মোমবাতি প্রজ্বালনে শহীদদের স্মরণ করলো ছাত্রদল
Published: 1st, July 2025 GMT
জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ করেছে ছাত্রদল। ছাত্র জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোমবার রাত ১২টার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল’ শিরোনামে এ কর্মর্সূচি পালন করেন সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী। একইসঙ্গে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি আসিফুজ্জামান রিপন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
৩৬ দিনের কর্মসূচি উদ্বোধন: বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এটি শুধু মোমবাতি প্রজ্বলন নয়, গণতন্ত্রের নতুন যাত্রার সূচনা। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিলো ভয় আর আতংকের প্রতীক; আজ তা আশার আলো ছড়াচ্ছে। শেখ হাসিনা ছাত্রদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। আজকের এই আলোক প্রজ্বালনের মাধ্যমে আমাদের ৩৬ দিনের কর্মসূচির শুভ সূচনা হলো।’
আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘জুলাই মাসে ছাত্রদলের এই আয়োজন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বহন করে। একদিনে এই আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। হাজারো মানুষের রক্ত ও ত্যাগের মাধ্যমে এটি গঠিত হয়েছে। আজ আমরা খুনি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ দেখছি। শহীদ ওয়াসিম ও সাঈদের রক্ত বৃথা যাবে না।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং শতাধিক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ জাতি কখনও ভুলবে না।”
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। কিন্তু ছাত্রদল রাজপথে এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। হামলা-মামলার সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই।’
এই কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতৃত্বে শুরু হলো ৩৬ দিনব্যাপী একাধিক আন্দোলন-প্রচারণা ও স্মরণ কর্মসূচি। যা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশব্যাপী বিস্তৃত থাকবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল গণঅভ য ত থ ন স মরণ ছ ত রদল র ৩৬ দ ন ম মব ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিভ্রান্তি-হতাশা-অনিশ্চয়তার মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে: ফখরুল
বিভ্রান্তি, হতাশা, অনিশ্চয়তার মধ্যেও জাতীয় নির্বাচন হওয়ার একটি সম্ভাবনা এখন তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাইছে।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি।
সভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, যাই হোক, অনেক বিভ্রান্তি, অনেক হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েও কিন্তু এই নির্বাচনের এখন একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে,২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন হবে। এখানে কিছু গোষ্ঠী, কিছু মহল আজ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চায়। তারা বিভিন্ন রকম দাবি তুলে নির্বাচনকে ব্যাহত, বন্ধ, বিলম্বিত করতে চায়। কিন্তু এই দেশের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো একটা নির্বাচিত সরকার, যার পেছনে জনগণ থাকবে।
কালবিলম্ব না করে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার না থাকলে অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না থাকলে খুবই খারাপ হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীকাল ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে একটা মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক বিভাজন ও অস্থিরতার সুযোগে একটি গোষ্ঠী দেশে নৈরাজ্য তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, তাই নির্বাচনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।
আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বিষয়টি সরকার যত বলিষ্ঠতার সঙ্গে ঘোষণা করুক না কেন, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে একটা কালো মেঘ, কালো ছায়া দেখা যায়। এই নির্বাচন যদি সময়মতো অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে দেশের জন্য বিরাট বিপর্যয়, বিরাট সংকটের সৃষ্টি হবে বলে তাঁর ধারণা।
গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, গণভোট ও নির্বাচন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু শঙ্কা জাগে, গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে। জনগণ কতটা তা বুঝতে পারবে। এই ব্যাপারে তাঁর যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, এখনো বাংলাদেশের বিরাটসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বলা যায় নিরক্ষর। তারা কীভাবে এই চারটি জটিল প্রশ্নের আলোকে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তাই আজ যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক একতা, যারা দেশকে ভালোবাসে, তাদের একতা।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে দূরত্ব এই জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে, তা কমাতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এককাট্টা হতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র না থাকলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না।
গণতন্ত্রের পথে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করেন মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। সেই নির্বাচনগুলো করার জন্য শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তাই এখানে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামেও গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। গণতন্ত্রের পথে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি করা এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না। কাজেই যারা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এর পথে যাতে কোনোরকম বাধা-বিপত্তি না থাকে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মাহবুব উল্লাহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি আহ্বান, তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা যাতে সার্থক হয়। সেই ঘোষণা মোতাবেক যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।