কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতকে পাকিস্তানের আমন্ত্রণ
Published: 15th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কাশ্মীর, পানিবণ্টনসহ সব বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে ‘সামগ্রিকভাবে’ দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসার জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার শিয়ালকোটের পাসরুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শনের সময় শাহবাজ প্রতিবেশী দেশের প্রতি এ আলোচনার প্রস্তাব দেন।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত চলাকালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে যে অভিযান চালিয়েছিল, তার প্রশংসা করেন শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ‘দৃষ্টান্তমূলক জবাব’ দিয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান সরকারের দাবি, পেহেলগামের ঘটনার পর ভারতের হামলার জবাবে যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে দেশটির ২৬টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা। হামলায় বিমানঘাঁটিসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত চলাকালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে যে অভিযান চালিয়েছিল, তার প্রশংসা করেন শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ‘দৃষ্টান্তমূলক জবাব’ দিয়েছে পাকিস্তান।গতকাল শাহবাজ শরিফ সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ৬ থেকে ৭ মে ভারতীয় হামলার জবাবে পাকিস্তান পাল্টা যে অভিযান চালিয়েছে, তাতে প্রতিবেশী দেশের বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাধিক ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
২৬টি ভারতীয় স্থাপনায় হামলার প্রসঙ্গ টেনে শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানি সেনাদের বলেন, ‘গোটা জাতি আপনাদের পাশে আছে।’
ভবিষ্যতে হামলার বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সতর্ক করেন শাহবাজ। তিনি বলেন, ‘যদি আবার আমাদের ওপর হামলা চালান, তবে সবকিছু হারাবেন। আমরা যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত, আবার সংলাপের জন্যও। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।’
সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে মোদির দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে শাহবাজ বলেন, ‘আমাদের শর্ত দেবেন না। পানি আমাদের রেডলাইন—আমাদের পানির প্রবাহ থামানোর কথা কল্পনাও করবেন না। হ্যাঁ, পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। আমাদের নীলাম-ঝিলাম পানি প্রকল্পেও আপনারা হামলা চালিয়েছেন। যদি সেখানে বড় আকারের ক্ষতি হতো, তবে বাগলিহারসহ আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলো আমরা ধ্বংস করে দিতাম।’
যদি আবার আমাদের ওপর হামলা চালান, তবে সবকিছু হারাবেন। আমরা যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত, আবার সংলাপের জন্যও। এখন সিদ্ধান্ত আপনার (নরেন্দ্র মোদি)।শাহবাজ শরিফ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীএ সময় আবারও মোদিকে বিরোধ ভুলে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান শাহবাজ। তিনি বলেন, ‘আসুন, এ আগুন নিভিয়ে ফেলি। আসুন, কাশ্মীর ও পানির বিষয়ে বসে আলোচনা করি।’
আরও পড়ুনপাকিস্তান কি ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, কী জানা গেল১৫ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীর হামলা হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সই হওয়া সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে ভারত। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। পাল্টাপাল্টি উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালায়।
আরও পড়ুনভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানে নিহত সেনাসদস্যের সংখ্যা বেড়ে ১৩: আইএসপিআর১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ হব জ র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।
বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।
মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।
আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩