বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে
Published: 14th, May 2025 GMT
বিশ্বে গত বছর অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী সংঘাত, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন দেশের লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ফলে নতুন এ রেকর্ড হয়েছে। বাস্তুচ্যুতির ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) প্রকাশিত যৌথ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার তথ্য নিবন্ধিত হয়েছে, যা নজিরবিহীন। এ সংখ্যা জার্মানির মোট জনসংখ্যার সমান। গাজা ও সুদানের মতো অঞ্চলগুলোতে সংঘাতের পাশাপাশি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ছয় বছর আগে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা এর অর্ধেকের কম ছিল। অর্থাৎ, গত ছয় বছরে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
আইডিএমসির প্রধান আলেক্সান্দ্রা বিলাক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সংঘাত, দারিদ্র্য ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে এবং এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন অসহায় মানুষ।’
আইডিএমসি এবং এনআরসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশ বা ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০১৮ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালে ১০টির মতো দেশের প্রতিটিতে ৩০ লাখের বেশি মানুষ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর মধ্যে গৃহযুদ্ধকবলিত সুদানের অবস্থা বেশি খারাপ। সেখানে ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ যুদ্ধকবলিত গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অর্থাৎ, গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হেলেন ও মিলটনের মতো বড় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা বিশ্বে মোট দুর্যোগসংশ্লিষ্ট বাস্তুচ্যুতির ঘটনার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। খবর এএফপির।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব স ত চ য ত হয় ছ ন র কর ড
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।