ফতুল্লায় নির্মাণাধীন সাতটি ভবনে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান
Published: 18th, May 2025 GMT
ফতুল্লায় ইমারত আইন লংঘন করে নির্মাণাধীন সাতটি ভবনে অভিযান চালিয়ে নকশা বহির্ভূত স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়েছে রাজধানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একই সাথে ভবনগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিদ্যুতের মিটার জব্দ সহ একটি ভবনের মালিককে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শান্তা রহমানের নেতৃত্বে রবিবার (১৮ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত
ফতুল্লার ইসদাইর, মাসদাইর ও জামতলা মসজিদ রোড এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
এসময় রাজউকের অনুমোদিত নকশাবিহীন ও নকশার ব্যত্তয় ঘটিয়ে নির্মাণ কাজ করায় কয়েকটি বহুতল ভবন সহ সাতটি নির্মাণাধীন ভবনের নির্মান কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। একই সাথে ভবনগুলোর নকশা বহির্ভুত বর্ধিত স্থাপনা ভেঙ্গে অপসারণ সহ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার জব্দ করে রাজউক কর্তৃপক্ষ।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শান্তা রহমান বলেন, "আজকে আমরা তিনটি এলাকায় সাতটি নির্মাণাধীন ভবনে অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন রয়েছে। ভবনগুলোর নির্মাণ কাজে রাজউকের নকশা ছাড়া ও নকশার ব্যত্তয় ঘটানো সহ বেশ কিছু অনিয়ম আমাদের কাছে ধরা পড়েছে। তাই আমরা আপাতত ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
এছাড়া নকশা বহির্ভুত স্থাপনা অপসারণ সহ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিদ্যুতের মিটার জব্দ করেছি। একটি ভবন মালিককে পঞ্চাশ হাজার টাকাও জরিমানা করেছি"।
অনুমোদন ও নকশা বহির্ভূতভাবে নির্মাণাধীন সব ভবনের বিরুদ্ধে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শান্তা রহমান।
আইন শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় পরিচালিত এই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের জোন-৮/১ এর পদ শূন্যকালীন প্রতিকল্প অথরাইজড অফিসার এফ.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ভবনগ ল র র জউক র ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
উন্নয়ন প্রকল্প যেন অপচয়ের প্রতীক না হয়
উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু এ লক্ষ্য ছাপিয়ে কেবল দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণেই যখন প্রকল্প সীমাবদ্ধ থাকে, তখন তা উন্নয়ন নয়—একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও সম্পদের অপচয়ের নিদর্শনে পরিণত হয়। জামালপুর, রংপুর ও গোপালগঞ্জে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমির বর্তমান অবস্থা দেখে সেটিই স্পষ্ট হচ্ছে।
জামালপুরের মেলান্দহে ৫০ একর জমিতে নির্মিত ১৮টি ভবনের একটিও এখনো ব্যবহারে আসেনি। ভবনগুলোয় বাসা বেঁধেছে মাকড়সা, চত্বরজুড়ে ঝোপঝাড়, যন্ত্রপাতিতে জমেছে ধুলাবালু। রংপুরের তারাগঞ্জে নির্মিত ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন, গেস্টহাউস, মেডিকেল সেন্টার, লাইব্রেরি, কোয়ার্টার, হোস্টেলসহ সব ভবনই পড়ে আছে জনবল ও কার্যক্রমহীন। এসব ভবনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো যন্ত্রপাতি ও আসবাব অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। গোপালগঞ্জে সীমিত পরিসরে কিছু প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চললেও প্রকল্প শুরুর আগে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি।
সরকারি নীতিনির্ধারকেরা স্বীকার করেছেন, জনবল নিয়োগ না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এই প্রশাসনিক দৈন্য কেবল একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠান নয়; পুরো ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ পরিস্থিতি শুধু অর্থনৈতিক অপচয় নয়; এটি পরিকল্পনাবিদ, নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার নিদর্শনও বটে।
এ প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে রূপান্তর করা। কিন্তু যেখানে জনবল নিয়োগই হয়নি, সেখানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কীভাবে চলবে? জামালপুরে অনুমোদিত ১১০টি পদের একটিতেও নিয়োগ নেই মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ ছাড়া। রংপুরে ডিজি ও উপপরিচালক ছাড়া কারও নিয়োগ হয়নি। গোপালগঞ্জেও জনবলসংকট প্রকট।
এখানে প্রশ্ন ওঠে—এই প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা ও অনুমোদনের সময় কী পরিমাণ ভাবনাচিন্তা করা হয়েছিল? একটি প্রকল্প শুরু করার আগে এলাকাভিত্তিক চাহিদা, সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী ও বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই না করে শুধু নির্মাণকাজ শুরু করা হয় কেন—এ প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই দিতে হবে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন পর্যন্ত বলছে, এত একাডেমির প্রয়োজনই নেই। বরং খালি পড়ে থাকা ভবনগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য, কারিগরি শিক্ষা বা দক্ষতা প্রশিক্ষণ খাতে ব্যবহারের জন্য ইজারা দেওয়া যেতে পারে।
আমাদের দাবি, অবিলম্বে এসব প্রকল্প নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা হোক। যাঁরা এসব প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়নে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। ভবন নির্মাণের পেছনে কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ বা এলাকার নামে বরাদ্দ নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। উন্নয়ন মানে শুধু দালান নয়, মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন—এই বোধ না ফিরলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কেবল অপচয়ের প্রতীক হয়েই থেকে যাবে।