আম-লিচুতে ভরপুর দিনাজপুর, লিচুর রাজ্য বলা হয় এই জেলাকে। জেলার আনাচে-কানাচে গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু ও রসালো বিভিন্ন জাতের লিচু। বাজারে উঠেছে আগাম জাতের সুমিষ্ট মাদ্রাজি জাতের লিচু। সম্প্রতি জিআই পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে এ জেলার বেদানা জাতের লিচু। বেদানা লিচুকে লিচুর রাজা বলা হয়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি গাছে আশানুরূপ লিচু ধরেছে। গাছে প্রতিটি লিচু পাক ধরেছে। বাগান মালিক এবং বাগান ব্যবসায়ীরা লিচু পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাজারে উঠেছে এগুলো আগাম জাতের মাদ্রাজি জাতের লিচু। তবে সপ্তাহের মধ্যে বেদানা লিচুসহ, হাড়িয়া বেদানা, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না–টু, কাঁঠালি এবং মোজাফফরি জাতের লিচু বাজারে উঠবে।
জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে বিক্রি হচ্ছে মাদ্রাজি লিচু। এজাতের লিচু খেতে সুমিষ্ট এবং স্বাদে ভরপুর। ব্যবসায়ীরা এসব লিচু দুই থেকে আড়াই টাকা পিচ বিক্রি করছেন।
মোজাফফর হোসেন বলেন, “বাড়িতে আমার একটা মাদ্রাজি জাতের লিচু গাছ আছে, বয়স প্রায় ২০ বছর হবে। ফল আসা থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর পর্যাপ্ত লিচু ধরে। খেতে খুবি মিষ্টি এবং সুস্বাদু। আমি গাছের লিচু বিক্রি করি না। নিজেরা খাই এবং আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিয়ে থাকি। কয়েক দিন থেকে পরিবারের লোকজন গাছ থেকে লিচু পেড়ে খাওয়া শুরু করেছে।”
হিলি বাজারে লিচু ব্যবসায়ী ওয়াসিম আলী বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে আমরা মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি করছি। অন্যান্য ভাল মানের লিচু বাজারে আসতে এখনও কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা মাদ্রাজি ১০০ লিচু ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি।”
বিরামপুরের লিচু বাগান মালিক সোহরাব হোসেন বলেন, “দুই বিঘা জমির উপর আমার একটা লিচু বাগান রয়েছে। প্রায় ১০০ টি মাদ্রাজি, বোম্বাই, চাইনা থ্রি জাতের লিচু গাছ আছে। প্রতিটি গাছে আশানুরূপ লিচু ধরেছে। কয়েকদিন থেকে মাদ্রাজি জাতের লিচু বাজারজাত করছি। তবে বাকি জাতের লিচু আর কয়েকদিনের মধ্যে পাড়া শুরু করব। এবারও আশা করছি গত বছরের চেয়ে বেশি টাকায় লিচু বিক্রি করব।”
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, “চলতি মৌসুমে জেলায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় লিচু ঝুলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন আগের বছরের তুলনায় অনেক ভাল হয়েছে। এবার ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হবে আশা করছি। যার বাজারমূল্য হবে প্রায় ৭ কোটি টাকা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “গত ৩০ এপ্রিল বেদানা জাতের লিচু আনুষ্ঠানিকভাবে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যার কারণে চাষিদের মধ্যে নতুন উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এখন বেদানা লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।”
ঢাকা/মোসলেম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর আঘাতে ২১ জন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অঙ্গরাজ্যে টর্নেডোর আঘাতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। আরও হয়েছেন আরও অনেকে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেখানে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে মিজৌরি অঙ্গরাজ্যে ৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সেন্ট লুইস শহরে ৫ জন নিহত হয়েছে।
শনিবার ভোরে কেন্টাকির দক্ষিণ-পূর্বে লরেল কাউন্টিতে টর্নেডো আঘাত হানে।
মিজৌরির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার টর্নেডোর আঘাতে ৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার বিকেল পর্যন্ত মিজৌরি ও কেনটাকির প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার স্থাপনা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। সেন্ট লুইসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে।
সেন্ট লুইসের মেয়র কারা স্পেন্সার শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তাঁর এলাকায় অন্তত ৩৮ জন আহত হয়েছেন। বেশিরভাগই ভবন ধ্বস ও গাছ উপড়ে পড়ার কারণে হয়েছে।
কেন্টাকির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানকার অনেকে গুরুতর আহত হয়েছে। লরেল কাউন্টির শেরিফ জন রুট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জীবিতদের সন্ধানে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার কিছু সময় পর সেন্ট লুইস শহরের পশ্চিম অংশে ফোরেস্ট পার্কের কাছে টর্নেডো আঘাত হানে। সেখানে সেন্ট লুইস চিড়িয়াখানা এবং ১৯০৪ সালের অলিম্পিক গেমসের ভেন্যু অবস্থিত।
সেন্ট লুইস ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, কাছাকাছি অবস্থিত গির্জার একটি অংশ ধসে পড়ার পর তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। যাতে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আটকা পড়াদের আহত হওয়া রোধ করা যায় এবং লুটপাটের সম্ভাবনা কমানো যায়।