দাম বাড়ানোর পরও গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহ কৃষকের
Published: 3rd, July 2025 GMT
লালপুর উপজেলায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গুদামেও সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে ধানের দাম কেজিতে তিন টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এর পরেও সংগ্রহের পরিমাণ বাড়েনি। নানা ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় বলে গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক।
চলতি মৌসুমের ২৪ এপ্রিল থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ৮১ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু করে খাদ্য বিভাগ। ধান সংগ্রহ হয়েছে ৪৮ টন। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। সংগ্রহ শেষ হয়েছে ৩০ জুন। চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯ টাকা কেজি দরে ৮৭১ টন। অর্জন হয়েছে ৬৩৫ টন।
গত মৌসুমে ৩৩ টাকা কেজি দরে ৬৭০ টন আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধান সংগ্রহ করতে না পারলেও চুক্তিবদ্ধ তিনটি মিলারের কাছ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে ৩২১.
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার বিষয়ে কথা হয় কৃষকদের সঙ্গে। তারা বলেন, খাদ্য গুদামে শুধু ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনা হয়। গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা ঠিক নেই এমন অজুহাতে ধান ফেরত দেওয়া হয়। মান নিয়েও কড়াকড়ি নিয়ম। সামান্য হেরফের হলেই ধান নেওয়া হয় না। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। এসব কারণে গুদামে ধান দিতে গিয়ে লোকসান হয়। অন্যদিকে ধানের মান কিছুটা খারাপ হলেও বাজারে বিক্রি করা যায়।
খাদ্য বিভাগ বলছে, তালিকাভুক্ত কৃষকদের থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়। বেশির ভাগ কৃষক আর্দ্রতা ও চিটামুক্ত ধান সরবরাহ করতে পারেননি। এ কারণে সংগ্রহের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এরপরও বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই ৪৮ টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
আবুল কালাম, মাসুদ রানাসহ কয়েকজন কৃষক জানান, গুদামে ধান সরবরাহের প্রধান বাধা কঠোর নিয়ম। বাজারে বিক্রি করলে এ সমস্যায় পড়তে হয় না। সংকট নিরসনে উৎপাদন খরচের সঙ্গে ৩০ শতাংশ সহায়তা দিয়ে দাম নির্ধারণ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয়কেন্দ্র খুলে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানান তারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ধানীগোল্ড, মিনিকেট, ২৮, ২৯ জাতের চিকন ধান কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা ও নেপালি স্বর্ণা বা মোটা ধান ৩১ টাকা কেজি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উপজেলা খাদ্য গুদামে মজুত রয়েছে ৪৮ টন ধান। অর্জিত ৬৩৫ টন চালের মধ্যে গুদামে মজুত আছে ৫২২ টন।
উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকের আলী বলেন, এ বছর অনেক চেষ্টা করে ৪৮ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। গুদামে যে আর্দ্রতায় ধান সংগ্রহ করা হয় সেই ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকেরা। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আফরোজা পারভীন বলেন, বেশির ভাগ কৃষক নিজের খাবারের জন্য ধান চাষ করেন। এরপর আবার গুদামে সরবরাহের ক্ষেত্রে ধানের আর্দ্রতা ঠিক থাকতে হয়। চিটাযুক্ত ধান নেওয়া হয় না। এই পদ্ধতিকে কৃষকেরা ঝামেলা মনে করেন। তাই বাজার থেকে গুদামে দাম বেশি হলেও তারা সরবরাহে আগ্রহী হননি। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, কৃষকদের লাভবান করতেই সরকারি গুদামে ন্যায্য দামে ধান সরবরাহ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এরপরও তাদের কোনো দাবি থাকলে লিখিতভাবে জানালে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ও স গ রহ স গ রহ র ল স গ রহ ক ষকদ র সরবর হ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।
আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।
এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকতুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।
ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫