শেরপুরের উন্নয়ন দাবিতে ৭ কিলোমিটার মানববন্ধন
Published: 15th, May 2025 GMT
সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের জনপদ শেরপুর জেলার যৌক্তিক উন্নয়নের দাবিতে দীর্ঘ ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।
শেরপুর প্রেসক্লাবের আহ্বানে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১১টা এক মিনিট থেকে ঘণ্টাব্যাপী এই ‘নাগরিক মানববন্ধনে’ অর্ধলক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে।
এ সময় শহরের জিরো পয়েন্ট থানা মোড় এলাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কাকন রেজা ও সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল। সভায় বক্তারা শেরপুরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৮৪ সালে শেরপুরকে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত করা হয়। ৪১ বছর অপেক্ষা করেও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে দেয়নি কতিপয় অসাধু নেতা। তারা পাঁচটি দাবি তুলে ধরে বলেন, দাবি না মানলে আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে।
ঘোষিত ৫ দফা দাবিগুলো হলো:
এক.
দুই. আধুনিক উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারি মেডিকেল কলেজ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ।
তিন. শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে পূর্ণাঙ্গ কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর।
চার. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দ্রুত শেরপুর জেলাকে রেলপথের সাথে সংযুক্ত করা।
পাঁচ. জেলার পর্যটন এলাকায় আধুনিক হোটেল-মোটেল স্থাপন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও বন সংরক্ষণ করাসহ পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করতে হবে।
এ সময় শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কাকন রেজা বলেন, ‘‘আমাদের শেরপুর জেলা দীর্ঘদিন রাজনৈতিক গ্যাড়াকলে পিছিয়ে আছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পর্যটন, যোগাযোগ সব ক্ষেত্রে। ধর্ম, বর্ণসহ রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে আসুন এক কাতারে দাঁড়াই।’’
এ প্রসঙ্গে শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, ‘‘বিগত সরকারের আমলে আমাদের পাশের জেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে তার শতভাগের একভাগও আমাদের জেলায় হয়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি শেরপুরের কৃষি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পর্যটনের উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন এবং এটা শেরপুরের মানুষের দাবি।’’
মানববন্ধনে শেরপুরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। এছাড়াও বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ অনেক রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তারিকুল//
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ দিন ধরে চলমান আন্দোলন এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে গত কয়েকদিন ধরে চলা অনশনকারীদের ওপর হামলা ও ধাওয়া দেওয়া হয়েছে। এতে আন্দোলনকারী অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের আয়োজনে অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যহত করার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলের পরপরই আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহত শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি সংসদের নেতৃত্বে জাহিন-রাফি
রাকসু ফান্ডে জমা ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, হল সংসদের ফান্ড অস্পষ্ট
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে বরিশাল সফরে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল নগরীতে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরপরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
তিনি বলেন, “১৩ আগস্ট বরিশালে সফরে এসে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ সেই পুরনো সিন্ডিকেট দালাল চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় অনশনরত শিক্ষার্থীসহ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবায় অবহেলা এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আমরা ১৮ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্ব-শরীরে বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেবেন। কারণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরবর্তী যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।”
রনি বলেন, “যে কারণে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো উপদেষ্টার কাছে বলতে চেয়েছেন। সেখানে উপদেষ্টা না এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বরিশালে পাঠিয়েছেন। মহাপরিচালক বরিশালে মতবিনিময় সভা করলেও সেখানে আন্দোলনকারীদের কোনো প্রতিনিধি না রেখে বরং অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এ কারণেই হাসপাতালের স্টাফরা আন্দোলনকারী ও অনশনরতদের ওপর হামলা চালাতে সাহস দেখিয়েছেন। আমারা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করব।”
অপরদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে ছাত্ররা আমাদের কটূক্তি করে দালাল বলায় তাদের ধাওয়া করা হয়। এ সময় অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছে।”
এর আগে, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল থেকে শহরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা আহত হন এবং আন্দোলনরত কয়েকজনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঢাকা/পলাশ/মেহেদী