ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা শামীম হাসান সরকারের বিরুদ্ধে মারধর, গালিগালাজ, ধর্ষণের হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া। শুধু তাই নয়, শুটিং সেটে মাদক সেবন করে তার সঙ্গে বাজে ব্যবহারের অভিযোগও করেন এই অভিনেত্রী।
এ ঘটনার পর প্রিয়াঙ্কার সব অভিযোগ অস্বীকার করেন শামীম হাসান সরকার। পরবর্তীতে অভিনয়শিল্পী সংঘে দুজনেই অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে সালিশি বৈঠকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের সমাধান হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তারা দুজনেই অনুতপ্ত। এতে করে সংশ্লিষ্ট শিল্প মাধ্যমের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায় স্বীকার করে এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ।
এ জটিলতা সমাধানের পর শামীম হাসান সরকার ও প্রিয়াঙ্কা প্রিয়ার ভিডিও বক্তব্য নিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। তাতে তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
আরো পড়ুন:
অশ্লীলতার অভিযোগে অভিনেত্রী-নির্মাতাদের লিগ্যাল নোটিশ
ছোটবেলা থেকেই খুব খেলতে চাইতাম: তাসনুভা তিশা
এ বিষয়ে শামীম হাসান সরকার বলেন, “কিছুদিন আগে প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া নামে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার খারাপ একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি তাকে বকা দিয়েছিলাম, খারাপ কথা বলেছিলাম। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমি এটা নিয়ে লজ্জিত। আমি মনে করি, আমার এটা করা ঠিক হয়নি। ১০ বছরের চলার পথে অনেকের সঙ্গে মিশেছি, রাগের মাথায় কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকতে পারি, রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি কাজ করব।”
নিজেকে বদলে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শামীম হাসান সরকার বলেন, “ভাইয়া-আপুদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আমরা বস্তুনিষ্ট একটা সমাধানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমি কথা দিচ্ছি, আমার দ্বারা আর কখনো এমনটা হবে না। আমি যা করেছি, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী। আমি যদি নিজের অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আপনারা আমাকে মাফ করে দিবেন।”
শামীম হাসান সরকার অভিনয়শিল্পী সংঘের নিয়মিত সদস্য। পরবর্তীতে সাংগঠিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পেলে তার সদস্য পদ বাতিল হবে বলেও সতর্ক করেছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে শামীম হাসান সরকার বলেন, “শিল্পী সংঘ থেকে আমাকে সতর্ক করা হয়েছে। আমিও তাদের কথা দিয়েছি, এমনটা আর হবে না। আমি নিজেকে বদলে ফেলব। এরকম অভিযোগ আর কখনোই আসবে না। কথা দিচ্ছি।”
প্রিয়াঙ্কা প্রিয়াও জটিলতা নিরসনের বার্তা দিয়েছেন। এ অভিনেত্রী বলেন, “সম্প্রতি শুটিং সেটে শামীম হাসান সরকারের সঙ্গে আমার একটা ঝামেলা নিয়ে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। শুটিংয়ের শট দেওয়ার সময় আমার ভুল হয়। এ কারণে উনি আমাকে গালিগালাজ করেন এবং রাগারাগি করেন। উনি স্বীকার করেছেন, রাগের মাথায় এসব করেছেন।”
অভিনেতা শামীম হাসান সরকারের বিরুদ্ধে মারধর, গালিগালাজ, ধর্ষণের হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া। কিন্তু এসব সত্য নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা বলেন, “এখানে ধর্ষণের যে ব্যাপারটা আসছে এটা সম্পূর্ণ ভুল। উনি শরীরে স্পর্শ করেননি বা এ ধরনের কিছু হয়নি। রাগের মাথায় আমার সঙ্গে উনি যে নোংরা শব্দ ব্যবহার করেছেন, তার জন্য আমার কাছে সরি বলেছেন। অভিনয়শিল্পী সংঘে তার সমাধান হয়েছে।”
পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া বলেন, “আমরা শিল্পী সংঘে এসেছি। ভাইয়া (শামীম) আমার কাছে সরি বলেছেন। পুরো ঘটনা আমি আমার পরিবারের (শিল্পী সংঘ) সঙ্গে শেয়ার না করে সংবাদ সম্মেলন করি। এসবের জন্য আমি দুঃখিত। আমার উচিত ছিল বিষয়টি অভিনয়শিল্পী সংঘে আগে জানানো। আমি যেহেতু নতুন তাই এটা না বুঝেই করেছি।”
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সালিশি বৈঠকের আয়োজন করে অভিনয়শিল্পী সংঘ। শামীম হাসান সরকার ও প্রিয়াঙ্কা প্রিয়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দুজনের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলে অভিনয়শিল্পী সংঘের অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ উপ-কমিটি (সালিশ কমিটি)।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক শ ম ম হ স ন সরক র স ব ক র কর কর ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চবিতে শিবিরকে নিয়ে ছাত্রদলের মিথ্যাচারের অভিযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে শাখা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের মিথ্যাচার ও অপবাদের অভিযোগ তুলে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চবি শিবির।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে শাখা ছাত্রদল। সেখানে লিখিত ও মৌখিকভাবে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ শাখা শিবিরের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ করেন।
আরো পড়ুন:
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেয়াল টপকাতেই হাতে ঢুকল রড
৬ ঘণ্টা পর রেলপথ ছাড়লেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন ও ক্যাম্পাস পরিস্থিতি বিষয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চবি ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নানান অপবাদ এবং সুস্পষ্ট মিথ্যাচার করেছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে শাখা ছাত্রশিবির।
সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনগুলোর আলোচনায় শিবির এমফিল-পিএইচডির পক্ষে ও বয়স ৩০ এর কথা বলাই প্রশাসন সেটা নির্ধারণ করেছে বলে জানায়।
এর জবাবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ছাত্রশিবির এমফিল, পিএইচডির পক্ষে ছিল মর্মে ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের দেওয়া উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, এমফিল-পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবেই পরিগণিত হয়। এজন্য সে সভায় উপস্থিত ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ এই বিষয়ে নীরব থেকে অন্যদের মতামতকে সম্মান জানিয়েছে।
এমফিল ও পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়ে পরবর্তীতে গৃহীত সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একান্ত নিজস্ব। এতে ছাত্রশিবিরের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে হলে আসন বরাদ্দ এবং ডাইনিং পরিচালনা নিয়ে শাখা ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনের বক্তব্যের জবাবে বলা হয়েছে, চবির হল ও ডাইনিং পরিচালনা প্রশাসনের নির্ধারিত নিয়ম ও নীতিমালার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী তারা মেধার ভিত্তিতেই সবগুলো হলে আসন বরাদ্দ দিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রশিবির কোনোভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ বা মতপ্রকাশে বাধা প্রদান করে না। বরং শিবির সর্বদা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত ব্যবস্থাপনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা চবি ছাত্রদল সভাপতির এমন মিথ্যাচার ও অপবাদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
কমিটি নিয়ে চবি ছাত্রদল সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানের বক্তব্যের উত্তরে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অজ্ঞতাবশত অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ভুল তথ্য ছড়িয়েছেন। চবি ছাত্রশিবির প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও প্রত্যেকটি হল ও অনুষদে বছরের শুরুতেই কমিটি নবায়ন করেছে এবং সেটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করা হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিগত ৭ মাস যাবত প্রকাশ্যেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন, কল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অপরদিকে, শাখা ছাত্রদল হল কমিটি দূরে থাক, ২০২৩ সালে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দিলেও লোকবল সংকট বা গুপ্ত রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে অথবা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ সন্ত্রাসী হানিফ ও ইকবাল কর্তৃক ককটেল বিস্ফোরণ এবং দোকান ভাঙচুরের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যেখানে সরাসরি আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয় এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। উক্ত ঘটনাকে মব বলে সন্ত্রাসীদের পক্ষপাতীত্ব করা এবং হামলাকে সহজিকরণ করার হীন চেষ্টার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
গত ৬ আগস্ট জীববিজ্ঞান অনুষদের একটি কক্ষে কিছু শিক্ষার্থীর মাঝে কুরআন বিতরণ করে জীববিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রশিবির। যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে, শ্রেণী কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যেই ছাত্রদের জন্য কল্যাণমূলক এই কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে জলঘোলা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে চবি ছাত্রদলের দেওয়া লিখিত বক্তব্যের ৩ নং পয়েন্টে শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন রনিকে নিয়ে মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছে। বর্ণিত ঘটনার প্রকৃত রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। ৫ আগস্টের পর চবির বন্ধ হল থেকে গার্ডদেরকে ধাক্কা দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দাউদ সালমানকে সনদ এবং অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের হাতে ব্যাগভর্তি নেশাজাতীয় দ্রব্য এবং শটগানসহ হাতেনাতে আটক হয়।
পরবর্তীতে তাকে শটগানসহ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী উপস্থিত সাংবাদিক এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে গুলিসহ সন্ত্রাসী আটক হয়েছে মর্মে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনাকে ভিন্নভাবে বর্ণনা দিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে শাখা ছাত্রশিবির।
বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করে চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, “চবি ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শাখা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের এমন মিথ্যাচার ও অপবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৫ আগস্ট পরবর্তী এ দেশে আমরা এমন অপরাজনীতি আশা করিনি।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী