আমরা ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: শাহবাজ শরীফ
Published: 15th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পাল্টা হামলা চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের সেনাদের নাস্তানাবুদ করে দেয় পাকিস্তান। এরমাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছে। খবর জিও টিভির।
বুধবার (১৪ মে) ভারতের বিরুদ্ধে অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুসে অংশ নেওয়া সেনাদের সঙ্গে দেখা করতে শিয়ালকোটের পাসরুর সেনানিবাসে যান শাহবাজ। এই অপারেশন পাকিস্তানের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলেও জানান শাহবাজ।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সেনারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ও দ্রুত জবাব দিয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
মোদির সময় ফুরিয়ে এসেছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার ভারত ও পাকিস্তানের
শেহবাজের সঙ্গে শিয়ালকোটে উপস্থিত ছিলেন- উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী আহসান ইকবাল এবং তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। এছাড়াও সেনাপ্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইতিহাস টেনে ভারতের প্রতি কড়া বার্তা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। ওই বছরের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হয়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে শেষ হয়। এর মধ্যে ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের হামলার জবাবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অংশ নেয়।
এই প্রেক্ষাপট টেনে শেহবাজ সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ইতিহাস চিরকাল মনে রাখবে— কীভাবে পাকিস্তানের রক্ষীরা ভারতের আগ্রাসন ঠেকিয়ে দিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।”
সেনানিবাসে বক্তব্যকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, “বিশ্ব জানে ১৯৭১ সালে কারা মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখন তারাই বালুচ লিবারেশন আর্মি (বেলুচিস্তান স্বাধীনতাপন্থি গোষ্ঠী) এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানকে (পাকিস্তান সরকারবিরোধী গোষ্ঠী) সমর্থন দিচ্ছে। যা মোদির কাছ থেকে আসছে।”
তিনি আরো বলেন, “মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পূর্ব পাকিস্তানে বিভক্তির আগুন জ্বালানো মোদির আমাদের সন্ত্রাসবাদের উপর বক্তৃতা দেওয়া উচিত নয়। সন্ত্রাসবাদের কারণে আমরা ৯০,০০০ এরও বেশি বেসামরিক লোকের হতাহত এবং ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদি আপনার জ্বালাময়ী বক্তব্য আপনার কাছে রাখুন। পাকিস্তান এ অঞ্চলে শান্তি চায়। কিন্তু আমাদের শান্তি চাওয়ার বিষয়টিকে দুর্বলতা ভাববেন না। “আমরা শান্তির জন্য প্রস্তুত — এবং আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। পছন্দ আপনার।”
পাকিস্তানে ভারতের পানি প্রবাহের হুমকির জবাবে শাহবাজ বলেন, “যদি ভারত পাকিস্তানে পানি বন্ধ করার চিন্তা করে। তাহলে জেনে রাখুন: পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। এটি আমাদের সীমারেখা যেটিতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
এরপর আবারো মোদিকে উদ্দেশ্য করে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদি, আপনি যদি আরেকবার কোনো আগ্রাসন দেখান। তাহলে আপনারা ধারণার বাইরের পরিণতি ভোগ করবেন।”
ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আলোচনার দরজা খুলে দিয়ে শাহবাজ শরীফ বলেন, “কোনো সংলাপ একতরফা হতে পারে না। ভারতের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য হবে না যদি না এটি একটি বিস্তৃত সংলাপের অংশ হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে কাশ্মীর এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং এটি অবশ্যই সমাধান করা উচিত।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ১৯৭১ স ল মন ত র শ হব জ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের জন্মদিন আজ
প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন আজ। ১৯৪০ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
শনিবার (২৮ জুন) জন্মদিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে।
প্রধান উপদেষ্টার জন্মদিন উপলক্ষে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন, “শুভ জন্মদিন, স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার জীবনের অন্যতম গৌরব।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাবা দুলা মিঞা সওদাগর ও মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। স্ত্রী অধ্যাপক দিনা আফরোজ। অধ্যাপক ইউনূসের দুই মেয়ে রয়েছে।
২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
ছোটবেলা থেকে মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চট্টগ্রামের কলিজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি ১৬তম হন। পরে চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন ড. ইউনূস।
১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন।
১৯৭১ সালে ভান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে পরে আমেরিকার মার্সিসবোরোতে মিডিল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকায় একটি নাগরিক কমিটি গঠন করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনা করেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের শুরু দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের পর অধ্যাপক ইউনূস মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। চালু করেন গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প।
১৯৭৬ সালে পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৮৩ সালে এই প্রকল্পটি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। বাংলাদেশের বাইরেও আমেরিকাসহ গ্রামীণ ব্যাংক পদ্ধতি বিশ্বের ৪০টি দেশে এ মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে।
অর্জন ও সম্মাননা
অধ্যাপক ইউনূস ২০০৬ সালে তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন, যা তাকে বাংলাদেশের প্রথম নোবেলজয়ী হিসেবে বিশ্বমঞ্চে স্বীকৃতি এনে দেয়। এছাড়া, তিনি বিশ্বখাদ্য পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান
২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যেখানে তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা ইভা