বুলেটের আঘাত ছাপিয়ে যায় সহোদর হারানোর ব্যথায়
Published: 3rd, July 2025 GMT
সকালে এক সঙ্গে ঘর থেকে বের হন সোহাগ আর শুভ। যান বিজয় মিছিলে। হঠাৎ তপ্ত বুলেটের ধাক্কা। চোখের সামনেই বড় ভাই সোহাগের দেহ নিথর হতে দেখে নিজের গায়ে লাগা বুলেটের আঘাত ক্ষণিকের জন্য অনুভবই করতে পারেননি শুভ।
এভাবেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বর্ণনা দেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামের বাসিন্দা শুভ মিয়া। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ বড় ভাইয়ের মৃত্যুর দুঃস্মৃতি তাড়া করে ফেরে তাঁকে।
গোলামীপুরের আবুল কালাম-রোকেয়া বেগম দম্পতির বড় সন্তান সোহাগ মিয়া। ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। ছয় বছর আগে দালাল কেড়ে নেয় প্রবাসের স্বপ্ন। সঙ্গে যুক্ত হয় ঋণ শোধের তাড়না। এক পর্যায় ছোট ভাইসহ কাজের খোঁজে ঢাকায় যান সোহাগ।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ নেন দুই ভাই। থাকতেন বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকায়। যা আয় করতেন তার একাংশ বাড়িতে পাঠাতেন। বাকি টাকায় হিসাবের জীবন ছিল দুই ভাইয়ের। এর মাঝে শোধ করতে থাকেন ঋণ।
৫ আগস্ট সরকারের পতন উদযাপনে রাজপথে নামা জনতার মিছিলে যোগ দেন সোহাগ ও শুভ। এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন দু’জনেই। ঘটনাস্থলেই মারা যান সোহাগ মিয়া। শুভ এখনও ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।
ছেলের স্মৃতি স্মরণ করে এখনও মা রোকেয়া বেগমের চোখে বারোমাসি পানি। অসুস্থ বাবা মাঝেমধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকেন সন্তানের কবরের পাশে।
জামালগঞ্জের গোলামীপুর গ্রামে গাছগাছালিতে ঘেরা বাড়িতে ছোট্ট ডোবার পাড়ে চিরশান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন সোহাগ।
সোহাগের বাবা আবুল কালাম বলেন, ছেলেটা খুব বাধ্য ছিল। পরিবারের হাল ধরতে আর ঋণ শোধ করতে ঢাকায় গিয়েছিল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিজে এখন আর কাজ করতে পারেন না। সবকিছুই যেন শূন্য হয়ে গেছে। আহত ছোট সন্তান আর নিজের চিকিৎসা, ঋণ পরিশোধ, সংসার চালানো– কোনো কিছুরই হিসাব মেলাতে পারছেন না।
মা রোকেয়া বেগম কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ঋণের টাকা শোধ করতে ছেলেরা ঢাকায় যায়। ঋণও শোধ করতে পারিনি, সন্তানও হারালাম। এই দায় শোধাবে কে?
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শুভ মিয়া বলেন, ভাই ছিল তাঁর বন্ধু। সব কাজে দু’জনে একজোট। চোখের সামনে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ দেখে অনেকক্ষণ তিনি অনুভবই করতে পারেননি যে তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ। শুভ বলেন, সরকারিভাবে এককালীন তাদের ৫ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, তা জানেন না।
জামালগঞ্জের ইউএনও মুশফিকীন নূর বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোহাগ মিয়ার পরিবারকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে শহীদ সোহাগ মিয়ার আবাসনকে সুন্দর করে দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদ থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে নিহতের পরিবারের জন্য যেসব উপহার সামগ্রী এসেছে তা পৌঁছে দিয়েছেন তারা। পরবর্তী সময়ে এমন প্রতিটি সহায়তা যেন শহীদ সোহাগের পরিবার সঠিকভাবে বুঝে পায় সেদিকে নজর রাখবেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ শ ধ করত পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ