টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সালাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও যেন টাকা দিতে হয় শিক্ষকদের। তাঁর কাছে জিম্মি সদর উপজেলার ১৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১০০ শিক্ষক ও ৯৬৩টি কিন্ডারগার্টেনের কয়েক হাজার শিক্ষক। 

শিক্ষকদের অভিযোগ– বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্দ, শিক্ষক বদলি ও বিদ্যালয় পরিদর্শন, সব ক্ষেত্রেই টাকা দিতে হয়। প্রতিবাদ করলেই বাধ্যতামূলক বদলি করে দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা সালামের বিরুদ্ধে একাধিক বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘চাকরির ১৯ বছর আমাকে ২২ বার বদলি করা হয়েছে। দুদকে ২টি মামলা হয়েছে। তবে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’

সূত্র মতে, আব্দুস সালাম চলতি বছরের গোড়ার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি সুনামগঞ্জের শাল্লা, গাইবান্ধা সদর, রাঙামাটির বরকলসহ কয়েকটি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। আগের প্রতিটি কর্মস্থলে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় শাস্তিমূলক বদলি হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ৩টি বিভাগীয় মামলা রয়েছে।

ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ২ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন গাজীপুর কেজি স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোছাদ্দিকুর রহমান। অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় নিবন্ধনের জন্য আব্দুস সালাম ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করেছেন।

ভাওয়াল মডেল একাডেমির পরিচালক লুৎফর রহমানের ভাষ্য, গত মে ৬ শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তাঁর স্কুল পরিদর্শন করেন। নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে যেতে বলেন। এরপর সব কাগজপত্রের একটি ফাইল নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর হাতে ফাইল দিলে তিনি বলেন, ‘ফাইল ঠিক থাকলে এটা ধুইয়া পানি খান। ফাইল দরকার নাই। আমাকে টাকা দেওয়া লাগবে।’

ভবানীপুর এলাকার মা একাডেমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুসলিমা খাতুন জানান, নিয়ম অনুযায়ী তাঁর স্কুলের নিবন্ধনের জন্য সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। এরপরও নিবন্ধন বাবদ ৩ লাখ টাকা দাবি করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম।

বানিয়ারচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিখা আক্তারের ভাষ্য, স্কুল মেরামতের জন্য সম্প্রতি সদর উপজেলার তিনটি স্কুলে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ আসে। টাকা ছাড় করতে আব্দুস সালাম তাঁর অফিসের কর্মচারীর মাধ্যমে প্রতিটি স্কুলপ্রধানের কাছে ৪০ হাজার টাকা চেয়েছেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে রাজি হননি।

তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই শিক্ষা অধিদপ্তর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, ‘একটি প্রশিক্ষণে ঢাকায় আছি। তবে তাঁর বিরদ্ধে করা অভিযোগ মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে।’

শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, কেজি স্কুলগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার, কিন্তু নিবন্ধন করছে না কেউ। নিবন্ধন না করে স্কুল চালানো মানে শিক্ষার্থীদের কাছ কর্তৃপক্ষ চাঁদাবাজি। স্কুলগুলো নিবন্ধন করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। নিবন্ধন করতে বলায় ঘুষ চাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল কর মকর ত র জন য কর ছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মচারীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সোমবার (৩০ জুন) সকালে সীমান্ত বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল শুরু হয়।

গত শুক্রবার ও শনিবার (২৯ জুন) এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একদফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন। যার ফলে আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন:

‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ বন্ধ আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম

হিলি স্থলবন্দরে সব কার্যক্রম বন্ধ

বন্দরে কোনো ব্যবসায়িক কাগজপত্রে স্বাক্ষর না হওয়ায় কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। তবে পূর্বনির্ধারিত ও আগাম স্বাক্ষরকৃত কাগজপত্রের ভিত্তিতে গত শুক্রবার কিছু পণ্য সীমিত পরিসরে রপ্তানি করা হয়েছিল।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেসার আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‍“শাট ডাউনের কারণে রবিবার বন্দরে কোনো মালামাল আসেনি। আজ থেকে কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছে।”

বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “শাট ডাউন প্রত্যাহার হওয়ায় আমরা আজ সকাল থেকে যথারীতি কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে।”

এদিকে, কর্মবিরতি চলাকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচলে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি মো. আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, “ইমিগ্রেশন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। যাত্রী পারাপারে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।”

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিআরটিএর নতুন নির্দেশনা
  • এস আলম ও পিকে হালদারসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ৩ মামলা
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু