জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ চায় না, বারবার ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটুক। তারা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা করে, যেখানে সবার সমান ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তাই তারা জুলাই অভ্যুত্থানে প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার এই উদ্যোগ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে সাধারণ প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল অবশ্যই জনগণের কাছে যাবে। তবে কিছু বিষয়ে সবাই ছাড় দেবে বলে তাঁরা আশা করেন। সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি দৃঢ় থাকা জরুরি।

জুলাই-আগস্টে মানুষ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাশারও বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, মানুষ এমন একটি দেশ চায়, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। ঐকমত্য কমিশন আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কাঠামোর পথরেখা তৈরির কাজ করছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নিচ্ছে দলটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় ফোরামের সদস্য নিখিল দাস, জনার্দন দত্ত নান্টু, শম্পা বসু, মনীষা চক্রবর্ত্তী, জুলফিকার আলী, আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান বিপ্লব ও গাজীপুর জেলা কমিটির সদস্যসচিব রাহাত আহম্মেদ।

সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, মতামত গ্রহণ ও প্রদানের এই পরিবেশ গত ফ্যাসিবাদের আমলে তাঁরা পাননি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মত ও দ্বিমত থাকবে। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব।

পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে ইতিমধ্যে তাঁরা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আর যেসব প্রস্তাবে মতপার্থক্যে থেকে গেছে, সেগুলো নিয়েই আলোচনা হবে।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম ও মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা একটি অঙ্গীকারে পৌঁছানোর আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

ঐকমত্যের ওপর অবস্থান ঠিক রাখার প্রসঙ্গ তুলে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দেশের ইতিহাসে অনেক ঐকমত্য হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সেটা মানেনি। পালাক্রমে ক্ষমতায় যাওয়া প্রায় সব কটি দল সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন না হলে ঐকমত্য আবার বিফলে যেতে পারে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি এখনো স্পষ্ট নয়: এবি পার্টি

সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি এখনো স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তবে তিনি বলেন, ‘কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, কিছুদিনের মধ্যে অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দপ্তরে সংস্কার নিয়ে লিখিত মতামত দেওয়ার পর এসব কথা বলেন মজিবুর রহমান। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

এবি পার্টির প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কাসেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক, নাসরিন সুলতানা মিলি ও আলতাফ হোসেন, নারী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার।

বাংলাদেশে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থাকে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করে এবি পার্টি। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ যাতে পুনর্বাসনের কেন্দ্রে পরিণত না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো দ্বিকক্ষের জন্য প্রস্তুত নয়। তবে জাতীয় স্বার্থে আমরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছি।’

জাতীয় সংসদের এক-চতুর্থাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে এবি পার্টি। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনে বিভিন্ন পেশার নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন দলটির চেয়ারম্যান।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এবি পার্টির সঙ্গে আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ওই বৈঠকে ১৬৬টি প্রস্তাবের ৩২টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ২৬টি প্রস্তাবে আংশিক একমত পোষণ করেছিল দলটি। তবে আজকের লিখিত মতামতে দলটি নতুন করে ১৩৮টি প্রস্তাবে একমত, ১০টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ১৮টিতে আংশিক একমত পোষণ করার কথা জানায়।

এ সময় আগামী জুলাইয়ের মধ‍্যে ঐকমত্য কমিশনের কাজ সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ঐকমত্য গঠনে এরই মধ্যে কমিশন প্রথম ধাপে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

প্রাদেশিক সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কথা তুলে ধরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছি। তবে আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আমরা দ্রুত সময়ে শেষ করার চেষ্টা করছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি এখনো স্পষ্ট নয়: এবি পার্টি
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্টের বৈঠক
  • গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে: আলী রীয়াজ
  • ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত অছাত্র ও ছাত্রলীগের কর্মী
  • সংবিধানের চার মূলনীতি পরিবর্তনের বিপক্ষে সিপিবি, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব
  • সবাই মিলে রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করা হবে: আলী রীয়াজ
  • রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনা রাজনৈতিক দলগুলোর সংগ্রামের ধারাবাহিকতা: আলী রীয়াজ
  • রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনা রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা: আলী রীয়াজ
  • ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সিপিবির বৈঠক চলছে