পেটের ভেতর তিন হাজার ইয়াবা, তিন বোন গ্রেপ্তার
Published: 13th, May 2025 GMT
কক্সবাজারে পেটের ভেতরে লুকিয়ে ইয়াবা বড়ি পাচারের অভিযোগে তিন বোনকে গ্রেপ্তার করেছে বিজিবি। তাঁদের কাছ থেকে ২ হাজার ৯৫০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইমামের ডেইল এলাকার তল্লাশিচৌকিতে ওই তিন বোন গ্রেপ্তার হন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর হোসেনের তিন মেয়ে ইসমত আরা (২৭), সকিদা (২৪) ও সামিহা (১৮)। একটি বাসে করে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
উখিয়া ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ইয়াবাসহ তিন বোনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে সন্দেহভাজন তিন নারীকে নামানো হয়। তাঁদের সঙ্গে কোনো মাদক আছে কি না, জানতে চাইলে তাঁরা উল্টো হয়রানি করার অভিযোগ তোলেন। পরে তাঁদের টেকনাফের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে এক্স-রে করানো হলে পেটে পলিথিনসদৃশ বস্তু শনাক্ত হয়। তখন বিষয়টি তাঁরা স্বীকার করে ইয়াবা বের করে দিতে রাজি হন। এরপর বিশেষ কায়দায় স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ১০টি প্যাকেটে ইয়াবাগুলো পাওয়া যায়।
মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ওই নারীরা জানিয়েছেন ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে মাদকের চালানটি কক্সবাজারে পাচার করছিলেন তাঁরা। রহিমা নামের এক রোহিঙ্গা নারী তাঁদের এসব ইয়াবা বড়ি দেন। মামলার পর গ্রেপ্তার তিনজনকে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
বিজিবি কর্মকর্তা ও ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক টেকনিশিয়ান বলেন, প্রায়ই বিজিবি সন্দেহভাজন নারী-পুরুষকে নিয়ে আসে। তাঁদের এক্স-রে করালেই পেটের ভেতরে পলিথিনসদৃশ বস্তু দেখা যায়। পরে বিশেষ কায়দার এসব পোঁটলা বের করে আনা হয়। এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েক বছর ধরে এই প্রবণতা বাড়ছে।
গ্রেপ্তার তিনজনের বরাত দিয়ে বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, পেটে ইয়াবা যেন গলে না যায়, সে জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ পিস ইয়াবা স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে লম্বা করে কালো জামের মতো বানানো হয়। কলা বা জুসজাতীয় পানীয় দিয়ে এই প্যাকেট গিলে খান তাঁরা। তাঁদের মধ্যে দুজন বাহক তিনটি করে ও অপরজন চারটি পোঁটলা খেয়েছেন। পেটে ইয়াবা বহনে মৃত্যুঝুঁকি আছে, এটা বাহক জানেন। তবু মাদক কারবারিদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে তাঁরা এই কাজ করছেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে এভাবে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় কয়েকজন মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে গ্রেপ্তার তিন নারীকে কক্সবাজার আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে ইসমত আরার একজন শিশুসন্তান ছিল। এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’