দুই কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
Published: 18th, May 2025 GMT
সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (সিএসআর) মাধ্যমে গত ৫ বছরে দেশের ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ বা এসসিবি। ব্যাংকটি সিএসআর কার্যক্রমকে টাকার অঙ্কে আটকে না রেখে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে বিনিয়োগ করেছে। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য ছিল মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করা, কৃষি খাতকে শক্তিশালী করা, শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো, তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তোলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
আজ রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির এসব কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) কর্ণধারেরাও। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এমন সিএসআর প্রকল্পে ব্যাংকটি গত ৫ বছরে ৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
অনুষ্ঠানে এসসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘আমরা শুধু সহায়তার জন্য নয়, বাস্তব পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জীবনে টেকসই পরিবর্তন আনা, যাতে মানুষের জীবিকা ও জীবনমানের উন্নতি হয়। আমরা সংখ্যার চেয়ে প্রভাবকে বেশি গুরুত্ব দিই। তাই এমন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করি, যারা আমাদের দর্শনের সঙ্গে মিল রেখে মানুষের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন আনার সক্ষমতা রাখে।’
নাসের এজাজ বিজয় আরও বলেন, ‘একটি বিদেশি ব্যাংক হিসেবে দেশে আমাদের নেটওয়ার্ক সীমিত। এ কারণেই আমরা শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য এনজিও পার্টনারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করি।’
অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের বেশ কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়। এ সময় বলা হয়, যশোরে সংগঠিত ফুল চাষের মাধ্যমে কৃষকের গড় মাসিক আয় দুই হাজার থেকে বেড়ে পাঁচ হাজার টাকা হয়েছে। এনজিও কেএমএসএস এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। হাওর অঞ্চলের কৃষকদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্র্যাকের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী দেড় হাজার কৃষকের মধ্যে ৮০ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের খাদ্যের প্রাপ্যতা বেড়েছে এবং বছরের সব সময় আয় হচ্ছে। নিরাপদে মধু সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং আর্থিক পরিকল্পনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ায় প্রত্যেক মৌচাষির বার্ষিক আয় ২৫ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে। স্মার্ট কৃষি গ্রাম উদ্যোগে ১ হাজার ৪৫০ কৃষকের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি কৃষক উৎপাদন বৃদ্ধি ও খরচ কমানোর কথা জানিয়েছেন। চরাঞ্চলের তিন হাজারের বেশি পরিবার হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে আয়ের উন্নতি করেছে। বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। মেশিন চালনা, সেলাই কাজ, মোবাইল সার্ভিসিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্নাতকদের গড় মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার বেশি হয়েছে। ইউসেপ বাংলাদেশ গাজীপুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
অনুষ্ঠানে ইউসেপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো.
বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, অনেকেই সিএসআর করে, কিন্তু এত প্রভাব কেউ ফেলতে পারে না। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড শুধু ব্যাংক নয়, মানবিক দাতা সংস্থা হয়ে উঠেছে।
ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে আমাদের সঙ্গে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এখন নতুন করে আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর বিনা মূল্যে চোখ পরীক্ষা করা হচ্ছে, প্রয়োজনে চশমা ও অপারেশন করা হচ্ছে।’
ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান বলেন, ‘মানুষ যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, এমন কার্যক্রমের সঙ্গে আমরা যুক্ত। চরে আমরা সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি, যা পুরো চরের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান বিটপি দাস চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্প পরিকল্পনার সময় আমরা বলে দিই, কত শতাংশ নারী থাকবে, কত শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকবে। সহযোগীরাও সেভাবেই তালিকা ঠিক করে। আমরা প্রত্যেক সুবিধাভোগীর পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করি। প্রকল্প শেষ হলে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন স এসআর আম দ র ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করবে ‘কুইক রেসপন্স টিম’: শারমীন এস মুরশিদ
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারী নির্যাতনের প্রতিকার ও প্রতিরোধে কাজ করবে ‘কুইক রেসপন্স টিম’। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে সম্প্রতি নারীর ওপর যে বর্বর নির্যাতন ঘটে গেল, এ সহিংসতা প্রতিরোধে মুরাদনগর থেকে এর যাত্রা শুরু হলো আজ (বুধবার)। এই উদ্যোগ সারা দেশে অব্যাহত থাকবে।
বুধবার মুরাদনগর উপজেলা কার্যালয় অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সম্প্রতি মুরাদনগরে নারীর প্রতি সংঘটিত ঘটনাবলি নিয়ে মুরাদনগর উপজেলার কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সঙ্গে এ মতবিনিময় হয়। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানায়।
নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন মানবাধিকারের লঙ্ঘন উল্লেখ করে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ আমাদের মধ্যে না থাকায় ছেলেদের দ্বারা মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। এই নির্যাতনের মাত্রা ভয়ংকর। আমাদের শিশুরা নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হচ্ছে এবং আশ্রয়হীন ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে।’
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, দেশে নারী ও শিশুর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও এ ধরনের অপরাধ প্রত্যাশিত মাত্রায় কমছে না। নারী ও শিশুর প্রতি পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, জনসমাগম স্থলে, অনলাইনসহ নানাভাবে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও অপরাধ নিরসন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মসহ সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের ১৪ ধারা এবং হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভুক্তভোগীকে খারাপভাবে চিত্রিত করে প্রচার করা আইনবিরোধী কাজ। এদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে অপরাধী, তার ছবি প্রকাশ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
এর আগে মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করেন উপদেষ্টা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়।