দেশের মানুষ চায় না বারবার ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটুক: আলী রীয়াজ
Published: 15th, May 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ চায় না, বারবার ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটুক। তারা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা করে, যেখানে সবার সমান ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তাই তারা জুলাই অভ্যুত্থানে প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার এই উদ্যোগ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে সাধারণ প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল অবশ্যই জনগণের কাছে যাবে। তবে কিছু বিষয়ে সবাই ছাড় দেবে বলে তাঁরা আশা করেন। সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি দৃঢ় থাকা জরুরি।
জুলাই-আগস্টে মানুষ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাশারও বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, মানুষ এমন একটি দেশ চায়, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। ঐকমত্য কমিশন আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কাঠামোর পথরেখা তৈরির কাজ করছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নিচ্ছে দলটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় ফোরামের সদস্য নিখিল দাস, জনার্দন দত্ত নান্টু, শম্পা বসু, মনীষা চক্রবর্ত্তী, জুলফিকার আলী, আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান বিপ্লব ও গাজীপুর জেলা কমিটির সদস্যসচিব রাহাত আহম্মেদ।
সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, মতামত গ্রহণ ও প্রদানের এই পরিবেশ গত ফ্যাসিবাদের আমলে তাঁরা পাননি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মত ও দ্বিমত থাকবে। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব।
পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে ইতিমধ্যে তাঁরা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আর যেসব প্রস্তাবে মতপার্থক্যে থেকে গেছে, সেগুলো নিয়েই আলোচনা হবে।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম ও মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা একটি অঙ্গীকারে পৌঁছানোর আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
ঐকমত্যের ওপর অবস্থান ঠিক রাখার প্রসঙ্গ তুলে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দেশের ইতিহাসে অনেক ঐকমত্য হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সেটা মানেনি। পালাক্রমে ক্ষমতায় যাওয়া প্রায় সব কটি দল সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন না হলে ঐকমত্য আবার বিফলে যেতে পারে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শরিয়াহ আইন নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের একটি মন্তব্য নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত সোমবার মামুনুল হকের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
‘আফগানিস্তানে যেতে আইনি বাধা নেই’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারের একটি অংশে মামুনুল হক উল্লেখ করেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ চালানো হয়েছিল। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ শরিয়াহ শাসন চেয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে কমিশনের পক্ষ থেকে যে জরিপ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল, সেখানে শরিয়াহ আইন বা শরিয়াহ শাসনসংক্রান্ত কোনো প্রশ্নই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে উক্ত জরিপ থেকে এ ধরনের মতামত বা ফলাফল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
অন্যদিকে এ বিষয়ে মামুনুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, ২০১৭ সালে ‘রিজলভ নেটওয়ার্ক’ পরিচালিত একটি জরিপকে তিনি অসতর্কতাবশত ঐকমত্য কমিশনের জরিপ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড শরিয়াহ ইন বাংলাদেশ: সার্ভেয়িং সাপোর্ট’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদন লিখেছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সৈয়দা সেলিনা আজিজ। ওই জরিপে ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে তিনটি বিষয় নজর কেড়েছে, নারী শিক্ষার বিষয় আপত্তিকর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫