‘সাংবাদিক নির্যাতন-বাকস্বাধীনতা হরণের’ নিন্দা জানালেন ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক-অধিকারকর্মী
Published: 3rd, July 2025 GMT
বাংলাদেশে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সাংবাদিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে দাবি করে এর নিন্দা জানিয়েছেন ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকারকর্মী।
আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে মতপ্রকাশে নানা রকম লিখিত ও অলিখিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।’
বিবৃতিতে অধিকারকর্মীরা বলেন, ‘আমরা প্রবাসে বসবাস করলেও বরাবরের মতোই দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকি। সে কারণে দেশের অমঙ্গলের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক সাংবাদিক নির্যাতন চলছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, বিগত ১১ মাসে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে হত্যা মামলাসহ হয়রানিমূলক বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। ৩৯ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তারা বলেন, ‘বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তিন শতাধিক সাংবাদিকের ওপর। শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ। হেনস্থামূলক দুর্নীতির মামলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমশিনে। ঢাকাসহ সারা দেশের সহস্রাধিক সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, ১৬৮ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারা দেশের প্রেসক্লাবগুলো থেকে ১০১ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল ও বহিষ্কার এবং মিডিয়া দখলের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে।’
বিবৃতিতে শিক্ষক-গবেষকরা বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে ১০ জন সাংবাদিক নিহত এবং অগণিত সাংবাদিক আহত হলেও সরকারের তরফ থেকে আক্রান্ত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়নি, বরং নির্যাতনের কালো হাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে। পত্রিকা অফিসের সামনে ‘মব’ সৃষ্টি করে ‘জেয়াফতের’ মতো ঘটনাও দেখেছে দেশবাসী, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেও সম্ভবত বিরল ঘটনা।’
তারা আরও বলেন, এসব নির্যাতন ও নিপীড়নের ফলে অনেক সাংবাদিক ও তাদের পরিবার অবর্ণনীয় মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কষ্ট ভোগ করছে এবং মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা মনে করি, এসব নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড বাকস্বাধীনতাকে হরণ করছে, যার ফলে সর্বত্র দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি, এসব ঢালাও মামলা ও চাকরিচ্যুতিসহ অন্যান্য নির্যাতনমূলক ঘটনার প্রতিকারে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। এতে আমাদের সন্দেহ জেগেছে যে, খোদ সরকারই নির্যাতন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের ভূ-খণ্ডের ইতিহাসে সাংবাদিকদের ওপর এমন নির্যাতন-নিপীড়ন, চাকরিচ্যুতি ও গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ ও কলম থামিয়ে দেওয়ার ঘটনা অতীতে ঘটেনি। গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোথাও ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন নির্যাতন ও বাস্বাধীনতা হরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের পাঠানো এ বিবৃতিতে সই করেছেন- সৈয়দ বদরুল আহসান, সিনিয়র সাংবাদিক; ড.
বিবৃতিতে আরও সই করেন- পুষ্পিতা অনিন্দিতা, অধিকারকর্মী; মিনহাজ আহমেদ, লেখক; মনজুর কাদের, লেখক; জি এইচ আরজু, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক; মিথুন আহমেদ, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক; সিসিলিয়া মোরাল, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক; সাবিনা নীরু, আবৃত্তিশিল্পী ও সাংস্কৃতিককর্মী; আবু সাইদ রতন, লেখক; মুজাহিদ আনসারী, কলামিস্ট; দেলওয়ার এলাহী, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী; কৌশিক আহমেদ, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক; আসলাম আহমাদ খান, সাংবাদিক ও লেখক; ক্ল্যারা রোজারিও, আবৃত্তিশিল্পী; এ্যানি ফেরদৌস, সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ক ত ককর ম ম হ ম মদ স ব ধ নত কল ম স ট প রব স আহম দ স গঠক সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট
চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম আদালত পুলিশের কাছে চার্জশটটি জমা দেন। চিন্ময়ের উসকানি ও নির্দেশে আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি সার্কেল) মাহফুজুর রহমান।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, প্রধান আসামি চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আইনজীবী খুনের মামলায় আমাদের কাছে চার্জশিট জমা দিয়েছে থানা পুলিশ। মামলার ধার্য্য তারিখে তা ম্যাজিস্ট্রেট আাদলতে জমা দেওয়া হবে। এখন এটি মামলার নথির সঙ্গে রাখা হয়েছে।
গত ৫ মে থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত চিন্ময় দাসকে আইনজীবী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখান। এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে তারা উল্লেখ করেন, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।