কিংসের মাঠে দর্শক থাকবে, তবে শাস্তি থাকছে ‘স্থগিত দণ্ড’ হিসেবে
Published: 15th, May 2025 GMT
দর্শকশূন্য বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত আপাতত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে শাস্তি থাকছে ‘স্থগিত দণ্ডাদেশ’ হিসেবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে আবার দর্শক হাঙ্গামার মতো ঘটনা ঘটলে কার্যকর হবে দর্শকশূন্য ৬ ম্যাচের শাস্তি।
কেন দর্শক ছাড়া ম্যাচ আয়োজন করা হবে না—এ বিষয়ে বসুন্ধরা কিংসকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটি। কিংস কর্তৃপক্ষ সেই নোটিশের জবাব দিলেও তাতে মূলত নিজেদের গুণকীর্তনই করেছে এবং কঠোর সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
বাফুফেকে পাঠানো কিংসের চিঠিতে আবাহনী ও মোহামেডান এবং তাদের সমর্থকদেরই দোষারোপ করার চেষ্টা ছিল বেশি। এরপরও কিংসের পরবর্তী ম্যাচগুলো দর্শকশূন্য মাঠে আয়োজনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিল শৃঙ্খলা কমিটি।
কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় শৃঙ্খলা কমিটিকে নমনীয় হতে হয়েছে। কারণ, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের পৃষ্ঠপোষকই নয়, তাদের মাঠ কিংস অ্যারেনা ব্যবহার করে বাফুফেও।
কমিটির এক সদস্য আজ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘কিংসের মাঠে সাম্প্রতিক হাঙ্গামার কারণে আমরা সবাই হার্ড লাইনে ছিলাম। কিন্তু বাফুফের কিছু বাস্তব সমস্যা আছে। কিংস যদি বেঁকে বসে, ফেডারেশনেরই সমস্যা হবে। তাই আমাদের ওপর অনুরোধ ছিল সিদ্ধান্তটা বুঝেশুনে নিতে।’
ফলে আপসসুলভ আচরণের ভিত্তিতে কিংসের জন্য দর্শকশূন্য ৬ ম্যাচের শাস্তি দেওয়া হলেও সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে যদি কিংস অ্যারেনায় এমন কোনো ঘটনা আর না ঘটে, তাহলে এই শাস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যে আবার কিছু ঘটলে তৎক্ষণাৎ শাস্তি কার্যকর হবে।
ওদিকে কিংস ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন কারণ দর্শানোর জবাবে নিজের দোষ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ঘটনার সময় ‘তার মাথা ঠিক ছিল না’। নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচ অফিশিয়ালকে ধাক্কা দিলে একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ ৬ ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন।
২ মে বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী ম্যাচে কিংসের ফুটবলার সাদ উদ্দিন ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরে (বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ) রেফারির ওপর হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছে কমিটি। সর্বশেষ গত ১১ মে বাফুফে এলিট একাডেমি ও সিটি ক্লাবের ম্যাচে সিটির তিন কর্মকর্তা রেফারির ওপর শারীরিকভাবে হামলা চালান।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের তিন ক্লাবের ৬ কর্মকর্তাকে ৬ ম্যাচ অথবা ৬ মাস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সঙ্গে শাস্তি দেওয়া হয়েছে এক ফুটবলার ও বলবয়কে। এ ছাড়া সিটি ক্লাবসহ আরও দুই ক্লাবকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে, যার পরিমাণ ১০ হাজার টাকার আশপাশে।
গতকাল সন্ধ্যায় বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করেনি বাফুফে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ককটেল ফেটে কব্জি উড়ে গেল ডাকাতের, যন্ত্রণায় মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাল্কহেডে ডাকাতি করতে গিয়ে হাতে ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অপর দুই ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। এছাড়া ডাকাত দলের হামলায় দুই গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে গজারিয়া উপজেলা হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ডাকাতদের নারায়ণগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করে।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহত ডাকাত সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ডাকাত দলের হামলা আহতরা হলেন, ভাটি বলাকী গ্রামের ইসহাক বেপারীর ছেলে আলম (৩৭) ও একই গ্রামের রাসেলের ছেলে সোহাগ (১৬)।
আরো পড়ুন:
ছেলের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে লাশ হলেন বাবা
সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে রাখা ছিল কয়েকটি বাল্কহেড। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে একটি স্পিডবোট নিয়ে সেখানে ডাকাতির চেষ্টা করে সঙ্ঘবদ্ধ একটি নৌ ডাকাত দল। তবে নদীতে জেলেরা থাকায় সুবিধা করতে না পেরে তারা ফিরে যায়।
পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি স্পিডবোট ও একটি ট্রলার নিয়ে তারা আবার ফিরে আসে। খবর পেয়ে ভাটি বলাকী গ্রামের লোকজন তাদের বাধা প্রদান করে। আতঙ্ক তৈরি করতে ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে ২-৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতদল। এ সময় ট্রলার থেকে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়তে গিয়ে অসাবধানতাবশত তা ডাকাত দলের এক সদস্যের হাতে বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই ডাকাত সদস্যের এক হাতের কব্জি উড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্পিডবোটে থাকা ৫-৬ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে, ট্রলারে থাকা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে ধাওয়া দিয়ে নদীর চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় থেকে আটক করে জনতা। পরে উত্তেজিত জনতা তাদের গণধোলাই দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় একজন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “এ রকম একটি খবর আমি পেয়েছি। ঘটনা নদীতে আর ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সীমানায় পড়ায় বিষয়টি তারা দেখছে।”
বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সালেহ আহম্মেদ পাঠান বলেন, “আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী তারা শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আনন্দবাজার এলাকা থেকে একটি জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে। ছিনতাই করা ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে কয়েকজন ডাকাত মেঘনা নদীর গজারিয়া উপজেলার ভাটি বলাকী এলাকায় ডাকাতি করতে যায়।”
তিনি বলেন, “স্থানীয়রা তাদের বাধা দিলে ডাকাতরা জনগণকে উদ্দেশ্য করে কয়েক কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলে শুনেছি। ককটেল নিজের হাতে বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকেসহ তিন ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে জনতা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “তাদের তিনজনের অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য তাদের নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর একজন মারা গেছে। নিহতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে আমরা দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছি।”
বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম, “এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে দুইজন রোগী আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন যার হাতে ককটেলে বিস্ফোরিত হয়েছিল, সে মারা গেছে। আরেকজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি।”
বিষয়টি সম্পর্কে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছে। আহত দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি। তাদের নাম পরিচয় জানতে চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/রতন/মেহেদী