বাংলাদেশের পেস বোলিং নিয়ে অহংকারের যে জায়গা তৈরি হয়েছিল তা ভেঙে গিয়েছিল আরব আমিরাত ও পাকিস্তানে টি২০ সিরিজ হার। উভয় সিরিজে বোলিং ইউনিটে একটা বড় শূন্যতা চোখে পড়ে। সেই শূন্যতা ছিল পেসার তাসকিন আহমেদের না থাকা। গোড়ালির চোটের কারণে ৩০ বছর বয়সী এ পেসারের অনুপস্থিতি নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্টের ভুল ধারণা ভাঙতে সহায়তা করে। এ কারণে নির্বাচক প্যানেল খুব করে চাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা সফরে সাদা বলের ক্রিকেট খেলেন তাসকিন। লম্বা সময় গোড়ালির চোট পরিচর্যা করে চট্টগ্রামে প্র্যাকটিস ম্যাচে লম্বা স্পেলে বোলিং করে ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত করেন ডান হাতি এ পেসার। ফেরার ম্যাচে মঞ্চায়ন করলেন রোমাঞ্চকর বোলিং। ১০ ওভার, দুটি মেইডেন, ৩৭টি ডট, ৪ উইকেট ও ৪.

৭০ ইকোমি রাজকীয় না হলেও দুর্দান্ত বলার মতো একটি বোলিং পারফরম্যান্স। 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচের বোলিং ইউনিটের শুরু ও শেষ ভালো হওয়ার কারণ পেস বোলিং। এই দুই সময়েই ছিলেন তাসকিন আর তানজিম হাসান সাকিব। বোলিংয়ের ওপেনিং জুটি তারা। পাওয়ার প্লে ও স্লগ বোলিংয়ের বিশ্বস্ত জুটি। যেখানে তাসকিনের ভূমিকা ছিল উজ্জীবিত করা। প্রতিপক্ষ শিবিরে প্রথম আঘাত সাকিবের হলেও টানা দুই ওভারে নিশান মাদুশঙ্কা ও কামিন্দু মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে দলকে উজ্জীতি করেন তাসকিন। তাসকিন-সাকিবের কল্যাণে ৬.১ ওভারে ২৯ রানে তিন উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা কিছুটা চাপে পড়ে। এই চাপ তৈরির কারিগর তাসকিন নিজের নবম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করে জানান দেন তিনিই পেস ইউনিটের সেরা। 
এই সেরার স্বীকৃতি বিশ্বের অনেক তারকা বোলারের কাছ থেকে পেলেও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রশংসায় আনন্দস্রোতে ভেসেছেন তিনি। আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে টি২০ সিরিজে বাজে হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুজন বলেছিলেন, ‘বলা হচ্ছিল পেস ইউনিটে অনেক বিকল্প আছে। রিজার্ভ বেঞ্চও শক্তিশালী হয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো তাসকিনের থাকা না থাকা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাসকিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোলার। ও না খেললে পেস বোলিং ইউনিট হিসেবে ভালো করতে পারে না।’ সুজনের কথার প্রমাণ গতকালই পাওয়া গেছে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। 

গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়া অনেক দিন ধরে ভোগাচ্ছে তাসকিনকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর সেভাবে ম্যাচ খেলতে পারেননি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে রাজি হননি গোড়ালির ব্যথা বেড়ে যাওয়ায়। ব্যথায় ভুগতে থাকা টাইগার এ পেসারকে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেওয়া পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটু একটু করে নিজেকে খেলার জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি। এই কলম্বোতেও ফিজিও, ট্রেনার, নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের সামনে পুরো লেন্থে জোরে বোলিং করে একাদশে থাকা নিশ্চিত করেন মঙ্গলবার। 

গতকাল ম্যাচে পুরো ছন্দে বোলিং করতে না পারলেও মুস্তাফিজুর রহমান বা বাঁ হাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের মতো হাল ছাড়েননি তিনি। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা দলের সফল ও সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন। ফিল্ডিংয়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে, বোলিং রানআপে কিছুটা গতি কমিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বোলিং করতে পারাও বুদ্ধিমত্তা। ছয়-সাত বছর যাকে স্যালাইন বোলার হিসেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হতো, কালের পরিক্রমায় চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন দেশসেরা পেসার হিসেবে। প্রচণ্ড নিবেদন, গভীর একাগ্রতা ও লক্ষ্যে অবিচল না থাকলে গোড়ালির জড়তা নিয়ে এভাবে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হতো না তাসকিনের। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

জোটার মৃত্যুতে স্তব্ধ রোনালদো, শোক জানালেন জামাল ভূঁইয়াও

মাত্র কিছুদিন আগেই জাতীয় দলের হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলেছেন। নেশন্স লিগ জয়ের উল্লাসে মাতিয়েছেন গোটা দেশ। অথচ আজ সেই সতীর্থ ডিয়োগো জোটা আর নেই। এই খবর কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

বৃহস্পতিবার স্পেনের জামোরা প্রদেশে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল এবং পর্তুগাল জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড ডিয়োগো জোটা। দুর্ঘটনায় তার ভাই আন্দ্রে সিলভাও নিহত হয়েছেন, যিনি পর্তুগালের ক্লাব পেনাফিয়েলের হয়ে খেলতেন।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’র বরাতে জানা গেছে, জামোরা প্রদেশের সানাব্রিয়া অঞ্চলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ও তিন সন্তানের জননী রুতে কারদোসোকে বিয়ে করেছিলেন জোটা। পরিবারের সঙ্গে নতুন জীবনের শুরু উদ্‌যাপন করতে গিয়েই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বিয়ের ছবি পোস্ট করেছিলেন জোটা ২৮ জুন, আর স্ত্রী রুতে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন বুধবার। এর পরপরই এলো জোতার মৃত্যুসংবাদ।

জোটার মৃত্যুতে শোকাহত রোনালদো সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এর কোনো মানে হয় না। এতদিন একসঙ্গে ছিলাম জাতীয় দলে, এই তো মাত্র তোমার বিয়ে হলো। তোমার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা। আমি জানি তুমি সবসময় তাদের সঙ্গে থাকবে। শান্তিতে ঘুমাও, ডিয়োগো এবং আন্দ্রে, আমরা সবাই তোমাদের খুব মিস করবো।’

শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘শান্তিতে থেকো দিয়োগো জোতা (১৯৯৬-২০২৫)। কদিন আগেই সে লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে, আবার পর্তুগালের হয়ে জিতেছে নেশন্স লিগ। ভাইসহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে। খুব দুঃখজনক ঘটনা।’

রোনালদো ও জামালের মতোই স্তব্ধ বিশ্ব ফুটবল। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা এক প্রতিভাবান ফুটবলারের এমন প্রস্থান বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই শোকের ছায়া নামিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ