আ.লীগ নেত্রীর মেয়ের নাম জুলাইযোদ্ধার তালিকায়, প্রতিবাদ করায় কলেজছাত্রকে কুপিয়ে জখম
Published: 9th, May 2025 GMT
নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় এক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেত্রীর মেয়ের নাম জুলাইযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ করায় তাঁকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মিনহাজুর রহমান (১৭) নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। সে শহরের বাসাইল এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত শাহ আলম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইভা আলমের স্বামী। তিনি সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব। শাহ আলম, তাঁর ভাই শাহেদ হোসেনসহ অন্তত ২০ জন হামলা করেন বলে অভিযোগ। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আজ শুক্রবার ঘটনা জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী ও স্বজনেরা জানান, জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকা প্রস্তুতের সময় আন্দোলনে অংশ না নিলেও ইভা আলম ও শাহ আলম দম্পতির মেয়ের নাম জুলাইযোদ্ধ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। পরে মিনহাজুর রহমানসহ নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জুলাইযোদ্ধার তালিকা থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের নাম বাদ দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। সম্প্রতি জুলাইযোদ্ধাদের অনুদানের চেক বিতরণ করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেখানে আহত হিসেবে অনুদান পাননি ইভা–শাহ আলম দম্পতির মেয়ে। এরপর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আসছিল ইভা ও শাহ আলম দম্পতি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরার সময় মিনহাজুর রহমানের ওপর শাহ আলম ও তাঁর ভাই শাহেদ হোসেন দলবল নিয়ে হামলা করেন। এ সময় দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, ওই কলেজছাত্রের ফুসফুসে আঘাতের চিহ্ন ছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
হামলার সময় মিনহাজুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহপাঠী সাজিদ হোসেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনের পর থেকে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গতকাল রাতে অন্তত ২০ জনের মতো লোক মিনহাজুরকে দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের ক্যাডার।
এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত শাহ আলম ও ইভা আলমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হ আলম
এছাড়াও পড়ুন:
ককটেল ফেটে কব্জি উড়ে গেল ডাকাতের, যন্ত্রণায় মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাল্কহেডে ডাকাতি করতে গিয়ে হাতে ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অপর দুই ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। এছাড়া ডাকাত দলের হামলায় দুই গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে গজারিয়া উপজেলা হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ডাকাতদের নারায়ণগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করে।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহত ডাকাত সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ডাকাত দলের হামলা আহতরা হলেন, ভাটি বলাকী গ্রামের ইসহাক বেপারীর ছেলে আলম (৩৭) ও একই গ্রামের রাসেলের ছেলে সোহাগ (১৬)।
আরো পড়ুন:
ছেলের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে লাশ হলেন বাবা
সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে রাখা ছিল কয়েকটি বাল্কহেড। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে একটি স্পিডবোট নিয়ে সেখানে ডাকাতির চেষ্টা করে সঙ্ঘবদ্ধ একটি নৌ ডাকাত দল। তবে নদীতে জেলেরা থাকায় সুবিধা করতে না পেরে তারা ফিরে যায়।
পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি স্পিডবোট ও একটি ট্রলার নিয়ে তারা আবার ফিরে আসে। খবর পেয়ে ভাটি বলাকী গ্রামের লোকজন তাদের বাধা প্রদান করে। আতঙ্ক তৈরি করতে ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে ২-৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতদল। এ সময় ট্রলার থেকে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়তে গিয়ে অসাবধানতাবশত তা ডাকাত দলের এক সদস্যের হাতে বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই ডাকাত সদস্যের এক হাতের কব্জি উড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্পিডবোটে থাকা ৫-৬ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে, ট্রলারে থাকা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে ধাওয়া দিয়ে নদীর চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় থেকে আটক করে জনতা। পরে উত্তেজিত জনতা তাদের গণধোলাই দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় একজন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “এ রকম একটি খবর আমি পেয়েছি। ঘটনা নদীতে আর ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সীমানায় পড়ায় বিষয়টি তারা দেখছে।”
বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সালেহ আহম্মেদ পাঠান বলেন, “আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী তারা শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আনন্দবাজার এলাকা থেকে একটি জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে। ছিনতাই করা ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে কয়েকজন ডাকাত মেঘনা নদীর গজারিয়া উপজেলার ভাটি বলাকী এলাকায় ডাকাতি করতে যায়।”
তিনি বলেন, “স্থানীয়রা তাদের বাধা দিলে ডাকাতরা জনগণকে উদ্দেশ্য করে কয়েক কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলে শুনেছি। ককটেল নিজের হাতে বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকেসহ তিন ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে জনতা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “তাদের তিনজনের অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য তাদের নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর একজন মারা গেছে। নিহতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে আমরা দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছি।”
বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম, “এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে দুইজন রোগী আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন যার হাতে ককটেলে বিস্ফোরিত হয়েছিল, সে মারা গেছে। আরেকজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি।”
বিষয়টি সম্পর্কে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছে। আহত দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি। তাদের নাম পরিচয় জানতে চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/রতন/মেহেদী