দুই যুগ আগে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর রায় ঘোষণা শুরু করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করেন।
শুরুতে আদালত বলেন, আজ ঘটনা ও সাক্ষী পর্যালোচনা করা হবে। বাকিটা (রায়) পরবর্তী তারিখে হবে। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, ‘তাহলে রায়ের আদেশ অংশ (সিদ্ধান্ত) আজ হচ্ছে না?’ তখন আদালত বলেন, ‘আজ আদেশ অংশ হচ্ছে না।’ এরপর রায় ঘোষণা শুরু হয়।

এর আগে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর গত ৩০ এপ্রিল বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত রায়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিন ধার্য করেন। এ অনুসারে মামলাটি রায়ের জন্য আজ আদালতের কার্যতালিকায় ১৬৩ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। এ ঘটনায় করা মামলা রমনায় বোমা হামলা মামলা হিসেবে পরিচিত পায়।

ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য গত বছরের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের কার্যতালিকায় ওঠে। পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু হয়।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সরওয়ার আহমেদ। দুই আসামির পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসিফ ইমরান।

রাজধানীর রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। এই রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন আকবর হোসেন, আরিফ হাসান, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান। তবে সিলেটে গ্রেনেড হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের।

কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স এবং এসব আপিল ও আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।

বোমা হামলার ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে আসে, যা ২০১৪ সালে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এরপর শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। হত্যা মামলায় পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল ২০১৬ সালে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে প্রথম শুনানির জন্য ওঠে।

শুনানিও শুরু হয়। পরে কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ নিয়ে আলোচিত এই মামলায় আট আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় উঠলেও শুনানি শেষে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল হাইকোর্টের ওই দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য গত বছরের ৮ ডিসেম্বর কার্যতালিকায় ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে এই মামলায় আজ রায় দেওয়া শুরু হলো।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ক র যত ল ক য় ন র জন য আইনজ ব আপ ল ও ও আপ ল র ওপর ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

শীতলক্ষ্যা নদীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষিত পানি-বর্জ্য ফেলা রোধে পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠনের নির্দেশ

শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষিত পানিসহ অন্যান্য বর্জ্য যাতে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলতে না পারে, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।

শীতলক্ষ্যার পানিদূষণ বন্ধে ও অবৈধভাবে নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে তিন আইনজীবী গত ২৪ এপ্রিল রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

পরে আদেশের বিষয়টি জানিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি কী পরিমাণ দূষিত হয়েছে এবং ক্ষতি হয়েছে, তা অর্থে নিরূপণ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

শীতলক্ষ্যা নদীর পানিদূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন নদীটির পানি দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, কেন দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নদীদূষণের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাড়িতে গন্ধ ছড়ানোর পর উদ্ধার আইনজীবীর গলিত মরদেহ
  • মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের ওপর রায় ২৭ মে
  • ঢাবিতে প্রভাষক পদে ফাইজুল হক ঈশানকে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের
  • মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের ওপর দ্বিতীয় দিনে শুনানি শুরু
  • মামলায় গ্রেপ্তারে অনুমতির সিদ্ধান্ত স্থগিতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানি ১৯ মে
  • জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের চূড়ান্ত শুনানি ১৩ মে
  • চিত্রপরিচালক চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন স্থগিত
  • শীতলক্ষ্যা নদীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষিত পানি-বর্জ্য ফেলা রোধে পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠনের নির্দেশ