শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন, ছয় দফা দাবি
Published: 15th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই মানববন্ধনে তারা ছয়টি দাবি তুলে ধরেছে।
তাঁদের ছয়টি দাবি হলো শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের অধীনে প্রক্টরিয়াল টিমে একটি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করতে হবে, যা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে এবং প্রয়োজনে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যসংখ্যা বাড়াতে হবে; ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মাদক ব্যবসা ও অপরাধী চক্রের অভয়াশ্রম থেকে মুক্ত করে একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভারী যান চলাচল ও হর্ন বাজানো সীমিত করতে হবে; নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মাদকাসক্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিসরে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সব ধরনের মব ভায়োলেন্সের পরিবর্তে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমাঈল নাহিদ বলেন, ‘গত ১০ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট মবে বহিরাগত তোফাজ্জলের হত্যাকাণ্ড, আরেকটি সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাস–সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সাম্যের হত্যাকাণ্ড।’
ইসমাঈল নাহিদ বলেন, ‘তোফাজ্জল হত্যার ১০ মাস পার হলেও আমরা বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি দেখতে পাইনি। আমরা চাই প্রশাসন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে এবং মব ও সন্ত্রাসের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা কায়েম করবে।’
ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিইউআরএইচএ) সদস্য তাপসী রাবেয়া বলেন, ‘ডিইউআরএইচএর পক্ষ থেকে আমরা দ্রুততম সময়ে শাহরিয়ার হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
প্রশাসনের কাছে প্রক্টরিয়াল টিমের অধীনে একটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে যেকোনো জটিল ও বিরূপ পরিস্থিতি সঠিক সময়ে সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্দিষ্ট পরিসরে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণসহ মানসিক ভারসাম্যহীন নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই, যেন আর কোনো শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে না হয়।’
এ মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সদস্যসচিব রুকাইয়া রচনা। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির সদস্য ইসরাত জাহান ইমু, আবদুল্লাহ আজিম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট হত য ক ণ ড র হত য ত করত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ দিন ধরে চলমান আন্দোলন এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে গত কয়েকদিন ধরে চলা অনশনকারীদের ওপর হামলা ও ধাওয়া দেওয়া হয়েছে। এতে আন্দোলনকারী অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের আয়োজনে অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যহত করার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলের পরপরই আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহত শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি সংসদের নেতৃত্বে জাহিন-রাফি
রাকসু ফান্ডে জমা ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, হল সংসদের ফান্ড অস্পষ্ট
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে বরিশাল সফরে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল নগরীতে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরপরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
তিনি বলেন, “১৩ আগস্ট বরিশালে সফরে এসে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ সেই পুরনো সিন্ডিকেট দালাল চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় অনশনরত শিক্ষার্থীসহ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবায় অবহেলা এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আমরা ১৮ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্ব-শরীরে বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেবেন। কারণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরবর্তী যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।”
রনি বলেন, “যে কারণে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো উপদেষ্টার কাছে বলতে চেয়েছেন। সেখানে উপদেষ্টা না এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বরিশালে পাঠিয়েছেন। মহাপরিচালক বরিশালে মতবিনিময় সভা করলেও সেখানে আন্দোলনকারীদের কোনো প্রতিনিধি না রেখে বরং অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এ কারণেই হাসপাতালের স্টাফরা আন্দোলনকারী ও অনশনরতদের ওপর হামলা চালাতে সাহস দেখিয়েছেন। আমারা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করব।”
অপরদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে ছাত্ররা আমাদের কটূক্তি করে দালাল বলায় তাদের ধাওয়া করা হয়। এ সময় অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছে।”
এর আগে, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল থেকে শহরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা আহত হন এবং আন্দোলনরত কয়েকজনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঢাকা/পলাশ/মেহেদী