বাংলাদেশে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সাংবাদিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে  দাবি করে এর নিন্দা জানিয়েছেন ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকারকর্মী।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে মতপ্রকাশে নানা রকম লিখিত ও অলিখিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।’

বিবৃতিতে অধিকারকর্মীরা বলেন, ‘আমরা প্রবাসে বসবাস করলেও বরাবরের মতোই দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকি। সে কারণে দেশের অমঙ্গলের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক সাংবাদিক নির্যাতন চলছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, বিগত ১১ মাসে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে হত্যা মামলাসহ হয়রানিমূলক বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। ৩৯ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

তারা বলেন, ‘বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তিন শতাধিক সাংবাদিকের ওপর। শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ। হেনস্থামূলক দুর্নীতির মামলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমশিনে। ঢাকাসহ সারা দেশের সহস্রাধিক সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, ১৬৮ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারা দেশের প্রেসক্লাবগুলো থেকে ১০১ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল ও বহিষ্কার এবং মিডিয়া দখলের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে।’

বিবৃতিতে শিক্ষক-গবেষকরা বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে ১০ জন সাংবাদিক নিহত এবং অগণিত সাংবাদিক আহত হলেও সরকারের তরফ থেকে আক্রান্ত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়নি, বরং নির্যাতনের কালো হাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে। পত্রিকা অফিসের সামনে ‘মব’ সৃষ্টি করে ‘জেয়াফতের’ মতো ঘটনাও দেখেছে দেশবাসী, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেও সম্ভবত বিরল ঘটনা।’

তারা আরও বলেন, এসব নির্যাতন ও নিপীড়নের ফলে অনেক সাংবাদিক ও তাদের পরিবার অবর্ণনীয় মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কষ্ট ভোগ করছে এবং মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা মনে করি, এসব নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড বাকস্বাধীনতাকে হরণ করছে, যার ফলে সর্বত্র দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি, এসব ঢালাও মামলা ও চাকরিচ্যুতিসহ অন্যান্য নির্যাতনমূলক ঘটনার প্রতিকারে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। এতে আমাদের সন্দেহ জেগেছে যে, খোদ সরকারই নির্যাতন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।’

এতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের ভূ-খণ্ডের ইতিহাসে সাংবাদিকদের ওপর এমন নির্যাতন-নিপীড়ন, চাকরিচ্যুতি ও গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ ও কলম থামিয়ে দেওয়ার ঘটনা অতীতে ঘটেনি। গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোথাও ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন নির্যাতন ও বাস্বাধীনতা হরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের পাঠানো এ বিবৃতিতে সই করেছেন- সৈয়দ বদরুল আহসান, সিনিয়র সাংবাদিক; ড.

মুকিদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ফজলুল বারী, সুজাত মনসুর, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক; আশেকুন নবী চৌধুরী, সাংবাদিক; সৈয়দ আনাস পাশা, সাংবাদিক ও সম্পাদক; মোহাম্মদ মকিস মনসুর, সাংবাদিক; সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাপ্তাহিক সিলেটের ডাকের সাবেক সম্পাদক, টি এম আহমদ কায়সার, কবি; জেসমিন চৌধুরী, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার অ্যাক্টিভিস্ট; সফিয়া জাহির, কবি; সৈয়দ হিলাল সাইফ, সাংবাদিক ও ছড়াকার; ড. রায়হান রশিদ, আইনজীবী ও অধিকারকর্মী; ড. নওরীন তামান্না, আইনজীবী ও অধিকারকর্মী ও শিক্ষক; ওয়ার্দা ইসলাম, আইনজীবী ও অধিকারকর্মী; মুরসালিন মিজান, সাংবাদিক; তুষার আহমেদ, অধিকারকর্মী; হামিদ মোহাম্মদ, সাংবাদিক ও কবি; আকতার জামান, লেখক; দেলোয়ার হোসেন, সাংবাদিক; জাহানারা নুরী, সাংবাদিক; বাঁধন মুন্সি, ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট; মারজান প্রধান, অধিকারকর্মী; আজম খান, ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট; বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও বিজ্ঞানী; বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. জিনাত নবী, বিজ্ঞানী ও সমাজচিন্তক; বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, গীতিকার-সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী; বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাহমুদউল্লাহ, কলামিস্ট; বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস, কলামিস্ট;  কুলদা রায়, কথাসাহিত্যিক; হাসানআল আব্দুল্লাহ, কবি ও প্রাবন্ধিক; শীলা মোস্তফা, কবি; অধ্যাপক ড. নীরু কে. নাহার, লেখক ও শিক্ষক; ড. মো. আবু নাসের রাজীব, অধ্যাপক; ড. রায়হান জামিল, শিক্ষাবিদ-গবেষক ও লেখক; সেজান মাহমুদ, লেখক, গীতিকার, কলামিস্ট ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী; সুলতানা রহমান, সাংবাদিক ও উপস্থাপক;  মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সাংবাদিক ও লেখক; লুৎফুন নাহার লতা, লেখক ও অভিনয়শিল্পী; ফারজাহান রহমান শাওন, ডিরেক্টর, সেন্টার ফর টিচিং অ্যান্ড লার্নিং; ফকির ইলিয়াস, কবি; ফারহানা ইলিয়াস তুলি, কবি; সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি, অভিনেতা ও নাট্যকর্মী; ড. আঞ্জুমান এ ইসলাম, পানি ও পরিবেশ প্রকৌশলী, গবেষক ও কলামিস্ট; ওবায়দুল্লাহ মামুন, লেখক ও গবেষক; স্বপ্নীল ফিরোজ, কবি; খালেদ সরফুদ্দীন, কবি; স্মৃতি ভদ্র, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক; তৈমুর ফারুক তুষার, সাংবাদিক ও উপস্থাপক; বিকাশ মজুমদার, অধিকারকর্মী।

বিবৃতিতে আরও সই করেন- পুষ্পিতা অনিন্দিতা, অধিকারকর্মী; মিনহাজ আহমেদ, লেখক; মনজুর কাদের, লেখক; জি এইচ আরজু, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক; মিথুন আহমেদ, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক; সিসিলিয়া মোরাল, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক;  সাবিনা নীরু, আবৃত্তিশিল্পী ও সাংস্কৃতিককর্মী; আবু সাইদ রতন, লেখক; মুজাহিদ আনসারী, কলামিস্ট; দেলওয়ার এলাহী, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী; কৌশিক আহমেদ, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক; আসলাম আহমাদ খান, সাংবাদিক ও লেখক; ক্ল্যারা রোজারিও, আবৃত্তিশিল্পী; এ্যানি ফেরদৌস, সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ক ত ককর ম ম হ ম মদ স ব ধ নত কল ম স ট প রব স আহম দ স গঠক সরক র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

রিয়া মনির মামলায় জামিন পেলেন হিরো আলম

রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হত্যাচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির করা মামলায় আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান আজ শনিবার এই আদেশ দেন।

বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হাতিরঝিল থানা থেকে হিরো আলমকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় তাঁকে সিএমএম আদালতের ৯তলার এজলাসে নেওয়া হয়।

হিরো আলমের পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জামিন চেয়ে শুনানি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ২০০ টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

এদিকে হিরো আলমের মামলার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এই মামলার বাদী রিয়া মনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিরো আলমের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। আমাকে যেমন বিনা কারণে জেল খাটিয়েছে, তারও জেলে থাকা উচিত।’

এর আগে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন এলাকা থেকে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির দায়ের করা মামলায় হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামানের আদালত হিরো আলম ও তাঁর সহযোগী আহসান হাবিব সেলিমের বিরুদ্ধে ১২ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা অনুসারেই হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২৩ জুন হাতিরঝিল থানায় রিয়া মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি হিরো আলম ও বাদী রিয়া মনির মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এরপর হিরো আলম বাদীকে তালাক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। গত ২১ জুন বাদীর পরিবারের সঙ্গে মীমাংসার কথা বলে হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় একটি বাসায় ডাকা হয়। ওই সময়ে হিরো আলমসহ ১০ থেকে ১২ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা বাদীর বর্তমান বাসায় বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কাঠের লাঠি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন। এতে বাদীর শরীরে জখম হয়। এ সময় তাঁর গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের হার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুনরিয়া মনির মামলায় হিরো আলম গ্রেপ্তার২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই রায়ে কষ্ট পেয়েছি: শেখ হাসিনার আইনজীবী
  • বিশ্ব দেখছে শেখ হাসিনার বিচার
  • হৃদয় থেকে বলছি, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হব: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি
  • দুই আসামিকে খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ
  • এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল
  • এস আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগসংক্রান্ত আদেশ স্থগিত
  • মামুন হত্যা মামলায় চার আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে, অস্ত্র মামলায় ইউসুফের দায় স্বীকার
  • ‎আইনজীবী মাসুদ মিয়ারমৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • রিয়া মনির মামলায় জামিন পেলেন হিরো আলম