দেশের চাহিদার ৬০ লাখ টন গম আমদানি করতে হয় বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি জানান, বর্তমান দেশের জনগণ সকালের বেলায় ভাতের পরিবর্তে গমের আটার রুটি খাচ্ছে। কিন্তু দেশে মাত্র ১০ লাখ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়। আর বাকি ৬০ লাখ টন গম বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়।

শনিবার (১০ মে) দুপুরে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের রেস্ট হাউজে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাঙামাটি জেলার খাদ্য মজুদ ও বিতরণ পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি এ কথা বলেন।

খাদ্য উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ নিয়ে কিছু সংশয় ছিল। দেশে প্রায় ৩০ লাখ টন চালের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ রয়েছে।

আরো পড়ুন:

কৃষক বেঁচে থাকলে দেশে খাদ্যের অভাব হবে না: মন্ত্রী

মজুতদারের যাবজ্জীবনের বিধান রেখে আইন হচ্ছে: খাদ্যমন্ত্রী

তিনি আরো জানান, দেশের উত্তর অঞ্চলের রাজশাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের কিছু অংশে ধানের ফসল খুব ভালো হয়েছে। তা থেকে আশা করা হচ্ছে, সামনে খাদ্যের সমস্যা হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছে। 

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহের সভাপতিত্বে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সফি-উল আলম, রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান, রাঙামাটি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুগতি চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

পরে উপদেষ্টা কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাপ্তাই খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেন। 

ঢাকা/শংকর/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ দ যমন ত র উপদ ষ ট টন গম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিলের মাঝে যাত্রীশূন্য রেলস্টেশন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে ৮টি আধুনিক ও নান্দনিক রেলস্টেশন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি হলো– সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ও ঈদগাঁওয়ের ইসলামাবাদ। এসব স্টেশনের আংশিক সুফলও পাচ্ছেন না যাত্রীরা। চারটি স্টেশনই তৈরি করা হয়েছে কিছুটা জনমানবহীন এলাকায়, বিলের মাঝে, যেখানে আসা-যাওয়ার ভালো কোনো রাস্তা নেই। যোগাযোগ ও নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াতে আগ্রহী নন। দুর্গম ও নিরিবিলি এলাকায় হওয়ায় অপরাধীদের আস্তানা হয়ে উঠছে এসব স্টেশন, ঘটছে ছোটখাটো অপরাধের ঘটনাও।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেন চালুর দেড় বছর পার হলেও এসব স্টেশন এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। স্টেশনে নেই যাত্রীসুবিধা। বিশ্রামাগারে নেই আসবাব, শৌচাগার থাকে তালা মারা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, স্টেশনে যাওয়া-আসার জন্য সড়ক তৈরি হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্টেশন তৈরি করে দায় সেরেছে। তারা বলছে সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের। সড়ক নির্মাণেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ কেউ নিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিটি রেলস্টেশনে সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় সংযোগ সড়কের গড়ে ১০০ ফুট পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এলজিইডি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যাত্রীদের সুবিধার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারে। প্রকল্পের বাইরে কাজ করার সুযোগ আমাদের ছিল না।’ 
সাতকানিয়া রেলস্টেশনে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য এলজিইডিকে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এলজিইডি সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি। এখন যাত্রীরা ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া আলপথে হেঁটে রেলস্টেশনে যান। আবার ফেরার সময় অর্ধ কিলোমিটার হেঁটে সাতকানিয়া-বাঁশখালী সড়কে গিয়ে গাড়িতে ওঠেন।
লোহাগাড়ায় হাজি রাস্তার মাথায়, যেখানে রেলস্টেশন করা হয়েছে সদর থেকে সেখানে যেতে ট্রেন ভাড়ার তিনগুণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া দিতে হয়। তার ওপর অর্ধনির্মিত কালভার্টের কারণে সড়ক বন্ধ। ওই অংশে হেঁটে স্টেশনে পৌঁছাতে হয়।
বড় হাতিয়া এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল করিম বলেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া হলো ব্যবসায়ীদের এলাকা। রেলস্টেশনে সহজে যাতায়াত করা গেলে আমরা স্বল্প করেছে ট্রেনেই মালপত্র আনা-নেওয়া করতে পারতাম। তাতে ব্যবসায় লাভ বাড়ত। সেই সুযোগ আমরা পাচ্ছি না। অনেকটা দুর্গম এলাকায় কেন লোহাগাড়া স্টেশন তৈরি করা হয়েছে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’
সবচেয়ে নাজুক অবস্থা চকরিয়ার হারবাং স্টেশনের। এটি একটি বড় বিলের সঙ্গে লাগোয়া দুর্গম জায়গায় তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আশপাশে ভালো কোনো সড়ক নেই। যে সড়কটি রেলস্টেশনের পাশা দিয়ে চলে গেছে সেটির প্রস্থ মাত্র ৫/৬ ফুট। কাঁচা এই সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাই কেবল চলতে পারে। তাও একটা আরেকটাকে পাশ কাটাতে গেলে ছোট গাড়ির জট লেগে যায়।
সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রুহুল কাদের বলেন, ‘চকরিয়ায় তিনটি স্টেশন করা হয়েছে, তবুও মানুষ ট্রেনের সুবিধা পাচ্ছেন না–এটা দুঃখজনক। যদি হারবাং স্টেশনটি আরও এক কিলোমিটার দক্ষিণে বরইতলী একতাবাজার–পেকুয়া সড়কের পাশে করা হতো তাহলে শুধু চকরিয়া নয়, পেকুয়া, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার মানুষও উপকৃত হতেন।’  
ঈদগাঁওয়ের ইসলামাবাদ স্টেশনের সঙ্গে সদরের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। এত দূরের স্টেশন থেকে উপজেলার বিভিন্ন গন্তব্যে আসা–যাওয়া করা দুষ্কর। সন্ধ্যা ও রাতে রয়েছে নিরাপত্তার শঙ্কা। 
রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। তাই এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারছি না।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ