সকালে এক সঙ্গে ঘর থেকে বের হন সোহাগ আর শুভ। যান বিজয় মিছিলে। হঠাৎ তপ্ত বুলেটের ধাক্কা। চোখের সামনেই বড় ভাই সোহাগের দেহ নিথর হতে দেখে নিজের গায়ে লাগা বুলেটের আঘাত ক্ষণিকের জন্য অনুভবই করতে পারেননি শুভ।

এভাবেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বর্ণনা দেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামের বাসিন্দা শুভ মিয়া। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ বড় ভাইয়ের মৃত্যুর দুঃস্মৃতি তাড়া করে ফেরে তাঁকে।

গোলামীপুরের আবুল কালাম-রোকেয়া বেগম দম্পতির বড় সন্তান সোহাগ মিয়া। ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। ছয় বছর আগে দালাল কেড়ে নেয় প্রবাসের স্বপ্ন। সঙ্গে যুক্ত হয় ঋণ শোধের তাড়না। এক পর্যায় ছোট ভাইসহ কাজের খোঁজে ঢাকায় যান সোহাগ।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ নেন দুই ভাই। থাকতেন বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকায়। যা আয় করতেন তার একাংশ বাড়িতে পাঠাতেন। বাকি টাকায় হিসাবের জীবন ছিল দুই ভাইয়ের। এর মাঝে শোধ করতে থাকেন ঋণ।

৫ আগস্ট সরকারের পতন উদযাপনে রাজপথে নামা জনতার মিছিলে যোগ দেন সোহাগ ও শুভ। এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন দু’জনেই। ঘটনাস্থলেই মারা যান সোহাগ মিয়া।  শুভ এখনও ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। 

ছেলের স্মৃতি স্মরণ করে এখনও মা রোকেয়া বেগমের চোখে বারোমাসি পানি। অসুস্থ বাবা মাঝেমধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকেন সন্তানের কবরের পাশে। 

জামালগঞ্জের গোলামীপুর গ্রামে গাছগাছালিতে ঘেরা বাড়িতে ছোট্ট ডোবার পাড়ে চিরশান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন সোহাগ। 

সোহাগের বাবা আবুল কালাম বলেন, ছেলেটা খুব বাধ্য ছিল। পরিবারের হাল ধরতে আর ঋণ শোধ করতে ঢাকায় গিয়েছিল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিজে এখন আর কাজ করতে পারেন না। সবকিছুই যেন শূন্য হয়ে গেছে। আহত ছোট সন্তান আর নিজের চিকিৎসা, ঋণ পরিশোধ, সংসার চালানো– কোনো কিছুরই হিসাব মেলাতে পারছেন না।

মা রোকেয়া বেগম কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ঋণের টাকা শোধ করতে ছেলেরা ঢাকায় যায়। ঋণও শোধ করতে পারিনি, সন্তানও হারালাম। এই দায় শোধাবে কে?

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শুভ মিয়া বলেন, ভাই ছিল তাঁর বন্ধু। সব কাজে দু’জনে একজোট। চোখের সামনে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ দেখে অনেকক্ষণ তিনি অনুভবই করতে পারেননি যে তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ। শুভ বলেন, সরকারিভাবে এককালীন তাদের ৫ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, তা জানেন না।

জামালগঞ্জের ইউএনও মুশফিকীন নূর বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোহাগ মিয়ার পরিবারকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে শহীদ সোহাগ মিয়ার আবাসনকে সুন্দর করে দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদ থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে নিহতের পরিবারের জন্য যেসব উপহার সামগ্রী এসেছে তা পৌঁছে দিয়েছেন তারা। পরবর্তী সময়ে এমন প্রতিটি সহায়তা যেন শহীদ সোহাগের পরিবার সঠিকভাবে বুঝে পায় সেদিকে নজর রাখবেন তারা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ শ ধ করত পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কারের আলোচনা থাকলেও বাস্তব প্রতিফলন নেই: জোনায়েদ সাকি

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার বাস্তব অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, সংস্কারের আলোচনা ও প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে না। এখনও ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এখনও বৈষম্য ও শোষণ-বঞ্চনা চলছেই।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটি আয়োজিত মানববন্ধনে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। ভিসা সমস্যার সমাধান, বেকার ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিতকরণ এবং ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলের ৫ দফা দাবিতে মেরিনারদের এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টাদের কাছে জানতে চাই- এখনও ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের আস্তানা ধ্বংস করতে না পারলে ক্ষমতায় আছেন কেন? এসব অব্যাহত থাকলে তা হবে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত ও তাদের আকাঙ্খার প্রতি অবমাননা। মেরিনারদের পাঁচদফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে অনতিবিলম্বে এসব দাবি পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মানববন্ধনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে দেশের জন্য রেমিটেন্সের পাশাপাশি সম্মানও বয়ে আনেন। দেশের মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে মেরিনারদের দাবি পূরণ করতে পারে।

বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটির মুখ্য সংগঠক ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের  সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী প্রীতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, মেরিন ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম জিলানী, ইঞ্জিনিয়ার রইচ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ, চিফ অফিসার কায়কোবাদ, ইঞ্জিনিয়ার বজলুল রহমান প্রমুখ।

মেরিনারদের পাঁচদফা দাবি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বেকার মেরিন ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিত করতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ক্যাডেট ও ফ্রেস রেটিং দ্বিগুণ করা হোক। ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। ভিসা সমস্যার সমাধান ও বিদেশি চাকরির বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে। নাবিক প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবধরনের অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে হবে। ভেনিজুয়েলাতে বন্দি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে অতিদ্রুত মুক্ত করে আনতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্ধকারের হয়নি অবসান
  • উচ্চশিক্ষার সংকট ও সংস্কার  
  • সাগর-রুনিকে ঘিরে নির্মিত ‘অমীমাংসিত’ পেল ছাড়পত্র
  • সংস্কারের আলোচনা থাকলেও বাস্তব প্রতিফলন নেই: জোনায়েদ সাকি
  • সোনাক্ষী আর চুপ থাকতে পারলেন না
  • শেকড়ে ফেরাল ফুটবল, ট্রায়ালের ফলাফল কবে
  • ৫০০ বছরের তেঁতুল গাছ
  • বন্দর-কাস্টমসের কার্যক্রম সচল হলেও কাটেনি ভোগান্তি
  • হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের লাশ: প্রশ্ন অনেক, উত্তর খুঁজছে পুলিশ