দেশব্যাপী চলছে তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। রাজধানীর বাজার, পাড়ামহল্লার রাস্তায় ডাবের বেচাকেনা বেড়েছে। বাড়তি তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে চাহিদা বেড়েছে পানি ও পানীয় ফলে। তীব্র গরমে কিছু স্বস্তি পেতে ডাবের পানির ওপর ভরসা করেন অনেকে। তীব্র গরমে চাহিদা বেশি থাকায় বেড়েছে ডাবের দাম।

রাজধানীতে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বড় আকারের ডাবের দাম ১৮০-২০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন দোকানিরা। ছোট আকারের কচি ডাব কিনতে গেলেও গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। একটি ডাবে পানি মেলে গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার।

বিক্রেতারা দাবি করছেন, পাইকারি পর্যায়ে ডাবের দাম দুই সপ্তাহ ধরে ১০০টি ডাবে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় তাঁদেরও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজারে মূলত বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ জেলা থেকে বেশি ডাব ঢাকায় আসে। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, গরমের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা। এতে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশও করছেন।

আজ রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক, কৃষিবাজার, টাউন হল, বিমানবন্দর এলাকার হাজি ক্যাম্প ও কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, ডাবের দাম সর্বনিম্ন ১০০ টাকা। বড় আকারের ডাব (আধা লিটারের মতো পানি আছে বলে ক্রেতা বিক্রেতাদের দাবি) বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। আবার কেউ কেউ ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন। মাঝারি আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়; দরদাম করলে কোথাও কোথাও একটু কম রাখছেন কোনো বিক্রেতা।

ডাবের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ গেলেও গরমে পানির চাহিদা মেটাতে ডাব কিনছেন অনেকে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর শেখেরটেক বাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইমতিয়াজ ফাহিমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরমে প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে দুই-তিনটি ডাব খাই। বর্তমানে ১২০ টাকার নিচে ডাব কেনা যায় না। দুই–দিন আগে আকারে একটু বড় ডাব খেয়েছি ১৮০ টাকা দিয়ে। আজকে প্রচণ্ড গরম। ধানমন্ডি থেকে মোহাম্মদপুর একটা কাজে এসেছি। শেখেরটেক বাজারে এসে অসহ্য গরমে ১৫০ টাকা টাকায় ডাব খাচ্ছি।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ডাব বিক্রেতা জুলহাস আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারিতে ডাবের দাম বেড়েছে। মাসখানেক আগে প্রতি ১০০টি ডাবের দাম ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে কিনতে দিতে হচ্ছে আকারভেদে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সাত বছর ধরে ডাবের ব্যবসা করেন মিনু মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘গরম এলে ডাবের দাম ও চাহিদা দুটোই বাড়ে। আমি প্রতি ১০০ ডাব কিনেছি ১২ হাজার টাকায়। সঙ্গে রয়েছে পরিবহন খরচ। এর মধ্যে কিছু ডাব ছোট; সেগুলো বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতিটি ১০০ টাকা করে। চালানের টাকা তুলতে বাধ্য হয়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করছি। আগে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি ডাব বিক্রি করতাম। আর এখন বিক্রি করছি ২০০ থেকে ২৫০টি ডাব।’

রাজধানীর হাজি ক্যাম্প এলাকায় বড় আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এখন হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। তাই হাজি ক্যাম্প এলাকায় হজযাত্রী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের আনাগোনায় সরগরম ওই এলাকা। তীব্র গরমে ডাবের চাহিদাও বেশ বেড়েছে। হাজি ক্যাম্প বাজারের ডাব বিক্রেতা আবদুর রহিম জানান, এমনিতেই হজ মৌসুমে ডাবের চাহিদা বেশি থাকে। এখন গরম বেশি পড়ায় এই চাহিদা আরও বেড়েছে। প্রতিদিন ২৫০-৩০০টি ডাব বিক্রি করেন তিনি।

রাজধানীর বিভিন্ন পাড়ামহল্লার ফল বিক্রেতাদের ভ্যানগাড়িতে ডাবের পাশাপাশি মিলছে রসাল তালশাঁস। প্রতিটি কচি তাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় (প্রতিটি কচি তালে ৩–৪টি শাঁস থাকে)। কোথাও আবার প্রতিটি তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকার তাল বিক্রেতা মোহাম্মদ এনামুল বলেন, ‘গত মাসের শেষ থেকে তালের শাঁস বিক্রি করছি। বড় আকারের কচি তাল বিক্রি করছি ৪০ টাকা আর ছোট আকারের তাল বিক্রি করছি ৩০ টাকা। গরমে চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি কচি তাল বিক্রি করছি।’

তবে এখনো সব ধরনের গরমের ফল ওঠেনি রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে। তবে কারওয়ান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে গ্রীষ্মকালীন ফল আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম ও আনারস। তবে মৌসুমের শুরুতে অধিকাংশ ফল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র ত ব র গরম ২০০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

নীরব সন্ত্রাস থেকে শহরটিকে রক্ষা করুন

রাজশাহী নগরে শব্দদূষণ ক্রমেই এক নীরব সন্ত্রাসে রূপ নিচ্ছে। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে (রেলগেট) গত চার বছরে শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেল থেকে ৯৭.২ ডেসিবেলে উত্তীর্ণ হওয়া এর ভয়াবহতার সুস্পষ্ট নিদর্শন। বাংলাদেশ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এর বিধানানুসারে, মিশ্র এলাকায় দিবাভাগে শব্দের অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে এর দ্বিগুণাধিক মাত্রা পাওয়া যাচ্ছে। 

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ শব্দদূষণাক্রান্ত নগর। এ পরিস্থিতি কেবল মানবস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্যের জন্যও এক গভীর সংকটের বিষয়।

শব্দদূষণের মূল কারণ হিসেবে যানবাহনের অপরিমিত হর্নবাজি, বিশেষত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তীক্ষ্ণ ভেঁপু হর্নের যথেচ্ছ ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আইনানুগ সীমা লঙ্ঘন করেও এই যানগুলো নিরন্তর শব্দের তীব্রতা বাড়াচ্ছে। তার ওপর নগর-পরিকল্পনায় পরিবেশসম্মত অবকাঠামোর অভাব, বৃক্ষরোপণের অপ্রতুলতা এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য সমস্যাকে ঘনীভূত করেছে।

বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহীর রেলগেটে শব্দের মাত্রা মানবীয় শ্রবণসীমার সহনীয় পরিসরকে ব্যাপকভাবে অতিক্রম করেছে।

এই সংকট নিরসনে প্রথমত, যানবাহনের হর্নবাজি কঠোর নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ভেঁপু হর্নের পরিবর্তে নিম্নশব্দযুক্ত হর্ন বাধ্যতামূলক করে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নগরের মিশ্র এলাকায় আম, জাম, নিম ও শজনেগাছের মতো ঘন পাতাবিশিষ্ট বৃক্ষরোপণ করতে হবে, যা শব্দদূষণ প্রশমনে প্রাকৃতিক হাতিয়ার হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তৃতীয়ত, শব্দ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বলবৎ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি, জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জারি করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে।

শব্দদূষণ শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ের ক্ষতিসাধন করে না, এটি হৃদ্‌রোগ, মানসিক অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে। পশুপাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থলও এর কারণে বিঘ্নিত হয়। রাজশাহীর ‘আমের শহর’ অভিধা রক্ষার্থে পরিবেশসম্মত নগরায়ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হবে শব্দের মাত্রা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রকাশ্য প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করা।

রাজশাহীর নাগরিক জীবনে শান্তি ও সুস্থতা পুনরুদ্ধার করতে শব্দদূষণের এই বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করতে হবে। এটি শুধু সরকারি নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এর জন্য সামগ্রিক সামাজিক সচেতনতা, পরিবেশবান্ধব আচরণ ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার সমন্বয়ে এক যুগপৎ অভিযানের আবশ্যকতা রয়েছে। অন্যথায় এই নীরব সন্ত্রাস নগরের প্রাণশক্তিকে ক্রমেই নিষ্পেষিত ও বিপর্যস্ত করে তুলবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ