সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে চাঞ্চল্যকর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পর প্রথম সাক্ষ্য দিয়েছেন তৎকালীন শিক্ষার্থী, সুনামগঞ্জের বাসিন্দা হৃদয় পারভেজ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে তার সাক্ষ্য নেন বিচারক স্বপন কুমার দাস। তিনজনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী তরুণী (বাদীর স্ত্রী) আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। 

মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ১৯ মে নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবুল হোসেন জানান, সাক্ষী পারভেজ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ২০৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

শাহপরান (রহ.

) থানার ওসি মনির হোসেন জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখের আগের দিন বাদীর বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় গিয়ে সাক্ষ্যপ্রদানের বিষয়টি জানানো হয়। এরপরও উপস্থিত হননি। 

সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি মামলার বিচার শুরু হয়। পরে ২০২৩ সালে বাদী মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। চলতি বছরের ১৭ মার্চ উচ্চ আদালত মামলার বিচার ট্রাইব্যুনালে শুরু করার আদেশ দেন। 

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হলেও বাদী উচ্চ আদালতে যান। ফলে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে মামলাটি। তৎকালীন রাষ্ট্রপক্ষও বিচারে গড়িমসি করে। 

কারাগারে থাকা আসামিরা হলেন– বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক, জকিগঞ্জের আটগ্রামের অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর, দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম, কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের ছেলে মাহফুজুর রহমান মাসুম। তাদের মধ্যে চারজন শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ও পরিণতির পথ

সুরা লাইল, পবিত্র কোরআনের ৯২তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ২১টি আয়াত রয়েছে। ‘লাইল’ অর্থ রাত্রি, যা সুরার প্রথম আয়াতে উল্লেখিত। এই সুরা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্য, দানশীলতা ও কৃপণতার পরিণতি, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ বর্ণনা করে। সুরাটি দুই ধরনের মানুষের চিত্র তুলে ধরে: যারা দান করে ও ভালোকে গ্রহণ করে, তাদের জন্য সুখকর পথ সহজ হয়; আর যারা কৃপণতা ও অহংকারে ভালোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করে।

 সুরার প্রধান বিষয়

সুরা লাইল রাত, দিন এবং নর-নারীর সৃষ্টির শপথ দিয়ে শুরু হয়, যা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্যের দিকে ইঙ্গিত করে, ‘শপথ রাত্রির, যখন সে ঢেকে ফেলে! আর শপথ দিনের, যখন সে আলোয় উজ্জ্বল! আর শপথ তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টার তো বিভিন্ন গতি।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১-৪)

আরও পড়ুনবিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাতকে জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিনকে ইমানের আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। নর-নারীর সৃষ্টি সব সৃষ্টির জোড়ার বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। এই বৈচিত্র্য মানুষের কাজেও প্রতিফলিত হয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কোরআন, সুরা লাইল)

দানশীলতা ও সৎকর্মের পথ

সুরায় দানশীল ও সাবধানী মানুষের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে: ‘তাই কেউ দান করলে, সাবধানী হলে, ও যা ভালো তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুখকর পরিণামের পথ সহজ করে দেব।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৫-৭)

এই ব্যক্তিরা ভালোকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়, অহংকার থেকে মুক্ত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে। তারা জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকবে: ‘তার থেকে দূরে রাখা হবে সেই সাবধানীকে, যে ধনসম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কারও প্রতি অনুগ্রহের প্রতিদানের প্রত্যাশায় নয়, কেবল তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য। সে তো সন্তুষ্ট হবেই।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৭-২১)

কৃপণতা ও অহংকারের পরিণতি

বিপরীতে, কৃপণ ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি ভয়াবহ: ‘আর কেউ ব্যয়কুণ্ঠ হলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, ও যা ভালো তা বর্জন করলে, তার জন্য কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দেব। এবং যখন তার পতন ঘটবে, তখন ধনসম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৮-১১)

এই ব্যক্তিরা ভালোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং অহংকারে আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি অপেক্ষা করে: ‘আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। সেখানে সে-ই প্রবেশ করবে, যে নিতান্ত হতভাগ্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৪-১৬)

আরও পড়ুনসুরা গা’শিয়ার সারকথা০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আল্লাহর পথনির্দেশ

সুরায় আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন যে পথনির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর: ‘আর কাজ তো কেবল পথের নির্দেশ দেওয়া। আর আমিই (মালিক) ইহকাল ও পরকালের।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১২-১৩)

এই আয়াত মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং আল্লাহর হিদায়াতের মধ্যে ভারসাম্য তুলে ধরে। মানুষ তার পথ বেছে নেয়, কিন্তু আল্লাহই চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করেন।

 সুরার তাৎপর্য

সুরা লাইল রাত ও দিনের শপথ দিয়ে মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার দ্বৈততা তুলে ধরে। রাত জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিন ইমানের আলোর প্রতীক। দানশীলতা, সাবধানিতা এবং ভালোকে গ্রহণ করা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়, যেখানে কৃপণতা ও অহংকার জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। এই সুরা মানুষকে চিন্তাশীল হতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করে। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা লাইলের ব্যাখ্যা)

 মুহাম্মদ আসাদ, দ্য মেসেজ অব দ্য কোরআন, সুরা লাইল

আরও পড়ুনসুরা নাজিআতের সারমর্ম০২ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ