দেড় মাস আগে পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন কবীরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী সালমা বেগম। হত্যার পরিকল্পনায় তিনি ছাড়াও তাঁর আত্মীয় রাজীব হোসেন ও মরিয়ম বেগম অংশ নেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, দেড় মাস আগে কেনা হয় একটি দা ও রশি। দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে তিনজন খুনি ঠিক করেন সালমা বেগম। সেই তিনজন হলেন ফজলে রাব্বি শুভ (২৩), রাফি খান (১৮) ও পলি বেগম (৩৫)।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সালমা বেগম যাত্রাবাড়ীর একটি ওষুধের দোকান থেকে ঘুমের বড়ি কিনে আনেন। গত ২৭ এপ্রিল সেটি গুঁড়ো করে ভাতের সঙ্গে মেশান। অফিস থেকে ফেরার পর হুমায়ুন কবীরকে (৪৫) ঘুমের ওষুধ মেশানো ভাত খাওয়ান। এরপর আঙুর ফল খাওয়ান। পরে ঘুমে অচেতন হলে ভাড়াটে তিন খুনির সহযোগিতায় পুলিশ সদস্য স্বামী হুমায়ুনকে খুন করেন সালমা বেগম (৩৫)।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দেওয়া সালমা বেগমসহ পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী রমজানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে পুলিশ সদস্য হুমায়ুনকে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম। রাজীব হোসেন নামের একজনের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে হুমায়ুনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর মতবিরোধ হয়। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন তিনি।

গত ২৭ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে ভাড়া বাসায় খুন হন পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন কবীর। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় নিহত পুলিশ সদস্য হুমায়ুনের ভাই খোকন হাওলাদার অভিযোগ করেন, রাজীব হোসেন নামের এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিরোধের জের ধরে হুমায়ুনকে হত্যা করেন সালমা বেগম।

স্বীকারোক্তিতে সালমা বেগম বলেছেন, ১৫ বছর আগে হুমায়ুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁদের দুই সন্তান হয়। তাঁর স্বামীর আচরণ খারাপ ছিল। এ জন্য কয়েক মাস আগে স্বামীকে একজন ফকিরকে দেখান, যাতে তাঁর স্বামীর আচরণ ভালো হয়। এ জন্য ১০ হাজার টাকাও দেন ফকিরকে। এই টাকাটা তাঁকে দিয়েছিলেন তাঁর আত্মীয় রাজীব হোসেন (রাজীব হচ্ছেন নিহত হুমায়ুন কবীরের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর ভাই)। স্বামীকে ফকির দেখানোর পরেও তাঁর আচরণ ভালো হয়নি। স্বামীর নির্যাতন আগের মতোই অব্যাহত থাকে।

জবানবন্দিতে সালমা দাবি করেন, যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জের যে বাসায় তাঁরা ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার চতুর্থ তলায় থাকেন তাঁর আত্মীয় মরিয়ম বেগম। স্বামীর অত্যাচারের বিষয়টি তিনি মরিয়মকে বলেন। পরে অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য পুলিশ কনস্টেবল স্বামী হুমায়ুনকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন সালমা বেগম। দেড় মাস আগে মরিয়মের বাসায় এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে রাজীবও উপস্থিত ছিলেন।

সামলার জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী, স্বামীকে হত্যার জন্য তিনি বাজার থেকে একটি দা কিনে আনেন। পরে যাত্রাবাড়ীর একটি ফার্মেসি থেকে তিনটি ঘুমের বড়ি কিনে আনেন। ঘুমের বড়ি কিনে আনার পরামর্শ দেন সালমার আত্মীয় মরিয়ম। ঘুমের বড়ি কিনে আনার পর সেই বড়ি তিনি দেন মরিয়মকে। মরিয়ম তিনটি ঘুমের বড়ি গুঁড়ো করে পত্রিকায় মুড়ে তাঁকে দেন। সেদিন (২৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার সময় হুমায়ুন দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফেরেন। পরে হাতমুখ ধুয়ে তিনি খেতে বসেন। তাঁকে ভাত খেতে দেন সালমা বেগম। সেই ভাতে তিনি আগেই ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেখেছিলেন। ভাত খাওয়া শেষ করার পর তিনি হুমায়ুনকে বেশ কয়েকটি আঙুর খেতে দেন। আঙুর খাওয়ার পরপরই আবোলতাবোল বকতে থাকেন হুমায়ুন। পরে তিনি খাটে ঘুমিয়ে পড়েন।

সালমা বেগমসহ গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তির তথ্য অনুযায়ী, ভাড়াটে খুনি ফজলে রাব্বি, রাফি খান ও পলি বেগম বাসার চারতলায় মরিয়মের বাসায় অবস্থান নেন। রাত ১১টার সময় পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন ঘুমিয়ে পড়লে সালমা বেগম চারতলায় যান মরিয়মের বাসায়। তিনি জানান, তাঁর স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছে। পরে তিনি আবার নিজের কক্ষে আসেন। রাত যখন আড়াইটা বাজে, তখন ঘুমে অচেতন হুমায়ুন কবির। চারতলার বাসা থেকে ভাড়াটে তিন খুনি তখন হুমায়ুনের বাসায় আসেন। পাশের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল হুমায়ুনের দুই সন্তান।

বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পলি বেগম ও মরিয়ম। হুমায়ুন যে কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন, সেখানে ছিলেন সালমা, ফজলে রাব্বি ও রাফি খান। সালমা গামছা দিয়ে তাঁর স্বামীর হাত ও পা বেঁধে ফেলেন। ফজলে রাব্বি ও রাফি দুই হাতে গ্লাভস পরে নেন। পরে ফজলে রাব্বি ও রাফি হুমায়ুনের গলায় রশি দিয়ে দুজন টান দেন। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে হুমায়ুন মারা যান। পরে ভাড়াটে খুনি রাব্বি ও রাফি হুমায়ুনের মরদেহ তিনতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত নিয়ে আসেন। কিন্তু লোকজন চলে আসায় হুমায়ুনের মরদেহ আর নিয়ে যেতে পারেননি ভাড়াটে খুনিরা। খবর পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানা–পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে সালমা, মরিয়মসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

সালমা বেগম জবানবন্দিতে বলেন, স্বামীকে খুন করার পর তিনি ফজলে রাব্বি ও রাফিকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তাঁদের দেওয়ার কথা ছিল দুই লাখ টাকা।

আসামি ফজলে রাব্বি শুভ (২৩), রাফি খান (১৮).

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘ ম র বড় অন য য় কর ন স ন র পর ম স আগ

এছাড়াও পড়ুন:

টাকা ছিনতাইয়ের ‘নাটক’ সাজিয়ে ধরা খেলেন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি

ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার পথে ৩৪ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন মইনুল ইসলাম (৫৫)। এরপর তাঁকে নিয়ে মাঠে নামে পুলিশের একটি দল। ৯ ঘণ্টা অভিযান শেষে পুলিশ জানতে পারে টাকা ছিনতাই হয়নি, ওই ঘটনা সাজানো নাটক।

এ ঘটনা গতকাল বুধবারের, দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী মইনুল ইসলাম উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের গোপালপুর বড়গ্রাম এলাকার মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে। সার, বীজ, কীটনাশকসহ মজুতদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ তাঁর বাসা থেকে ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে তাঁকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।

ওই অভিযানে অংশ নেন দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সিফাত-ই-রাব্বানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম, বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস ছবুর।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধ ও ভুল স্বীকার করেছেন মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীও তাঁর কাছে টাকা পাবেন। তিনি ভেবেছিলেন, টাকা ছিনতাই হয়েছে, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা গেলে হয়তো ব্যাংক ও ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছে ঋণ মওকুফসহ খানিকটা সহানুভূতি পাবেন।

মইনুল ইসলামের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় বিরল উপজেলায় বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন তিনি। টাকা তুলে বাড়িতে এসে কীটনাশকের কার্টুনে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। পরে মুরাদপুর নামক এলাকায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেল বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হন সেখানে। পুলিশের কাছে মইনুল ইসলাম বলেন, তিনি বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে আট লাখ টাকা তুলেছিলেন। হাতে থাকা আরও ২৬ লাখ টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ টাকা একটি সরকারি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ছয়জন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে সেই টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে গেছেন।

এরপর বেলা তিনটায় পুলিশ মইনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে শহরের কাছে সব ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। একটি ফুটেজে দেখা মেলে মইনুলের। মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে ছোট একটি খালি ব্যাগ ঝোলানো ছিল। এতে সন্দেহ হয় পুলিশের, মইনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাত ৯টায় পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করেন মইনুল। এরপর পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গুদাম ঘরে রাখা কীটনাশকের কার্টুন থেকে ব্যাংক থেকে তোলা ৮ লাখ টাকাসহ ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে। একই সঙ্গে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত ঋণ মওকুফের আশায় মইনুল ইসলাম নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি তাঁর অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। সব‌কিছু বি‌বেচনায় নি‌য়ে পু‌লিশ তাঁর মুচ‌লেকা নি‌য়ে ছে‌ড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন ক‌রে তাঁকে স্বজন‌দের হা‌তে তু‌লে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার
  • সিমন্সের প্রত্যাশা: নিশাঙ্কাকে দেখে শিখুক বাংলাদেশের ব্যাটাররা
  • ফিরছে ব্ল্যাকপিঙ্ক, আসছে গান
  • নাটাই শ্রীলঙ্কার হাতে
  • মা হতে যাওয়ার গুঞ্জন উসকে দিলেন অঙ্কিতা
  • শিশুর কান্না ট্যানট্রাম নাকি মেল্টডাউন? দুটির পার্থক্য জেনে রাখা এত জরুরি কেন
  • কনার বিবাহবিচ্ছেদ ঘোষণার পর কাকে ‘শিয়াল রাণী’ বললেন ন্যান্সি
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঁজা সেবন ও বিশৃঙ্খলা করায় ৫ পর্যটককে কারাদণ্ড
  • চাঁদা না দেওয়ায় চেয়ারম্যানের হাত-পা ভাঙ্গলো সন্ত্রাসীরা 
  • টাকা ছিনতাইয়ের ‘নাটক’ সাজিয়ে ধরা খেলেন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি