Samakal:
2025-06-30@21:27:40 GMT

গোড়ায় জলজ গলদ

Published: 15th, May 2025 GMT

গোড়ায় জলজ গলদ

অগ্নিদুর্ঘটনা হইতে চট্টগ্রাম নগরীর সুরক্ষায় পৌনে দুইশত ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ তথা সড়কের ধারে কৃত্রিম জলস্তম্ভ স্থাপন করা হইলেও একটিতেও পানি মিলে নাই। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় হাইড্রেন্ট খুলিয়া কুষ্ঠ রোগীর শরীর ধুইবার সৌভাগ্য হইয়াছিল বটে, কিন্তু চট্টগ্রাম নগরবাসীর এক দিনের জন্যও সেই সৌভাগ্য হয় নাই।

অথচ ছয় বৎসর যাবৎ এই সকল যন্ত্র স্থাপিত হইয়াছিল নগরীর অগ্নিনিরাপত্তায়, যথায় চট্টগ্রাম ওয়াসার গচ্চা গিয়াছে চার কোটি টাকা। বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহজে অগ্নিনির্বাপণে এই সকল ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ স্থাপন করা হইলেও ব্যবহারের পূর্বেই অচল হইয়া পড়িয়াছে। এমনকি ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনির্বাপণে গিয়া ঐ সকল যন্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা করিয়াও ব্যর্থ হইয়াছে। ইহাতে স্পষ্ট, কারিগরি ত্রুটি-সংবলিত প্রকল্পটির গোড়াতেই গলদ রহিয়াছে। 

প্রশ্ন হইল, চট্টগ্রামে এই সকল যন্ত্র স্থাপনকালে কেন উহার যথার্থতা নিরূপণ করা হয় নাই? বিভিন্ন দেশের নমুনা লইয়া এই প্রকল্প গ্রহণ করা হইলেও দেখা যাইতেছে, ঐ সকল যন্ত্রের পানির লাইন ওয়াসার বসতবাড়িতে সরবরাহে ব্যবহৃত মূল পানির লাইনের সহিত যুক্ত করিয়া দেওয়া হইয়াছে। অথচ বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেন, এই প্রকার ব্যবস্থা পৃথিবীর কোথাও নাই। হাইড্রেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে পৃথক নকশার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল বলিয়াও বিশেষজ্ঞরা মত দিয়াছেন। এতদ্ব্যতীত পানির চাপের পরিমাণ লইয়াও সমস্যা রহিয়াছে। এই প্রকার ত্রুটি লইয়া বাস্তবায়িত প্রকল্পের পরিণতি যাহা হইবার তাহাই হইয়াছে। খনার বচন রহিয়াছে– ‘থেকে বলদ না বয় হাল, তার দুঃখ সর্বকাল’। চট্টগ্রাম নগরীর হাইড্রেন্টের গোড়ায় জলজ গলদ সেই বচনেরই সার্থক বাস্তবায়ন করিয়াছে!

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বৎসর ২০ সহস্রাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যথায় হতাহত মানুষের সংখ্যাও স্বল্প নহে। চট্টগ্রামে প্রতি বৎসর অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ভস্মীভূত হয়। চট্টগ্রাম জেলায় গত পাঁচ বৎসরে ছোট-বড় মিলাইয়া সাত সহস্রাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়াছে। আমরা জানি, পানির উৎসের অভাবেই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি অধিক হয়। চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত পুকুর কিংবা জলাধার না থাকিবার কারণে অগ্নিনির্বাপণে গিয়া হিমশিম খাইতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। তন্নিমিত্তেই ফায়ার সার্ভিসের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করিয়াছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। এই সকল যন্ত্র স্থাপন করা হইলেও কারিগরি ও পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে উহা ‘অকেজো’ প্রকল্পে পরিণত হইয়াছে। অথচ ফায়ার হাইড্রেন্ট প্রকল্পটির যথার্থ বাস্তবায়ন হইলে পানি সংকট সহজে দূর হইত, যাহাতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণও হ্রাস করা সম্ভব হইত।

সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল শর্টসার্কিট হইতে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় খেলনার গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটিলে পানি সংকটের কারণে উহা নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হিমশিম খাইতে হয়। ঐ সময় হাইড্রেন্টে চেষ্টা করিয়াও লাভ হয় নাই। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞ পর্ষদ গঠন করিয়া শুরুতেই এই প্রকল্পের ত্রুটি উন্মোচন করিতে হইবে এবং তৎপরামর্শ অনুযায়ী ঐ সকল যন্ত্র ব্যবহারোপযোগী করিবার চেষ্টা প্রয়োজন।

যাহাদের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের নামে সরকারের অর্থ গচ্চা গিয়াছে, তাহাদেরও জবাবদিহি জরুরি। ইহার সহিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ব্যবস্থাও শক্তিশালী করা জরুরি। অগ্নিকাণ্ডের স্থানীয় কারণ অনুসন্ধানে মনোযোগী হওয়া এবং জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনগুলিতে জরুরি নির্গমন পথ থাকা জরুরি। শুধু নিয়ম মানিয়া ভবন নির্মাণ ও আধুনিক অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকিলেই হয় না, সেইগুলির যথাযথ ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। অগ্নিকাণ্ড ঘটিলে উহা নির্বাপণের সম্ভাব্য ব্যবস্থাপনাও দরকার। এই ক্ষেত্রে ফায়ার হাইড্রেন্ট প্রকল্পের ব্যর্থতা সম্মুখে রাখিয়াই ব্যবস্থা লইতে হইবে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ব যবস থ ব যবহ র অন য য় হইয় ছ নগর র হইল ও

এছাড়াও পড়ুন:

কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য

বাজারে চাউলের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি পাইবার বিষয়টি শুধু উদ্বেগজনক নহে, বিস্ময়করও বটে। সরু চাউলই শুধু নয়, মোটা চাউলের মূল্যও বৃদ্ধি পাইয়াছে প্রতি কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা, যাহার ভোক্তা হইল নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। উপরন্তু নূতন করিয়া চাউলের মূল্য এমন সময় বৃদ্ধি পাইয়াছে যখন সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয় নিম্নআয়ের মানুষের তো বটেই, সিংহভাগ মানুষের অন্যতম শিরঃপীড়ার কারণ। বস্তুত রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিবিধ কারণে বহু কলকারখানা এবং ব্যবসায় ক্ষেত্রেও স্থবিরতা চলিতেছে, যাহার বৃহৎ ধাক্কা পড়িয়াছে উক্ত শ্রেণি-গোষ্ঠীর উপর। ইহাও উল্লেখ্য, গত কয়েক বৎসরে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত জরিপে দেখা গিয়াছে, সমাজের নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলি প্রায় সম্পূর্ণ ভাতের উপর নির্ভরশীল। তাহাদের আয়ের বৃহৎ অংশ খাদ্য সংগ্রহেই ব্যয় হয়। ফলে বিশেষত মোটা চাউলের বাজারে এহেন ঊর্ধ্বগতির নেতিবাচক প্রভাব সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রার সংকটকে বৃদ্ধি করিবে। প্রসঙ্গত রবিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে সরু চাউলের মূল্য ছিল ৭২ হইতে ৮০ টাকা কেজি, যাহা জুনে দাঁড়াইয়াছে ৭২ হইতে ৮৫ টাকা। মোটা চাউলের মূল্য৫৫ হইতে বৃদ্ধি পাইয়া হইয়াছে ৬০ টাকা, যাহা গত চার মাস যাবৎ অপরিবর্তিত ছিল। 

মাত্র কিছুদিন পূর্বে বোরো ধান কৃষকের ঘরে আসিয়াছে। দেশের মোট চাউলের চাহিদার দুই-­তৃতীয়াংশের জোগানদাতা এই মৌসুমে এইবার বাম্পার ফলন ফলিয়াছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চাউল আমদানিও যথেষ্ট। চাউলের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি তাই আমাদের নিকট বিস্ময়কর। এইদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানাইয়াছেন, কোরবানির ঈদের পর হইতে এই অতিরিক্ত মূল্যে চাউল বিক্রয় হইতেছে।
শুরুতে বাজারে সরু চাউলের দাম বৃদ্ধি পাইয়াছে, যাহার প্রভাব পড়িয়াছে মোটা এবং অন্যান্য চাউলে। তাহাদের দাবি, এক সপ্তাহ যাবৎ আড়তগুলি চাহিদানুযায়ী চাউল সরবরাহ করিতেছে না; চাউলকল বন্ধ থাকিবার অজুহাত দেখাইতেছে। অবশ্য চাউলকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি দাবি করিয়াছেন, কোনো কল বন্ধ নাই। বৎসরের এই সময়ে দাম বৃদ্ধিরও কোনো কারণ নাই। তবে আলোচ্য পরিস্থিতিতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বাজার নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলি যে উল্লেখযোগ্য কিছুই করিতেছে না– তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। অবশ্য অভিজ্ঞতা বলে, উহারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উপর ক্ষণে ক্ষণে ব্যাঘ্রের ন্যায় ঝাঁপাইয়া পড়িলেও চাউলকল মালিকগণের বিরুদ্ধে বরাবরই মার্জারসদৃশ আচরণ করিয়া থাকে। দেশে মজুতদারি বন্ধে ২০১২ সালে প্রণীত প্রতিযোগিতা আইনটির প্রয়োগ অদ্যাবধি দৃশ্যমান নাই। অথচ গণঅভ্যুত্থানের পর সকলেই আশা করিয়াছিল, অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় চাউলের বাজারেও বিগত আমলে সক্রিয় সিন্ডিকেটের প্রভাব হ্রাস পাইবে। প্রকৃতপক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারও দায়িত্ব গ্রহণের অব্যবহিত পর এমনই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করিয়াছিল।

চাউলের দাম বৃদ্ধি পাইলে শুধু ব্যক্তি বা পরিবারই যে ভোগান্তিতে পড়ে, তাহা নহে। সামাজিক, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতাতেও উহা ইন্ধন দিতে পারে– এই কথা আমরা এই স্তম্ভেই বহুবার বলিয়াছি। তাই ভরা মৌসুমে চাউলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয় দ্রুত খতাইয়া দেখা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। সরকারি পর্যায়ে চাউল আমদানি লইয়া যে ভাবনা চলিতেছে, তাহার বাস্তবায়নও দ্রুত হইতে হইবে। শুধু উহাই নহে, ইতোমধ্যে অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করিয়া দেওয়া টিসিবির বিশেষ কার্ডধারীদের মধ্যে চাউল বিতরণ কর্মসূচি প্রবর্তন করা যাইতে পারে। খোলাবাজারে বিক্রয় কর্মসূচির আওতায় ভর্তুকি মূল্যে চাউল বিক্রয়ের কার্যক্রমও পুনরায় শুরু করা যায়। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য