রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা।

আজ বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ছাত্রদল নেতারা এই দাবি জানান।

বিক্ষোভ-সমাবেশে ‘দফা এক দাবি এক, ভিসির পদত্যাগ’, ‘আমার ভাইয়ের লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘নয় মাসে দুই খুন, ভিসি প্রক্টরের অনেক গুণ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে শাহরিয়ারের জানাজা হয়।

সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাদকে সয়লাব ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেভাবে মাদকদের আড্ডা বজায় রয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের সামান্যতম পদক্ষেপ তাঁরা লক্ষ্য করেননি।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে এই প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু তাঁরা মনে করছেন, এই প্রশাসনের দ্বারা হয়তোবা সে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না। এমনকি শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো স্পষ্ট বিবৃতি বা বক্তব্য তাঁরা পাননি।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই সাম্যকে হারিয়েছি। কিন্তু আগামীতে এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী যেন আক্রান্ত না হয়।’

রাকিবুল ইসলাম বলেন, পদত্যাগের যে দাবি ছাত্র সমাজের মাঝখান থেকে উঠেছে, আশা করছি তাঁরা পদত্যাগ করবেন। তাঁরা তাঁদের দাবির পক্ষে রাজপথে থাকবেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

ছাত্রদলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আপনারা দেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল নামের একজন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন লোককে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গণ-অভুত্থান পরবর্তী সময়ে যে প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছে, সেই প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, তাঁরা সাম্যের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের ও বিচার দাবি করছেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যিনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সে জন্য তাঁরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোনোভাবে এই ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। গণ-অভুত্থান পরবর্তী সময়ে দুইটি হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তাঁরা উপাচার্যেরও পদত্যাগ দাবি করছেন।

নাছির আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলার চরমভাবে অবনতি হচ্ছে। এর আগে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মেধাবী কর্মী পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং তাঁরা মনে করেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত সহিষ্ণু আচরণ করে যাচ্ছেন। আজকের এই সমাবেশ থেকে তিনি আবার উচ্চারণ করছেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা যদি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দিকেও আঙুল তুলবেন তাঁরা। তিনি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।

এর আগে বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বর, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পদত য গ দ ব র ক ব ল ইসল ম ছ ত রদল র উপ চ র য সরক র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রি‌ভিউ দা‌বি

বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশে একজন সমকামীকে বাংলাদেশের জাতিসংঘের পরবর্তী আবাসিক সমন্বয়ক হি‌সে‌বে নি‌য়ো‌গ অবিবেচনাপ্রসূত উল্লেখ ক‌রে এই সিদ্ধান্ত রি‌ভিউ করার দা‌বি জা‌নি‌য়ে‌ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

শুক্রবার (৪ জুলাই) এক বিবৃ‌তি‌তে দল‌টির মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ এ দা‌বি জানান।

তি‌নি ব‌লেন, “বাংলাদেশের জাতিসংঘের পরবর্তী আবাসিক সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কূটনীতিক রিচার্ড এস হাওয়ার্ড একজন সমকামী। এমন খবর বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক। একজন সমকামীকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্তের আগে এখানকার সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া উচিত।”

আরো পড়ুন:

ইসলামী দলগু‌লোর ঐক‌্যবদ্ধ নির্বাচনে ইসলামপন্থিরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আস‌বে: রেজাউল করীম

সংবিধান সংশোধনসহ সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: মামুনুল হক

মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ব‌লেন, “একজন সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া জাতিসংঘের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্তে দেশে নতুন কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। চব্বিশের জুলাই পরবর্তী স্থিতিশীল একটি দেশকে অস্থিতিশীল করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে আসুক তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। সুতরাং আমরা মনে করি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিষয়টি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত রিভিউ করবেন।”

“ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে সংস্থাটি যদি এদেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রমোট করার অপচেষ্টা চালাতে চায়, তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এদেশের সচেতন মানুষকে সাথে নিয়ে সোচ্চার হবে,” ব‌লেও হুঁশিয়া‌রি দেন তি‌নি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ডাকাতি, বিদেশি মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার ১৩
  • সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রি‌ভিউ দা‌বি
  • বাংলাদেশ সফরে আসছে না ভারত
  • খুলনায় প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ প্রসঙ্গ: পরীক্ষা বাতিল, তদন্ত কমিটি
  • তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠক নাগরিক ঐক্যের
  • বন্দরে টিসিবি পন্য নিয়ে কারসাজি, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা 
  • নাক ভেঙেছে আদাহর
  • রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রেস সচিব 
  • জাবির গণিত বিভাগের ভবন নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরুর দাবি শিক্ষার্থীদের