শেফালি জারিওয়ালার মৃত্যুতে অ্যান্টি-এজিং ওষুধকে কেন দায়ী ভাবা হলো? কী বলছেন চিকিৎসক?
Published: 3rd, July 2025 GMT
বয়স বাড়লেও চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন অনেকেই। বেছে নেন নানান পদ্ধতি। অ্যান্টি-এজিং ক্রিম তো বটেই, তারুণ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার প্রচলনও আছে। বোটক্স ইনজেকশনও নেন কেউ কেউ। বলিউড অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালার আকস্মিক মৃত্যুর পর আলোচনায় এসেছে অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসাপদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানালেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা.
সাইফ হোসেন খান।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের তারতম্য হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য কখনো কখনো হরমোনসমৃদ্ধ ওষুধ সেবন করা হয়। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। হাড়ক্ষয়, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে এ ধরনের ওষুধ। হুট করে এসব ওষুধ বন্ধ করলে রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ কোনোক্রমেই সেবন করা উচিত নয়।
অন্যান্য ওষুধহরমোনসমৃদ্ধ ওষুধের পাশাপাশি অন্যান্য ধরনের অ্যান্টি-এজিং ওষুধ আছে বাজারে, যা মূলত কোনো পুষ্টি উপাদানের সাপ্লিমেন্ট। এসব ওষুধ পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে সাধারণত তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কোনো কোনো ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণ করলে কিছু সমস্যা হতে পারে। এমনকি একটি অ্যান্টি-এজিং ওষুধ গ্রহণ করলেও কখনো কখনো সমস্যা হতে পারে, যদি এর পাশাপাশি কোনো রোগের কারণে বিশেষ কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। তাই অন্য কোনো ওষুধ চলাকালীন যদি অ্যান্টি-এজিং ওষুধ সেবন করতে হয়, তাহলে তা অবশ্যই আগে চিকিৎসককে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনবয়স ৫০ পেরোলে শরীরের শক্তি বাড়াতে যেসব খাবার খাবেন০১ জুলাই ২০২৫অ্যান্টি-এজিং ইনজেকশনের বিষয়ে সতর্কতাযেকোনো ইনজেকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া উচিত। ভুলভাবে ইনজেকশন নেওয়া হলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তারুণ্য ধরে রাখতে বোটক্স ইনজেকশন বেশ জনপ্রিয়। তবে এই ইনজেকশন প্রয়োগের পদ্ধতিগত ভুলের কারণে কারও কারও ঠোঁট কিংবা ভ্রু বাঁকা হয়ে যায়, চোখের পাতা নেমে যায়। তাই প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া কারও কাছে এ ইনজেকশন নেবেন না। আর এটাও মনে রাখবেন, বোটক্স কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
ক্রিম ব্যবহারেও সতর্কতাঅ্যান্টি-এজিং ক্রিমেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে ত্বকের শুষ্কতা, লালচে ভাব ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে এ ধরনের ক্রিম। কিছু ক্রিম রোদে সংবেদনশীলতা বাড়ায়। কিছু ক্রিম ত্বককে পাতলা করে ফেলে। বিশেষত নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছনোর আগে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার করা হলে ক্ষতি হয় অনেক বেশি। তাতে ত্বক আরও দ্রুত বুড়িয়ে যায়।
আরও পড়ুনবিদেশি হলেই কি তা ভালো প্রসাধনী?০২ মে ২০২৫মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাবা হলো কেনযত ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানলেন, তার কোনোটিতেই মৃত্যুঝুঁকি নেই। তবু কেন শেফালি জারিওয়ালার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অ্যান্টি-এজিং ওষুধের কথা ভাবা হলো? সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মৃত্যুর দিন শেফালি উপবাস করেছিলেন। সে সময় তিনি অ্যান্টি–এজিং ইনজেকশন নিয়েছেন বলেও জানা গেছে, যদিও সেসব হরমোনজাতীয় ওষুধ ছিল না; ছিল ভিটামিন সি এবং গ্লুটাথিওন। তবে সারা দিন না খেয়ে থাকলে ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যেতে পারে। সে অবস্থায় ভিটামিনজাতীয় ইনজেকশন নিলে হৃৎপিণ্ডের গতি বাধা পেতে পারে। তাই তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে এসব ওষুধের কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও যেকোনো ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা আবশ্যক।
আরও পড়ুনবোটক্স আসলে কী? এই ইনজেকশন কতটা নিরাপদ?১৮ ডিসেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনজ কশন ন ব টক স ধরন র হরম ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমার প্রতিবেশী
জীবন-বৃত্তান্ত
ফ্রাঞ্জ কাফকা জন্মেছিলেন ১৮৮৩ সালের ৩ জুলাই চেকোশ্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগে। তাঁর শিক্ষা শুরু জার্মান স্কুলে। ১৯০৬ সালে তিনি আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পেশা হিসেবে প্রথমে বেছে নেন ইনসিওরেন্স কোম্পানির চাকরি। কিন্তু অচিরেই এই চাকরি ছেড়ে দেন। ১৮৯৮ সালে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ১৯১৩ সালে তাঁর ছোটগল্পের সংকলন Meditation বের হয়। ব্যর্থ প্রেম, বাবার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা, অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণতা তাঁকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এর মাঝেই ১৯১৭ সালে তিনি নিশ্চিত হন যে, তিনি যক্ষারোগে আক্রান্ত। ১৯২৩ সালে তাঁর দেখা হয় ডোরা ডাইমান্টের সাথে। তারা একত্রে কিছুকাল বার্লিনে বসবাস করেন। রোগের দাপট বেড়ে যাওয়ায় তিনি ভিয়েনার একটি স্বাস্থ্যনিবাসে ভর্তি হন। পরের বছর তিনি পরলোকগমন করেন। জীবদ্দশায় তাঁর মাত্র ৭টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধু ম্যাক্স ব্রড কাফকার লেখা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। ফলে ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় The Trial, পরের বছর The Castle, ১৯২৭ সালে Amerika এবং ১৯৩১ সালে ছোটগল্পের সংকলন The Great Wall of China। ‘আমার প্রতিবেশী’ কাফকার My Neighbour গল্পের অনুবাদ।
ব্যবসার সমস্ত দায়-দায়িত্বটা আমার কাঁধে। টাইপরাইটার আর টালিখাতা নিয়ে মহিলা কেরানি দুজন বসে সামনের ঘরে। আমার ঘরে আমার লেখার টবিল, সিন্দুক, কনফারেন্স টেবিল, আরাম কেদারা আর টেলিফোনসহ দরকারি জিনিসগুলো রয়েছে। এগুলো নিয়েই আমি কাজ করি; খুব সহজেই নাড়াচাড়া ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমি বয়সে তরুণ। ব্যবসাটা আমার ভালোই চলছে। আর এ নিয়ে আমার তেমন কোনো উদ্বেগ কাজ করে না।
এ বছরের শুরুতে এক যুবক আমার অফিসের ঠিক পাশের ঘরটা ভাড়া নিল। আমি খুব বোকার মতো কাজ করে ফেললাম। ঘরটা ভাড়া নিতে দোমনা করার ফলে দেরি হলো, আর সেই কারণে তা হাতছাড়া হয়ে গেল। সেখানেও একটা রান্নাঘরসহ আলাদা একখানা ঘর, আর ওপাশে বসবার ঘর আছে। আমার আরো একখানা ঘর ও বসার ঘরের দরকার ছিল, তাতে অন্তত আমার মহিলা কেরানি দুজন খানিকটা খুশি হতো। কিন্তু রান্নাঘর আমার কোন কাজে লাগতো? আমার নাকের ডগা দিয়ে অফিসটা ছিনতাই হয়ে যাওয়ার জন্য আমার এই মামুলি অজুহাতই দায়ী।
বর্তমানে ছেলেটি সেখানে বসছে। নাম 'হ্যারাজ'। সেখানে সে ঠিক কি করে আমার জানা নেই। দরজার উপর লেখা আছে 'হ্যারাজ ব্যুরো'। আমি খোঁজ নিয়েছিলাম। আমাকে জানালো যে, এটা ঠিক আমার ব্যবসার মতই একটা ব্যবসা। আসলে কাউকেতো যেচে উপদেশ দেওয়া যায় না, বিশেষ করে ব্যবসায়ীটি যখন তরুণ এবং নিজের উন্নতি ঘটাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবতঃ ব্যবসায়ে তার ভবিষ্যত আছে; তথাপি কেউ যেন বেশি ছোটাছুটি না করে সবাই সেই পরামর্শই দিয়ে থাকে, কারণ ছেলেটির চলাফেরা দেখে মনে হয় তার কোনো বিশ্রাম নেই। আর যখন কোনোকিছু ঠিকঠাক মতো জানা যায় না তখন গৎবাঁধা দুয়েকটি কথাই কানে আসে । কখনো কখনো সিঁড়িতে হ্যারাজের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তাকে সবসময়ই অস্বাভাবিক ব্যস্ত দেখি। খুব দ্রুত সে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি কখনোই তার তার চেহারাটা ভালোভাবে দেখতে পাইনি। তবে দেখতাম অফিসের চাবিটা সবসময় তার হাতে থাকে। একদিন মুহূর্তের জন্য তার অফিসের দরজাটা খোলা দেখাম। আর ঠিক ইঁদুরের লেজের মতো সুড়ৎ করে সে দরজার আড়ালে চলে গেল। আমি আবার 'হ্যারাজ ব্যুরো' লেখাটার সামনেই দাঁড়িয়ে পড়লাম যেটা ইতোমধ্যে যতবার পড়া উচিত তার চেয়ে বেশিবার পড়ে ফেলেছি।
ঘরের দুর্বল ও পাতলা দেয়ালগুলো সৎ ও যোগ্য লোকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও অসৎ লোককে ঠিকই সুরক্ষা দিয়ে থাকে। আমার টেলিফোনটা যে দেয়ালের গায়ে আছে সেটাই আমাকে আমার প্রতিবেশী থেকে আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু সেদিনের ঐ ঘটনাটাকে একটা বিশেষ তামাশার ঘটনা হিসেবেই মনে হলো আমার। এই টেলিফোনটা উল্টোদিকের দেওয়ালে ঝোলানো ছিল, তবুও পাশের ঘরে সবকিছুই শোনা যেত। তাই আমি যখন গ্রাহকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতাম তখন তাদের নাম উচ্চারণ করতাম না। এভাবেই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কথাবার্তার ধরনে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পেত তার থেকে তাদের নাম অনুমান করতে খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ত না। কোনো কোনো সময় সে সব আশঙ্কা করেই আমি টেলিফোনের চারিপাশে দাপাদাপি-নাচানাচি করতাম যাতে ওপাশে আওয়াজ না যায়। টেলিফোনটা আমার কানেই লাগানো থাকতো, তবে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে তা কোনো সাহায্যই করতো না।
এইসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমার ব্যবসার বিগত সিদ্ধান্তগুলো হুমকির মুখে পড়লো এবং আমার গলার আওয়াজ খাটো হয়ে গেল। আমি যখন টেলিফোন করি তখন হ্যারাজ কি করে? আমি ব্যাপারটায় রং চড়াতে না চাইলেও―কেউ কেউ অবশ্যই তা করে থাকেন, আর তাতে বিষয়টা খোলাসা হয়―নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, হ্যারাজের টেলিফোনের প্রয়োজন নেই, সে আমার টেলিফোনটাই ব্যবহার করে। সোফাটা দেওয়ালের দিকে সরিয়ে নিয়ে সে আমার কথাবার্তা শোনে।
যখন দেয়ালের এপাশে টেলিফোন ব্যবহার করি, গ্রাহকদের যাবতীয় কথা শুনি, জটিল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেই, বড় বড় হিসাবগুলো মেলাই, তখন সারা সময় ধরে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক তথ্যগুলো দেয়ালের ওপাশে হ্যারাজকেই সরবরাহ করি। আর সম্ভবত, সে আমার আলাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেনা। কথাবার্তার মাঝখানেই উঠে পড়ে কারণ ততক্ষণে ব্যাপারটা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এবার সে অভ্যস্ত ব্যস্ততায় শহরময় উড়ে বেড়ায় এবং আমি ফোনের রিসিভারটা দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখবার আগেই ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে সে আমার বিরুদ্ধে লেগে তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
তারা//