৬০০ টাকার টিকিটে এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে ২২২ টাকা কেটে রাখে স্টার সিনেপ্লেক্স। টিকিটপ্রতি প্রায় ৩৭ শতাংশ। এত টাকা কেটে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রযোজকেরা। শুধু স্টার সিনেপ্লেক্স নয়; ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস, শ্যামলী, মধুমিতাসহ দেশের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সব প্রেক্ষাগৃহেই এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে কেটে নেওয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ।
চলচ্চিত্রবিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর আর কোথাও এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে এত পরিমাণ অর্থ নেওয়ার নজির নেই। প্রেক্ষাগৃহের এই ‘অন্যায্য’ বিল মেটাতে গিয়ে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রযোজকেরা।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ট্যাক্স বাদে গড়ে বিক্রীত টিকিটের অর্থের ৫০ শতাংশ পান প্রযোজকেরা, বাকি ৫০ শতাংশ পান প্রদর্শক ও পরিবেশকেরা।
বাংলাদেশে ভাগাভাগিটা কী রকম? ৩ মে স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি শাখায় ৬০০ টাকায় দাগি সিনেমার একটি টিকিট কাটা হয়। ৬০০ টাকার মধ্যে অ্যাডমিশন ফি ২৩৯ টাকা ৪০ পয়সা (৩৯.
ভ্যাট ও মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্স বাবদ ২৩ শতাংশ অর্থ বাদে বাকি ৭৭ শতাংশ অর্থ প্রযোজক ও হলমালিকদের মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার কথা। তবে স্টার সিনেপ্লেক্স এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে ৩৮ শতাংশ অর্থ কেটে নেয়। বাকি থাকে ৩৯ শতাংশ। মূলত সেখান থেকে প্রযোজকদের ৬০ শতাংশ দেওয়া হয়, আবার হলমালিকেরা পান ৪০ শতাংশ।
দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স ছাড়াও বাকি মাল্টিপ্লেক্স ও একক সিনেমা হলগুলোও একই পথে হাঁটছে। প্রযোজকেরা বলছেন, প্রেক্ষাগৃহগুলোর টিকিটের অর্থ ন্যায্যভাবে বণ্টন হওয়া জরুরি। অন্যথায় কোটি টাকা লগ্নি করে সিনেমা বানিয়েও লোকসান গুনছেন তাঁরা।
প্রযোজকেরা বলছেন, প্রেক্ষাগৃহগুলোর টিকিটের অর্থ ন্যায্যভাবে বণ্টন হওয়া জরুরি। অন্যথায় কোটি টাকা লগ্নি করে সিনেমা বানিয়েও লোকসান গুনছেন তাঁরা।আরও পড়ুনবক্স অফিস কবে কার্যকর হবে০৯ মে ২০২৩এসি রক্ষণাবেক্ষণ বিল কমানোর প্রস্তাব
টিকিট বিক্রির অর্থের এই অসম বণ্টন ঠেকানোর জন্য স্টার সিনেপ্লেক্সকে এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে সার্ভিস চার্জ কমানোসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রযোজকেরা। ১০ মে চিঠিটি পাঠান আলফ আই স্টুডিওস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল। তিনি জানান, পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়—
১. আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, সিনেপ্লেক্সের টিকিটের ৩৯ শতাংশ অ্যাডমিশন ফি,৩৮ শতাংশ সার্ভিস চার্জ (এসি রক্ষণাবেক্ষণ) এবং ২৩ শতাংশ সরকারি ট্যাক্স। যদিও বেশির ভাগ দেশে সার্ভিস চার্জ বলে কিছু নেই, কিছু দেশে সহনীয় মাত্রায় সার্ভিস চার্জ থাকলেও তা শতাংশভিত্তিক নয়। তবু বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে সার্ভিস চার্জ ১০ শতাংশ ধার্য করার প্রস্তাব করছি।
২. সরকারি ট্যাক্স ২৩ শতাংশ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা সক্রিয় আছি। ভবিষ্যতে দাবি আরও জোরালো হবে। এই আবেদনে আপনাদের পাশে চাই।
৩. টিকিটের পুরো মূল্যের সরকারি ট্যাক্স ২৩ শতাংশ এবং সার্ভিস চার্জ ১০ শতাংশ ধার্য হলে অ্যাডমিশন ফি ৬৭ শতাংশ। এই ৬৭ শতাংশ থেকে প্রযোজক ও প্রদর্শকদের শেয়ার মানি নির্ধারণের প্রস্তাব রাখছি। একই সঙ্গে প্রথম তিন সপ্তাহ অ্যাডমিশন ফির ৬০ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ করে শেয়ার মানি রেশিও ধার্য করার প্রস্তাব করছি।
টিকিট বিক্রির অর্থের এই অসম বণ্টন ঠেকানোর জন্য স্টার সিনেপ্লেক্সকে এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে সার্ভিস চার্জ কমানোসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রযোজকেরা। ১০ মে চিঠিটি পাঠান আলফ আই স্টুডিওস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল।আরও পড়ুনসার্টিফিকেশন বোর্ড কী করছে১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে টিকিটপ্রতি প্রায় ৩৮ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়ার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানটির স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সিনেপ্লেক্সের ইস্যু না। পুরো বাংলাদেশে একইভাবে চলে। এই সিস্টেমেই চলে আসতেছে। হলমালিক এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না, এটা প্রদর্শক সমিতির সিদ্ধান্ত। প্রদর্শক সমিতি উত্তরটা দিতে পারবে।’
সিনেমা হলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, যেসব প্রেক্ষাগৃহে এসি আছে, সেসব প্রেক্ষাগৃহে এটি (এসি রক্ষণাবেক্ষণ) নেওয়া হয়। কত শতাংশ নেওয়া হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, টিকিটের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।
লায়ন সিনেমাসের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা আবদুল খালেক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিরকালই এসির জন্য আলাদা চার্জ ছিল। মাল্টিপ্লেক্সের ক্ষেত্রটা একটু আলাদা, কারণ মাল্টিপ্লেক্সে এসি রক্ষণাবেক্ষণে খরচ একটু বেশি।’
মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের স্বত্বাধিকারী ইফতেখারউদ্দিন নওশাদও গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব হলে এসি আছে, সেসব হলে এসির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ রাখা হয়।’
এটা সিনেপ্লেক্সের ইস্যু না। পুরো বাংলাদেশে একইভাবে চলে। এই সিস্টেমেই চলে আসতেছে। হলমালিক এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না, এটা প্রদর্শক সমিতির সিদ্ধান্ত। প্রদর্শক সমিতি উত্তরটা দিতে পারবে।মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক আরও পড়ুনপরামর্শক কমিটি কতটা কার্যকর হবে০৯ অক্টোবর ২০২৪ভারতসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই ট্যাক্স ও নামমাত্র সার্ভিস চার্জ বাদে টিকিটের মূল্যের ৫০ শতাংশ প্রযোজক, ৫০ ভাগ প্রদর্শকেরা পান।কোথাও সার্ভিস চার্জ নামমাত্র
ভারতসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই ট্যাক্স ও নামমাত্র সার্ভিস চার্জ বাদে টিকিটের মূল্যের ৫০ শতাংশ প্রযোজক, ৫০ ভাগ প্রদর্শকেরা পান। ভারতীয় প্রযোজক ও পরিবেশক অশোক ধানুকা প্রথম আলোকে জানান, ভারতের কোনো ছবির ক্ষেত্রে সিএসটি (সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) ও এসজিএসটি (স্টেট গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) ১৮ শতাংশ বাদে বাকি অর্থ প্রযোজক ও প্রদর্শক সমানভাগে ভাগ করে নেন।
আমাদের প্রস্তাবিত শেয়ার মানি রেশিও পেলে সারা বছর সিনেমা দিতে পারবেন প্রযোজকেরা। বড় বাজেটের সিনেমা বানিয়ে টাকা ওঠাব কীভাবে?শাহরিয়ার শাকিল, প্রযোজকভারতের মাল্টিপ্লেক্স চেইন আইনক্সে ১৫০ টাকার টিকিটে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয় মাত্র ৪ টাকা। সেখানে ৬০০ টাকার টিকিটে স্টার সিনেপ্লেক্স কাটছে ২২২ টাকা। বিষয়টি অবহিত করা হলে স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সারা বছর কনটেন্ট থাকে না। ভারতে সারা বছর কনটেন্ট আছে। আমাদের কনটেন্টের অভাব আছে, এটা আপনারা ভালো করেই জানেন।’
প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত শেয়ার মানি রেশিও পেলে সারা বছর সিনেমা দিতে পারবেন প্রযোজকেরা। আমরা সিনেমাটাই বানাই। বড় বাজেটের সিনেমা বানিয়ে টাকা ওঠাব কীভাবে। আমরা কীভাবে টিকে থাকব?’ ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘বরবাদ’ ছবির প্রযোজক শাহরিন আক্তারও একই প্রশ্ন তুলেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র প রস ত ব ৬০০ ট ক হলম ল ক ব যবস থ র অর থ আম দ র শ অর থ
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।