বাংলাদেশের বিরোধিতাকারীদের আস্ফালন মেনে নেওয়া হবে না: গণতন্ত্র মঞ্চ
Published: 13th, May 2025 GMT
সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনের সময় দেওয়া কিছু স্লোগান এবং জাতীয় সংগীত থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে একটি পক্ষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। এমনকি প্রকাশ্যে জাতীয় সংগীতের অবমাননা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের অনুসারী ও পৃষ্ঠপোষকদের বাংলাদেশের জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। তাদের আস্ফালন বাংলাদেশের জনগণ সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করবে।
বিবৃতিতে সই করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।
আরও পড়ুনরাজু ভাস্কর্যে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হলো জাতীয় সংগীত২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৭১–এ জামায়াত আর ২৪–এর গণহত্যার জন্য আ.লীগের দল হিসেবে শাস্তি দাবি
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনোসাইডের (গণহত্যা) দায়ে জামায়াতে ইসলামী এবং ২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের শাস্তি দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী উভয়ই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী মানুষের হত্যাকারীদের সংগঠন। কাজেই এ দুটি দলকেই বিচারের মুখোমুখি না করা হলে তা স্পষ্টতই একাত্তর ও চব্বিশের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার। তাঁরা বলেছেন, ‘স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাঠানো এই বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়নের দুই শীর্ষ নেতা বলেছেন, কেবল নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ নেই। বরং আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণহত্যার দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারে যেভাবে সরকার উদ্যোগী হয়েছে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলে দেশের মুক্তিকামী জনগণের ওপর জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগীদের গণহত্যার বিচারের ব্যাপারেও তারা একইভাবে তৎপর হবে, এমন প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী উভয়ই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী মানুষের হত্যাকারীদের সংগঠন। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে, নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল দাবি করে একের পর এক অনাচার, গুম–খুন, নির্যাতন করে গেছে আর জামায়াত বাংলাদেশবিরোধিতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গেছে। কাজেই এ দুটি দলকেই বিচারের মুখোমুখি না করা হলে তা স্পষ্টতই একাত্তর ও চব্বিশের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে, কেবল নিষিদ্ধ করাই সমাধান নয়, বরং গত প্রায় ১৬ বছরে গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সহযোগীদেরও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভিত্তিকে সমাজে অপাঙ্ক্তেয় করে তোলা সম্ভব। কাজেই দলটিকে কেবল নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আবারও নিশ্চিতভাবেই রাজপথে নেমে আসবে।
গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও জেনোসাইডের সঙ্গে যুক্ত জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ, এমন মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর বিচারপ্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ক্ষমা প্রার্থনা অথবা অনুশোচনা প্রকাশ—এসব কোনো কিছুর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়াতের কৃতকর্মের দায় কোনো দিন ঘুচবে না। কৃতকর্মের জন্য প্রাপ্য শাস্তি তাদের কড়ায়–গন্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে।
ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচারকাজ সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন আরও বলেছে, অবিলম্বে হাসিনাসহ গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া এমন হতে হবে যেন তাতে বিন্দু পরিমাণ ফাঁকফোকর না থাকে। দেশের গণতন্ত্রমনা মুক্তিকামী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও জেনোসাইডের সঙ্গে যুক্ত জামায়াতের রাজনীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন।