ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ–আমেরিকান লেখক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিত ওই ব্যক্তির নাম হাদি মাতার (২৭)। তিনি লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। শুক্রবার তাঁকে এ সাজা দেন নিউইয়র্কের একটি আদালত।

২০২২ সালের ১২ আগস্ট নিউইয়র্কে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে সালমান রুশদির ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারী মঞ্চে উঠে রুশদি ও তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া ব্যক্তির ওপর হামলা করেন। রুশদির মুখমণ্ডলে ও ঘাড়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে তিনি এক চোখের দৃষ্টি হারান। তাঁর একটি হাতের কর্মক্ষমতাও চলে যায়।

আরও পড়ুনএক চোখ হারানোর পরও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন রুশদি১৫ এপ্রিল ২০২৪

আদালতের রায়ে বলা হয়, রুশদির ওপর হামলার জন্য হাদি মাতারকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্যক্তির ওপর হামলার জন্য তাঁকে সাত বছর কারাগারে থাকতে হবে। আদালতের বিচারক ডেভিড ফলি সাজা দুটি একসঙ্গে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।

১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ বই লিখে খ্যাতি অর্জন করেন সালমান রুশদি। কিন্তু ১৯৮৮ সালে লেখা চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য তাঁকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। বইটিতে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। এটি প্রকাশের পর থেকে সালমান রুশদি হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন।

আরও পড়ুনকী আছে সালমান রুশদির শেষ উপন্যাসে২৯ আগস্ট ২০২৩

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তাঁর মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুনসালমান রুশদি কি গাজায় গণহত্যাকে ন্যায্যতা দিতে চাইছেন২৮ মে ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জোহরানের জয়ে ক্ষিপ্ত মোদি–ভক্তরা, ‘জিহাদি’ ও ‘ভারতবিরোধী’ আখ্যা

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হলে জোহরান মামদানি হবেন এ শহরের প্রথম দক্ষিণ এশীয় মেয়র। সেই সঙ্গে শহরটির প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়রও হবেন তিনি।

জোহরানের এ পরিচয় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অগ্রণী এক মুখে পরিণত করেছে। তবে এটিই আবার ভারত এবং প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র বিতর্ক ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

গত ২৪ জুন ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী নির্বাচনে (প্রাইমারি) ব্যাপক ব্যবধানে জেতার পর থেকেই জোহরানের প্রচারাভিযান ঘিরে একের পর এক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য আসতে শুরু করেছে। এর একটি অংশ আসছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী মহল থেকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব আক্রমণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থক ও তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচকদের মধ্যে, বিশেষত দেশটিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিনের বৈরিতারই এক প্রতিফলন।

এ আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জোহরানের ধর্মীয় পরিচয়। ৩৩ বছর বয়সী এ রাজনীতিক একজন মুসলিম। অনেকেই তাঁকে ‘জিহাদি’ ও ‘ইসলামপন্থী’ আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, তিনি হিন্দুবিরোধী ও ভারতবিরোধী।

গত ২৪ জুন ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী নির্বাচনে (প্রাইমারি) ব্যাপক ব্যবধানে জেতার পর থেকেই জোহরানের প্রচারাভিযান ঘিরে একের পর এক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য আসতে শুরু করেছে। এর একটি অংশ আসছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী মহল থেকে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট’ (সিএসওএইচ)-এর গবেষণা পরিচালক কায়লা ব্যাসেট মনে করেন, জোহরানকে আক্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কেই নিশানা করা হচ্ছে।
কায়লা বলেন, ‘এটা (হিন্দুত্ববাদীদের জোহরানের সমালোচনা) শুধু একজন ব্যক্তি নিয়ে নয়। এটি একধরনের বর্ণনাকে জোরদার করার চেষ্টা যে—মুসলিম মানেই “সন্দেহের পাত্র” অথবা তাঁরা আমেরিকান হতে পারেন না।’

মোদির দল থেকেই তীব্র সমালোচনা

নিউইয়র্কের ভোটারদের মধ্যে নিজের সমর্থন বাড়াতে কাজ করে চলেছেন জোহরান মামদানি। কিন্তু ওই নেতিবাচক প্রচার তাঁর প্রচারাভিযানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে।

নভেম্বরে জোহরান লড়বেন সুপরিচিত ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের সঙ্গে। ধারণা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত ভোটে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে তাঁর প্রতিপক্ষ সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এখনো স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বাতিল করেননি।

নিজের মুসলিম পরিচয়কে যে সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন মামদানি, সেটাই তাঁকে আজ এগিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মুসলিমবিদ্বেষের আশঙ্কা যেভাবে বাড়ছে, মামদানি ঠিক তার জবাব হতে পারেন।অরবিন্দ রাজাগোপাল, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বরাবরই মুখ খুলেছেন জোহরান মামদানি, তা গাজা হোক বা ভারত—সব জায়গার ব্যাপারেই। জোহরানের এ স্পষ্টবাদী অবস্থানে শুধু তাঁর দেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীরাই নন, বিদেশের অনেকেও সমালোচনা করেছেন।

জোহরানের এসব বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্যরাও, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর মেয়র পদে উপযুক্ততা নিয়েও।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানির রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে কীভাবে দেখব?
  • নরেন্দ্র মোদির সমর্থকদের রোষানলে মামদানি
  • জোহরানের জয়ে ক্ষিপ্ত মোদি–ভক্তরা, ‘জিহাদি’ ও ‘ভারতবিরোধী’ আখ্যা