চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীকে অব্যাহতি, অভিযোগ প্রমাণে আলটিমেটাম
Published: 17th, May 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে এই নেত্রী তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দুই ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণ করার জন্য সংগঠটিকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। না হলে সংগঠনটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দীন ও সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফাতেমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ফাতেমা খানম লিজার মাদক সেবন এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ছবি/ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় ১ হাজার ৪০০ শহীদ ও অর্ধলক্ষ আহত ব্যক্তির ওপর দাঁড়ানো এই প্ল্যাটফর্মের কোনো সদস্যের এমন অনিয়ন্ত্রিত ও অসামাজিক কার্যকলাপ জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে। তাই তাঁকে পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করা হলো।’
এদিকে এ ঘটনায় ভিডিও বার্তায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফাতেমা খানম। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম মহানগর (মিডিয়া)’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ৪৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা দেন। এতে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ দিতে সংগঠনকে দুই ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে আমার মাদক সেবনের কোনো প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব এবং দ্বিতীয়ত হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবন নিয়ে। এটা সম্পূর্ণ বেইসলেস (ভিত্তিহীন) একটা ইস্যু।’
সংগঠনে পাল্টাপাল্টি অবস্থানশনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফাতেমা খানমসহ আরও দুজনকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সদস্যসচিব আবুল বাছির নাঈম ও সংগঠক শাহরিয়ার সিকদার। তাঁদের মধ্যে আবুল বাছিরকে বন্দর থানায় ব্যবসায়ীকে হেনস্তা করে চাঁদাবাজির অভিযোগে আর শাহরিয়ারকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ডবলমুরিং থানায় আটক হওয়ার ঘটনায়।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–চট্টগ্রাম’ নামের ওই ফেসবুক পেজ থেকেই তিনজনের বহিষ্কারের চিঠি পোস্ট করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের একক সিদ্ধান্তে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে একই পেজ থেকে পোস্ট করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম মহানগর এর সদস্যবৃন্দ’।
ওই পোস্টে বলা হয়, সম্প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে যেসব অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের একক সিদ্ধান্তে গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে সংগঠনের অন্য সদস্যদের কোনো প্রকার মতামত বা পরামর্শ নেওয়া হয়নি এবং অব্যাহতির পেছনে কোনো যথাযথ প্রমাণ বা যুক্তিও উপস্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অভিযোগে তিনজনকে বহিষ্কার করেছি। আমাদের নামে অনেক পেজ চালানো হয় ফেসবুকে। আমাদের স্বাক্ষর দেওয়া চিঠিগুলোই আসল। বাকি বিষয়গুলো আমাদের না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব সদস য স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্য হত্যা: ঢাবি ভিসির বাসভবনের সামনে ছাত্রদলের অবস্থান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার ঘটনায় উপাচার্যের বাসভনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাবি শাখা ছাত্রদলের এ নেতার হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় সংগঠনটি।
পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও সংগঠনটির মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা 'আমাদের অঙ্গীকার, নিরাপদ ক্যম্পাস', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে', 'ফাঁসি ফাঁসি চাই, হত্যাকারীর ফাঁসি চাই', 'খুন হয়েছে আমার ভাই, খুনি তোদের রক্ষা নাই', 'সাম্য ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেত দেব না', 'ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে'সহ নানা স্লোগান দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, “আমরা দেখেছি, আমাদের ছোট ভাই সাম্যকে কীভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়, তা আমাদের প্রশ্ন।”
তিনি বলেন, “আমরা ভিসিকে কয়েকবার ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার জন্য স্বারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। ক্যাম্পাসে ৫ আগস্টের আগের কয়েক বছরে একটিও খুনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ৯ মাসে কীভাবে দুটি হত্যা হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া আজকের মধ্যে প্রক্টরকে আর তার পদে দেখতে চাই না। সেই সঙ্গে ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি।”
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এখনও খুনি হাসিনার দোসররা অবস্থান করছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছিলাম, আপনারা ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেন। কিন্তু তারা করেনি। তারই ফল, আমার ভাই সাম্য হত্যা।”
তিনি বলেন, “যারা ৯ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস করতে পারেননি, তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।”
গত ১৩ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।
গতকাল ১৪ মে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা/সৌরভ/ইভা