কোরবানির জন্য আলোচনায় ‘বগুড়ার ডন’, দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ
Published: 17th, May 2025 GMT
বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের দোগাড়িয়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম শিমুল। তার খামারে দুই বছর ধরে বেশ যত্নে লালন-পালন করছেন একটি গরু। নাম ‘বগুড়ার ডন’। নামটি দিয়েছে তার ছোট ছেলে। মালিকের ভাষ্য, গরুটির ওজন প্রায় ১১শ’ কেজি। বিশালাকৃতির পশুটি যে কারও দৃষ্টি কাড়বে।
রবিউল গরুটির দাম হেঁকেছেন ১৫ লাখ টাকা। ক্রেতা সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকা বলেছেন। জেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর হাটে এমন চোখ ধাঁধানো গরুর দেখা মিলছে। তবে আলোচনায় রয়েছে ‘বগুড়ার ডন’। শাহীওয়াল ক্রস জাতের গরুটি শুধু ওজনে বা আকারেই বড় নয়, স্বভাবেও শান্তশিষ্ট।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় এবার সাত লাখ ৪৬ হাজার পশু কোরবারিন জন্য প্রস্তুত রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার পশুর খামারের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর জেলায় গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ পালনের খামার ছিল ৪৮ হাজার। এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজারে। একই সঙ্গে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। এবার সাড়ে সাত লাখ পশু প্রস্তুত আছে।
তরুণ উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম শিমুল জানিয়েছেন, গরুটি বড় করার ক্ষেত্রে মোটাতাজাকরণ ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করেননি। প্রাকৃতিক খাবার—খড়, ধানের গুড়া, ভুষি, ভাত ও পানি খাইয়েছেন। প্রতিদিন গরুটির খাবারের পেছনে খরচ হয় ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা। শান্ত স্বভাবের কারণে গরুটিকে লালন-পালন করাও ছিল সহজ। তার ভাষ্য, ব্যবসার পণ্য মনে করে নয়, নিজের সন্তানের মতো আদরে বড় করেছেন প্রাণিটি।
শিমুলের খামারে আরও ১৪টি দেশি ও শাহীওয়াল জাতের বড় গরু রয়েছে। প্রতিটির জন্যই রয়েছে আলাদা যত্ন ও পরিচর্যার ব্যবস্থা। তবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে ডন। এ খামারির ভাষ্য, তিনি দুই বছর আগে রাজশাহী থেকে আড়াই লাখ টাকায় গরুটি কেনেন। তখন থেকেই প্রাকৃতিক খাবারে বড় করার পরিকল্পনা করেন, যাতে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়। এখন তাকে দেখে সবাই মুগ্ধ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্ত ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক ঘণ্টার নাগরিক সনদ পেতে লাগছে এক সপ্তাহ
‘ভোটার হওয়ার আবেদনে মহিলা মেম্বারের একটি স্বাক্ষরের জন্য গত দেড় মাসে চারবার ইউনিয়ন পরিষদে এসেছি। গত ৭ মে পর্যন্ত মেম্বারকে খুঁজে পাইনি। ওয়ারিশ সনদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও বেশি।’ কথাগুলো বললেন মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মাজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নাজনীন মুনতাহার শিমলা। জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে জন্মসনদ, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সনদের মতো সেবা পেতে মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তির পাশাপাশি খরচ করতে হচ্ছে বাড়তি টাকাও। আগে যেখানে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টায় একটি নাগরিক সনদ পাওয়া যেত, এখন প্রশাসনিক জটিলতায় এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগছে।
এদিকে, উপজেলার দুটি পৌরসভাসহ ১৬ ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের বিচারকাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে এ অবস্থা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যদের দিয়ে গ্রাম আদালত সচল করার চেষ্টা করলেও সুফল মিলছে না। এতে বিচারপ্রার্থীরা থানা পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ফলে থানায় বাড়ছে অভিযোগ ও মামলার সংখ্যা। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ করা হলে এ ভোগান্তি কমত।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, ‘পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় গ্রাম আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ছোট-বড় সব ধরনের অভিযোগ নিয়ে মানুষ থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ছুটে আসছেন। থানায় আগে যেখানে দিনে দুয়েকটি অভিযোগ আসত, এখন সেখানে ৭-৮টি আসে। প্রায় অভিযোগ পারিবারিক, জায়গা-জমি সংক্রান্ত ও বিবাহবিচ্ছেদের। আমরা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে নিষ্পত্তি করে দেওয়ার চেষ্টা করি।’
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর উপজেলার দুটি পৌর সভার মেয়র ও ১৬ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে চলে যান। এদের মধ্যে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ও মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম গ্রেপ্তার হন। চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের (পুরুষ) অধিকাংশ আত্মগোপনে। দুয়েকজন এলাকায় থেকে জন্মসনদ ও ওয়ারিশ সনদের আবেদনে সুপারিশ করলেও তারা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না। মহিলা সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদের গেলেও তাদের গ্রাম আদালত পরিচালনা করার ক্ষমতা নেই। ফলে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সমাধান হওয়া ছোটখাট সমস্যা নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়ছেন। এখন বেশিরভাগ অভিযোগ জমা হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে অথবা থানায়। ওতে ভুক্তভোগীরা বিচার পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলার খইয়াছড়া, ওয়াহেদপুর, হাইতাকান্দিসহ একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা ঘুরে সেবা গ্রহীতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিষদে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দীর্ঘসময় অনুপস্থিতির কারণে নাগরিক সেবা ও গ্রাম আদালতের সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন না। সেবাগ্রহীতারা জানান, একটি নাগরিক সনদ নিতে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের ফরমে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করতে হয়। এরপর পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবেদনটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন নিয়ে সনদ প্রস্তুত করে আবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে পাঠান। সেখানে স্বাক্ষর হলে মেলে নাগরিক সনদ। আগে যেখানে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টায় একটি নাগরিক সনদ পাওয়া যেত এখন সেখানে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগছে।
ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের আবুল কালাম জানান, একটি ওয়ারিশ সনদের জন্য তাকে তিনবার আবেদন করতে হয়েছে। প্রতিবারই কোন না কোন সমস্যা দেখিয়ে আবেদন ফেরত দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০০ টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদন করেছেন। এরপরও ১০০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্প, স্ট্যাম্পে লেখানো ফি দিতে হয়েছে প্রায় ৬০০ টাকা। পরিষদ থেকে ফাইল প্রস্তুত করে দেওয়ার পর সে ফাইল নিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্বাক্ষর লাগে। আবার পরিষদে ফাইল জমা দিতে হয়েছে। এসব করতে প্রায় দুই মাস পার জলেও সনদ মেলেনি। দিলিপ শর্মা জানান, নাগরিক সনদের জন্য আবেদন করে ১০দিন পরও সেটি হাতে পাননি।
খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গ্রাম আদালতের কাজ বন্ধ রয়েছে। এলাকার মানুষও কোন অভিযোগ দায়ের করতে পরিষদে আসছেন না। গত ৯ মাসে পরিষদে কোন মামলা হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য মহিলা মেম্বারদের ক্ষমতা দেয়া হলেও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতায় বিচারকাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’ অন্য নাগরিক সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আবেদনের সাথে সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে নাগরিক সনদ পেতে এক সপ্তাহ ও ওয়ারিশ সনদ পেতে কমপক্ষে ১৫-২০দিন সময় লাগে।’
ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিল্পব ভট্টাচায্য জানান, আগে গ্রাম আদালতে সপ্তাহে ৪-৫টি মামলা ও অভিযোগ পাওয়া যেত। কিছু অভিযোগ সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসা করা হতো। আর মামলাগুলো গ্রাম্য আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা হতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর পরিষদে তেমন কোন অভিযোগ আসেনি। আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের প্রধান। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে গ্রাম আদালত পরিচালনা সম্ভব নয়।’
হাইতকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্রমাসনিক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘গত এপ্রিলে ৫টি ও মার্চে ৩টি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো মহিলা মেম্বারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে গ্রাম আদালতের বিচারিক কাজ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে মহিলা মেম্বারদের দিয়ে গ্রাম্য আদালত পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তা সম্ভব হচ্ছে না।’
উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় গ্রাম আদালতের বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ছোটখাট বিরোধেও মানুষ থানা–পুলিশ করছেন। তবে গ্রাম্য আদালত সচল করতে মহিলা মেম্বারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমে বিচারিক কাজ চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে নাগরিক সেবা সংক্রান্ত ফাইল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসার একদিনের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়।’