Prothomalo:
2025-05-17@05:28:55 GMT

মোগল শাসকদের হজের কৌশল

Published: 17th, May 2025 GMT

মোগল শাসকেরা হজযাত্রাকে শুধু ধর্মীয় আচার হিসেবেই নয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করতেন। ষড়যন্ত্রকারী বা অপ্রীতিকর ব্যক্তিদের নির্বাসনের উপায় হিসেবে মক্কায় হজে পাঠানো একটি প্রচলিত প্রথা ছিল। এ প্রথা শুধু ধর্মীয় কারণে নয়; বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

হজে নির্বাসনের রাজনৈতিক কৌশল

মোগল সম্রাটরা প্রায়ই তাঁদের প্রতিপক্ষ বা অবাধ্য সহযোগীদের হজে পাঠিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতেন। উদাহরণস্বরূপ, সম্রাট আকবর ১৫৫৩ সালে বৈরাম খানকে হজে পাঠিয়েছিলেন। কারণ, তাঁর ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও মাতব্বরি আকবরের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। দুর্ভাগ্যবশত, বৈরাম খান সুরাট যাওয়ার পথে আহমেদাবাদে এক আফগানের হাতে নিহত হন। একইভাবে সম্রাট জাহাঙ্গীর ভুল চিকিৎসার জন্য তাঁর হেকিম সাদরাকে মক্কায় পাঠিয়েছিলেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবও একজন কাজিকে বিরক্ত হয়ে পদত্যাগ করতে বলেন এবং তাঁকে হজে পাঠান। এ ঘটনাগুলো দেখায় যে হজে পাঠানো কেবল ধর্মীয় কাজ নয়, একটি রাজনৈতিক শাস্তি বা নির্বাসনের উপায়ও ছিল।

আরও পড়ুন মদিনা যাত্রায় মনের কোণে যত কথা২১ জুন ২০২৪

মক্কা ও মদিনায় মোগলদের অবদান

মোগল সম্রাটরা হজযাত্রার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন এবং মক্কা ও মদিনার প্রতি তাঁদের উদারতা ছিল অসাধারণ। ১৫৭৬ থেকে ১৫৮২ সাল পর্যন্ত সম্রাট আকবরের মীর হাজী প্রতিবছর ছয় লাখ রুপি মক্কা ও মদিনায় খরচ করতেন। এ অর্থ দিয়ে আলখাল্লা বিতরণ করা হতো এবং মক্কার শরিফের জন্য মূল্যবান উপহার পাঠানো হতো। ১৬৫৯ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব সাড়ে ছয় লাখ রুপি মূল্যের উপহার মক্কায় পাঠিয়েছিলেন। এ অবদানগুলো মোগলদের ধর্মীয় উদারতা ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রকাশ করত।

শাসকদের হজে না যাওয়ার কারণ

যদিও মোগল ও উসমানীয় শাসকেরা হাজার হাজার মানুষকে হজে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেরা কখনো হজে যাননি। এর প্রধান কারণ ছিল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত। হজে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় রাজধানী থেকে দূরে থাকতে হতো, যা অভ্যুত্থান বা শত্রুর আক্রমণের ঝুঁকি বাড়াত। ফলে ৩৬ জন উসমানীয় খলিফা ও ১৯ জন মোগল বাদশাহ কেউই হজ করেননি। একই কারণে গুজরাট, বিজাপুর, বেঙ্গল বা হায়দরাবাদের নিজামরাও হজে যাননি।

তবে সম্ভ্রান্ত নারীদের মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ছিল। সম্রাট আকবরের ফুফু ও সম্রাট বাবরের কন্যা গুলবদন বেগম ১৫৭৬ সালে হজ করেছিলেন। এ ছাড়া ভোপালের সিকান্দার বেগম ১৮৬৩ সালে প্রথম সম্রাজ্ঞী হিসেবে হাজি খেতাব পান। তিনি ১ হাজার ৫০০ সঙ্গী-সাথিসহ একটি জাহাজ রিজার্ভ করে মক্কায় যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা কুদসিয়া বেগম। পথে তিনি প্রচুর অর্থ বিলিয়েছিলেন এবং মক্কায় পৌঁছে তাঁদের জন্য ৫০ রকমের রাজকীয় খাবার পাঠানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন বাংলাদেশি হজযাত্রীর ইন্তেকাল হলে কী হয়০১ জুলাই ২০২৪

হজযাত্রার প্রশাসনিক ব্যবস্থা

১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ সরকার হজযাত্রার জন্য টমাস কুক অ্যান্ড সন্সকে এজেন্সি হিসেবে নিযুক্ত করে। এই এজেন্সি রেলপথ, নৌপথ, পাসপোর্ট, টিকেটিং, চিকিৎসাসহ সব দায়িত্ব পালন করত। ১৯২৭ সালে বোম্বের পুলিশ কমিশনার ডি হিলির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি হজ কমিটি গঠিত হয়, যা ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ১৯৫৯ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বিশেষ হজ নোট চালু করে, যার মূল্য ছিল ১০ ও ১০০ রুপি এবং নম্বর শুরু হতো ‘এইচএ’ দিয়ে। পাকিস্তানও ১৯৫০ সালে হজ নোট চালু করেছিল। মগুল লাইন শিপস ১৯২৭ সালে ২০ হাজার হজযাত্রীকে মক্কায় নিয়ে গিয়েছিল।

বোম্বাই হাজি: একটি সামাজিক প্রথা

বাঙালি মুসলমান হজযাত্রীরা দল বেঁধে হেঁটে, গাড়ি বা নৌকায় করে বোম্বে বা করাচি বন্দরে পৌঁছাতেন। জাহাজ প্রথমে করাচি হয়ে মক্কার দিকে যেত, যেখানে আরও যাত্রী উঠতেন। পথে ঝড়ঝঞ্ঝা, অসুস্থতা বা জাহাজ মিস করার কারণে অনেকে বোম্বে বা করাচিতে আটকা পড়তেন। তাঁরা অন্য হজযাত্রীদের ফিরে আসার পর তাঁদের সঙ্গে গ্রামে ফিরতেন এবং তাঁদের ‘বোম্বাই হাজি’ বা ‘পাকিস্তানি হাজি’ বলা হতো। এ প্রথা সামাজিকভাবে উল্লেখযোগ্য হলেও তাঁদের সংখ্যা ছিল কম।

সমুদ্রপথে হজযাত্রার অভিজ্ঞতা

১৯২০ সালে খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ হজে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা হেজাজ ভ্রমণ বইয়ে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি লিখেছেন, করাচি থেকে জাহাজে উঠে তাঁরা প্রচুর খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়েছিলেন। জাহাজের প্রথম শ্রেণির টিকিটের দাম ছিল ৪৫০ টাকা। পথে ঝড়ের কারণে জাহাজের কাচের বাসনপত্র ভেঙে যায় এবং তিনি মৃত্যুর ভয়ে জাহাজের শিকল ধরে প্রার্থনা করেছিলেন।

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম তাঁর সমুদ্রপথে হজ অভিজ্ঞতা লেখায় বর্ণনা করেছেন, অনুকূল আবহাওয়ায় সমুদ্রযাত্রা সুখকর হতো। রাতে উপকূলের আলো দেখে শহর অতিক্রমের বিষয় বোঝা যেত। বঙ্গোপসাগরে সূর্যাস্তের সময় হাঙর, তিমি ও উড়ন্ত মাছের ঝাঁক দেখা যেত, যা ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা। হজ শেষে এ গল্পগুলো হজযাত্রীদের মাসের পর মাস আলোচনার বিষয় হতো।

বিমানযাত্রার সহজলভ্যতার কারণে হজ এখন আর আগের মতো কষ্টসাধ্য বা অনিশ্চিত নয়। হজযাত্রীদের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। তবে সৌদি আরব এখন কোটা আরোপ করে এ সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। মক্কায় পৌঁছানো এখন সহজ হলেও যথাযথভাবে হজ পালন করা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুনএকজন হজযাত্রীর দিনলিপি২৪ জুন ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজয ত র র র জন ত ক কর ছ ল র জন য করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

নায়ক ফারুকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৫ মে)। ২০২৩ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাংলা সিনেমার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের অন্তর্ধান ঘটেছিল সেই দিনে।

চলচ্চিত্রের পর্দায় তিনি ছিলেন এক নিখুঁত অভিনয়শিল্পী—গ্রামীণ, সামাজিক কিংবা রোমান্টিক গল্প—সব ধরনের চরিত্রে তার সাবলীল উপস্থিতি দর্শকমনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। তার অভাব চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখনো গভীরভাবে অনুভূত হয়।

১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকার পুরান শহরে জন্ম ফারুকের। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান। বাবা আজগার হোসেন পাঠানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ফারুক বেড়ে ওঠেন পুরান ঢাকার আবহে। তার অভিনয়ে আগ্রহ তৈরি হয় কাছের মানুষদের উৎসাহে। অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, পরিচালক এইচ আকবর ও এক বন্ধুর সহযোগিতায় ‘ফারুক’ নামে তিনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন।

আরো পড়ুন:

যোদ্ধা বাবার কন্যা হিসেবে গর্বিত আনুশকা

দেশ ভালো নেই, কনসার্ট বাতিল করলেন শ্রেয়া

১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ ছবির মাধ্যমে রুপালি পর্দায় তার অভিষেক। এরপর ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) এবং ‘আলোর মিছিল’ (১৯৭৪) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। কিন্তু দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমার মাধ্যমে। ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সে বছর তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

এরপর একে একে মুক্তি পায় ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমণি’সহ বহু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। ‘মিয়া ভাই’ (১৯৮৭) সিনেমার পর এই নামে তিনি হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্র জগতের সবার প্রিয় মানুষ।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমণি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ প্রভৃতি। তার ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে, যা প্রমাণ করে তিনি ছিলেন দর্শকনন্দিত এক প্রজন্মের প্রতীক।

শুধু অভিনয়েই নয়, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী হিসেবেও তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন এই মহান শিল্পী।

নায়ক ফারুকের স্মৃতি আজও গেঁথে আছে কোটি দর্শকের হৃদয়ে। তার কর্ম, দেশপ্রেম ও শিল্পভিত্তিক সংগ্রাম নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবে বহুদিন।

ঢাকা/রাহাত/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২২৫ রান করেও ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ, সিরিজও
  • ছয় দফার ‘ওয়ান্টেড’ থেকে ‘মিয়াভাই’—ফারুকের জীবনটাই ছিল যেন এক সিনেমা
  • নায়ক ফারুকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
  • আকবরের সেঞ্চুরির পরও হারলো বাংলাদেশ
  • আকবরের সেঞ্চুরি, তবু হেরে গেল বাংলাদেশ