবুও ফাইনালে উঠতে পারেনি! বেশিরভাগ মানুষ এটা বিশ্বাসই করবে না।
তিনি আরও যোগ করেন, বার্সেলোনা নিঃসন্দেহে ফাইনালের যোগ্য ছিল। ফলটা ছিল খুব অদ্ভুত। তবে খোলাখুলিভাবে বলছি, ফাইনালে বার্সার মুখোমুখি হওয়া হতো আমার দুঃস্বপ্নের মতো।
এনরিকে বার্সেলোনায় খেলেছেন ১৯৯৬ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত। পরে এনরিকে বার্সার কোচ হয়ে ফিরেছেন ২০১৪ সালে। তার অধীনেই ২০১৪-১৫ মৌসুমে ট্রেবলসহ পাঁচটি ট্রফি জেতে বার্সা। এদিকে, গত রাতে আর্সেনালকে হারিয়ে পিএসজিকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন এনরিকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে আগামী ৩ ও ৪ জুলাই। চুক্তি হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের হার কিছুটা কমবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ওয়াশিংটন যাবেন। একই বিষয়ে ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান ইউএসটিআরের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। ইউএসটিআরের সঙ্গে আগামী বৈঠকেও খলিলুর রহমান উপস্থিত থাকবেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করার দ্বারপ্রান্তে আছি ঠিক, তবে এটা শর্ত সাপেক্ষে। যদি মনে করি যে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলো মানা সম্ভব, তাহলেই চুক্তি হবে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু তথ্য পাওয়া বাকি আছে। শর্তসহ পুরো প্রক্রিয়াটা উপদেষ্টা পরিষদকে জানাব। ৩ জুলাইয়ের আগে না গিয়ে পরেও যেতে পারি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা তো যুক্তরাষ্ট্রে আছেনই।’
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে আসছে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। শুল্কের হার কম-বেশি করে দেশটি একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় ৬০টি দেশের ওপর।
বাড়তি শুল্ক আরোপ কার্যকরের কথা ছিল ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক হারের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আশাবাদী যে স্থগিতের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিন মাসের জন্য সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে গত ৭ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানো নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে বলে জানানো হয়।
ইউএসটিআরের রাষ্ট্রদূত জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে একই দিন আলাদা চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে, তা দূর করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
উভয় দেশের মধ্যে এরপর দুই মাসে কয়েক দফা সরাসরি বৈঠক হয়েছে। হয়েছে চিঠি-চালাচালি এবং অনলাইন বৈঠক। ইউএসটিআরের সঙ্গে এর আগে গত ২১ এপ্রিলও ওয়াশিংটনে একটি বৈঠক হয় বাংলাদেশের। এতে তারা ছয়টি বিষয়ে জানতে চায়। ৪ জুন চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা জানানো হয়। শুল্ক চুক্তির খসড়াটি করা হয় ১২ জুন, যার ৫ দিনের মাথায় ১৭ জুন এর ওপর করা হয় অনলাইন বৈঠক। এ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ২৬ জুন ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন।
যে ছয় বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেগুলো কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে কথা না বলার শর্ত রয়েছে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু বিষয় চেয়েছে, যা তাদের দেশের আইনে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের আইনে প্রযোজ্য নয়, এমন বিষয়ে একমত না হতেই দর-কষাকষি করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, ভিয়েতনাম, জাপান ইত্যাদি দেশ পাল্টা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে এ বিষয়ে তারা কোনো ধরনের আলোচনায় আর বসবে না।
বাণিজ্যসচিব গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্কের হার কমাতে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশই এগিয়ে রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি তিন লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি টনে ২০ থেকে ২৫ মার্কিন ডলার বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকেই এ গম আমদানি করা হবে। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোয়িং উড়োজাহাজ আমদানির। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিমাণ বাড়াতে কয়েকটি গুদাম নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়, এমন বেশির ভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক রাখা হয়নি অর্থাৎ শূন্য শুল্ক করে দেওয়া হয়েছে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মো. ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি লম্বা সময়ের জন্য স্থগিত করবে। একান্ত যদি না–ই করে, সরকারের উচিত হবে দেশটির সঙ্গে দেনদরবার করে বাংলাদেশের শুল্কের হার যেন প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত ইত্যাদি দেশের সমান বা কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায়।’
ফজলুল হক আরও বলেন, ভারতের পাল্টা শুল্কের হার বাংলাদেশের চেয়ে কম। ভারত যদি দর-কষাকষি করে আরও কমাতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের বিপদ ভবিষ্যতে বাড়বে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।