চিত্তরঞ্জনকে হত্যার ঘটনায় মামলা, প্রেমিকার বাবা-মা ও ভাবি গ্রেপ্তার
Published: 17th, May 2025 GMT
রাজশাহীর তানোরের কলেজছাত্র চিত্তরঞ্জন পাল (২৬) হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় তার প্রেমিকার বাবা, মা ও ভাবিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (১৮ মে) তাদের আদালতে তোলা হবে।
নিহত চিত্তরঞ্জনের বাড়ি উপজেলার হাবিবনগর পালপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মনোরঞ্জন পাল। একমাত্র ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তিনি তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। প্রেমঘটিত কারণে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার দাবি।
আরো পড়ুন: তানোরে যুবকের বস্তাবন্দী হাড়গোড় উদ্ধার
আরো পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিয়ের আট দিনের মাথায় যুবক খুন, স্ত্রী আটক
নিখোঁজের ২০ দিন পর শনিবার (১৭ মে) সকালে হাবিবনগর এলাকার শিব নদের কচুরিপানার ভেতর চিত্তরঞ্জনের বস্তাবন্দী গলিত মরদেহ পাওয়া যায়। পরনে থাকা লুঙ্গি ও গেঞ্জি দেখে পরিবার তার মরদেহ শনাক্ত করে। এ ঘটনায় চিত্তরঞ্জনের বাবা মনোরঞ্জন পাল ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- একই গ্রামের স্বপন চন্দ্র পাল (৫৮), তার স্ত্রী ছবি রানী (৫০) এবং কাজলী রানী পাল (৩০)। মামলার অন্য তিন আসামি স্বপনের ছেলে সুবোদ পাল (৩০), মেয়ে কুমারী কামনা পাল (২৩) ও জেলার মোহনপুর উপজেলার পেয়ারপুর গ্রামের মো.
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে কলেজছাত্রী কামনা পালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উভয় পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে মনোরঞ্জন তার ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্বপন পালের বাড়ি যান। তারা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। কামনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে চিত্তরঞ্জনকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।
এরপরও তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলতেই থাকে। কামনা নিয়মিত চিঠিও লিখতেন। গত ২৬ এপ্রিল রাতের খাবার খেয়ে মনোরঞ্জনের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৪টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনোরঞ্জনের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তিনি দেখেন, চিত্তরঞ্জনের ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে কেউ নেই। তারপর থেকে চিত্তরঞ্জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত ২৭ এপ্রিল থেকে কামনা ও তার ভাই সুবোদকেও এলাকায় দেখা যায়নি। মনোরঞ্জন ছেলের ব্যাপারে স্বপন চন্দ্র পালের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। স্বপন তাকে এলোমেলো জবাব দেন এবং ধমক দেন। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে মনোরঞ্জন তানোর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এজাহারে বলা হয়, মামলার আসামিরা চিত্তরঞ্জনকে কৌশলে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে শিব নদে ফেলে দেন। শনিবার সকালে শিব নদে বস্তাবন্দী গলিত এই লাশ পাওয়া যায়। পরনের গেঞ্জি ও লুঙ্গি দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন মনোরঞ্জন।
তানোর থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, “প্রেমঘটিত কারণেই চিত্তরঞ্জনকে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
তিনি আরো বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতদের রবিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলার অন্য তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য জন র ব হত য র স বপন
এছাড়াও পড়ুন:
সাঁকো মাড়িয়ে চলে লাখো মানুষ
রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগরকে দুই ভাগ করে বয়ে গেছে রামপুরা খাল। সময়ের সঙ্গে খালটির দুই পাশে নগরজীবনের বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু নির্বিঘ্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন চারটি বাঁশের সাঁকো।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে চারটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এসব সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ দুই পাশে যাতায়াত করে। বনশ্রী ও আফতাবনগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অনেক শিক্ষার্থী এই সাঁকো ব্যবহার করেন।
আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দা যদি বনশ্রী আসতে চান, তাহলে তাঁকে রামপুরা সেতু ঘুরে আসতে হয়। এতে অন্তত চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। জাহিদুজ্জামান, বনশ্রীর বাসিন্দাস্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনশ্রী ও আফতাবনগরে ছোট–বড়ো মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ২০টি ছোট–বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। বনশ্রীতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থাকায় আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এপারে আসতে হয়।
এদিকে, সাঁকোগুলো নড়বড়ে হওয়ায় প্রায়ই ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। সঙ্গে কিছুদিন পরপর সাঁকো মেরামতের কাজ হলে কিংবা ঝড়বৃষ্টিতে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতে নেমে আসে অসহনীয় ভোগান্তি। যদিও দেড় দশক ধরে এসব সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিটি করপোরেশন কিংবা সরকারের অন্য কোনো পক্ষ থেকে এর আগে কখনো সাঁকোগুলো মেরামত বা নির্মাণের কাজ হয়নি। সাঁকো ভেঙে গেলে বা মেরামতের প্রয়োজন হলে তা আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির উদ্যোগে করা হয়।
একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আফতাবনগরের বাসিন্দারা কেউ গাড়ি বা রিকশা নিয়ে বনশ্রীর দিকে যেতে চাইলে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকোতে মানুষ হাঁটলেও সেটি নড়তে থাকে। বেশি আতঙ্কে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। যদিও বাসিন্দারা দেড় দশক ধরে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বনশ্রীর ইনটেলিজেন্টসিয়া স্কুলের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রতিদিন আফতাবনগর থেকে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে এই ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে আসেন।
যাতায়াতে দুর্ভোগের কথা জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি। যাতায়াত সবচেয়ে কঠিন হয় যখন বৃষ্টি হয় কিংবা সাঁকোগুলো ভেঙে যায়। খালের ওপর কয়েকটি কাঠের নৌকা পরপর লাগিয়ে মানুষ পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। তখন এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পাঁচ টাকা করে দিতে হয়।
মঙ্গলবার বনশ্রী জি ব্লকের সামনের বাঁশের সাঁকো পার হওয়ার সময় কথা হয় আফতাবনগরের আরেক বাসিন্দা দিপা রানীর সঙ্গে। তিন বছর ধরে তিনি আফতাবনগর থেকে এই পথে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন।
দিপা রানী বলেন, ‘সাঁকো অনেকটা নড়বড়ে। কিন্তু কিছু করার নেই। বাচ্চার স্কুলের জন্য প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। কিছুদিন পরপর যখন সাঁকো মেরামতের কাজ করা হয়, তখন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ি। তার ওপর শীত মৌসুমে খালে পানি কম থাকলে উৎকট গন্ধে ভোগান্তি আরও বাড়ে।’
বনশ্রীর বাসিন্দা জাহিদুজ্জামান বললেন, আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দা যদি বনশ্রী আসতে চান, তাহলে তাঁকে রামপুরা সেতু ঘুরে আসতে হয়। এতে অন্তত চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। তবে বিড়ম্বনার বিষয় হলো, বনশ্রীর কোনো বাসিন্দা যদি আফতাবনগরে যেতে চান, তাহলে বাড্ডা ইউলোপ ঘুরে আসতে হয়। এতে দূরত্ব দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির সহসভাপতি হাশেম ভুঁইয়া জানান, এই ভোগান্তি লাঘবের জন্য তাঁরা বিভিন্ন সময় সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে শিগগিরই এই এলাকায় বাঁশের সাঁকোর স্থলে একাধিক পাকা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে কয়েক মাসের মধ্যে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা।
একই রকম কথা বললেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের কষ্ট দূর করতে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হবে সেতু। যেগুলোয় গাড়ি চলাচলের পাশাপাশি ফুটপাতে মানুষ হাঁটতে পারবে। একটি ফুটওভার ব্রিজও (পদচারী সেতু) হবে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা।