ইতালীয় রাজনীতিবিদ জিওভান্নি জিওলিত্তি বলেছিলেন, ‘আইন বন্ধুদের জন্য ব্যাখ্যা করা হয় এবং শত্রুদের জন্য করা হয় প্রয়োগ।’ ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং জোটের সঙ্গে তার সহযোগিতা চুক্তির শর্তাবলি মোকাবিলা এড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেভাবে পেছনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তার চেয়ে ভালো উদাহরণ খুব কমই আছে। 

২০ মে ইইউর পররাষ্ট্র-বিষয়ক কাউন্সিল (এফএসি) গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারকে অস্বীকার করছে কিনা, তা পর্যালোচনা করার পক্ষে ভোট দেয়। এক মাস পর একই সংস্থা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, ‘ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির ধারা ২-এর অধীনে ইসরায়েল তার মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করবে– এমন ইঙ্গিত রয়েছে।’ যেমন ২৬ জুন ইউরোপীয় কাউন্সিলের একটি সভায় ইইউ সরকারপ্রধানরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তারা সেই ইঙ্গিতগুলো ‘উল্লেখ করেছেন’ এবং জুলাই মাসে ‘আলোচনা চালিয়ে যাওয়া’র জন্য এফএসি-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এটা বোঝা যায়, মে মাসে ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি পর্যালোচনার জন্য ভোটের পক্ষে কেউ কেউ প্রথমে স্বাগত জানিয়েছিলেন। একমাত্র মানুষই ফিলিস্তিনি জনগণের মানবাধিকার রক্ষার জন্য অবশেষে পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশা জাগায়। দুর্ভাগ্যবশত, ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি নিয়ে পুরো ‘বিতর্ক’ কেবল একটি ভুয়া জিনিস। এটি গাজা ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অন্যান্য স্থানে ইসরায়েল যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, সে ব্যাপারে ইইউর গুরুতর পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি ক্রমবর্ধমান সমালোচনা এড়িয়ে যায় এই ধারণা দিয়ে, ইইউ অবশেষে কিছু করার কথা ভাবছে। 

গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের ২০ মাস পরও ইসরায়েলের মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এতটাই ব্যাপক যে, ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির সঙ্গে এই পরিস্থিতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গাজায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধ্বংসের গভীরতা ও ব্যাপকতা বুঝতে হলে ঘটনাগুলোকে বিভিন্ন পর্যায়ে দেখতে হবে।

ইসরায়েলিরা ইচ্ছাকৃত এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যাতে ফিলিস্তিনিদের জীবনের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়, যা গণহত্যার শামিল। এর মধ্যে রয়েছে গাজার ভূদৃশ্য ও নগরের পর নগর ধ্বংস করে দেওয়া; চিকিৎসা ব্যবস্থা পদ্ধতিগতভাবে ভেঙে ফেলা; চিন্তা-তৎপরতা গুঁড়িয়ে দেওয়া– স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রন্থাগার ধ্বংস করা; গাজার কৃষি ও প্রকৃতি ধ্বংস করা; অর্থনীতির ধ্বংস এবং সেখানে শিশুর জন্ম অসম্ভব করে তোলা।

ইউরোপীয় জনমতের চাপে ক্রমশ ইসরায়েলের প্রতি ইউরোপীয় সমর্থন দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং ইইউ অবশেষে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বেশ কিছু কথা বলা হলেও এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জোটটি ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি পর্যালোচনা করার পক্ষে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু এটি অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কারণ সব অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি নিয়মিত পর্যালোচনার বিষয় হওয়া উচিত, যা হয় অগ্রগতির সূত্রপাত করতে পারে অথবা সম্পর্কের গভীরতা ও প্রস্থ কমিয়ে আনতে পারে।

মূলত যারা ভোটের আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা খুব ভালো করেই জানতেন, চুক্তি স্থগিত করার জন্য ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের সর্বসম্মত ভোট প্রয়োজন, যা বর্তমানে অসম্ভব। ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন এবং জার্মানি, ইতালি ও হাঙ্গেরির মতো সদস্য রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তাদের অটল সমর্থন স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে। এ পরিস্থিতিতে চুক্তি স্থগিত করার জন্য সর্বসম্মত ভোটের আশা করা প্রায় বিভ্রান্তিকর। যোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাণিজ্য-চুক্তির কিছু অংশ স্থগিত করতে পারে, তবে এটাই সবচেয়ে এখন বড় আশা। 

এটি মানবাধিকার ও ‘মৌলিক মূল্যবোধ’-এর প্রতি ইউনিয়নের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট সমর্থন নয়। বরং ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির অনুচ্ছেদ ২-এ সরকারগুলো ও কর্মকর্তারা যেভাবে চুক্তির আওতাভুক্ত সব ক্ষেত্রে ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে’ হবে বলে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে, তা বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই নয়।

বাস্তবে ইইউ কখনও মানবাধিকারের এসব শর্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেনি। কেন, তা সহজেই বোঝা যায়। কোন মানদণ্ডে মানবাধিকার মূল্যায়ন করা উচিত, তা তারা কখনও সুনির্দিষ্ট করেনি এবং এই মূল্যায়ন নিয়মিত, বাধ্যতামূলক এবং জনসাধারণের কাছে প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এভাবে ইইউ নিজে ‘মানবাধিকার ও মৌলিক মূল্যবোধ’কে গুরুত্ব দেয় বলে দাবি করে, অথচ এ ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট ছাড় দেয়। অন্যদিকে বাস্তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না নেওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত তার নিজস্ব নিয়মের ‘ব্যাখ্যা’ উদোম হয়ে পড়ে। কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র ব্যক্তিগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু তারা যা করেছে তা ইইউ চুক্তি পর্যালোচনার মতোই অর্থহীন।

আন্দ্রেয়া টেটি: ইতালির সালের্নো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তরিত 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র র র ম নব ধ ক র ইইউ ইসর য পদক ষ প ন ইউর প য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নীল সমুদ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নীল বেদনা, ভারত বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন

অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল মুম্বাইয়ের ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার ভারতের আধিপত‌্য, শাসন। যেন শিরোপার পায়চারি অনেক আগের থেকেই। 

ব‌্যাটিংয়ে পর্বত ছুঁই-ছুঁই রান। এরপর স্পিনে ফুল ফোটালেন স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করল সাধ‌্যের সবটুকু দিয়ে। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারাও। হৃদয় জিতলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাত্তাই পেল না। ভারতের শক্তি-সামর্থ‌্যের গভীরতার কাছে হার মানতেই হলো প্রোটিয়া নারীদের।

আরো পড়ুন:

৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে

কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস

মুম্বাইয়ের নাভি স্টেডিয়ামের নীল সমুদ্রে সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিশ্বকাপ  উদ্‌যাপনে। প্রথমবার ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন। ৫২ রানের বিশাল জয় বুঝিয়ে দেয় হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমা রদ্রিগেজ, দীপ্তি শর্মা কিংবা শেফালি বার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা ২২ গজকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। শিরোপা জয়ের মঞ্চে ছাড় দেননি একটুও। ২০০৫ ও ২০১৭ বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো হয়েছিল...সেগুলো আজ ফুল হয়ে ঝরল। 

বৃষ্টি বাঁধায় বিঘ্ন ম‌্যাচে আগে ব‌্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায় ভারত। ৪৫.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রান করতে পারে প্রোটিয়া নারীরা। নাডিন ডি ক্লার্ক শেষ ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, স্টেডিয়ামের প্রায় ষাট হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মুখে একটাই স্লোগান, চাক দে ইন্ডিয়া।

ওই জনসমুদ্রের স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’। 

বিস্তারিত আসছে …

 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ