২০২৫ সালটা ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে একটু ভিন্নভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বেশ কয়েকটি দেশে উত্থান হয়েছে নতুন নতুন ফুটবল শক্তির, যারা শিরোপার স্বাদ নিয়ে ইতিহাস গড়েছে।

এর মধ্যে গত শনিবার ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে এফএ কাপ জিতে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো বড় শিরোপার দেখা পেয়েছে ক্রিস্টাল প্যালেস। লিগ কাপ জিতে ৭০ বছরের শিরোপা-খরা ঘুচিয়েছে আরেক ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসল। ইতালিয়ান ক্লাব বোলোনিয়া ৫০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। আর ডাচ ক্লাব ‘গো এহেড ঈগলস’ শিরোপার দেখা পেয়েছে ৯৩ বছর পর।

১৯০৫ সালে দক্ষিণ লন্ডনের কয়েকজন বাসিন্দা গড়ে তুলেছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেস। ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলে মাঝারি সারির দলটির শিরোপা আক্ষেপ ঘুচেছে শনিবার বিকেলে। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এফএ কাপ ফাইনালে ৮৫ হাজার দর্শকের সামনে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারায় তারা। ম্যাচের শুরুর দিকে একটি পাল্টা আক্রমণ থেকে শিরোপা নির্ধারণী গোলটি করেন এবেরেচি এজে। পুরো ম্যাচ একচেটিয়া খেলা সিটি পেনাল্টি পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেরা এ প্রতিযোগিতায় এর আগে দুবার ফাইনালে উঠেছিল প্যালেস। দুবারই ম্যানচেস্টার তাদের স্বপ্ন ভাঙে। এবার ম্যানচেস্টার শহরেরই আরেক দলকে হারিয়ে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো মেজর ট্রফি জিতল ক্রিস্টাল প্যালেস।

গত ১৬ মার্চ আরেকটি আক্ষেপ ঘোচানোর গল্প লিখেছিল আরেক ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসল। লিগ কাপের ফাইনালে লিভারপুলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ঘরোয়া ফুটবলে নিজেদের নামের পাশে ‘চ্যাম্পিয়ন’ শব্দটি যোগ করে নিউক্যাসল। ১৯৫৫ সালে এফএ কাপ ছিল উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের ক্লাবটির জয় করা শেষ ট্রফি। ঘরোয়া ফুটবলে ৭০ বছর পর শিরোপা জিতলেও ১৯৬৯ সালে অধুনালুপ্ত মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট ‘ইন্টার-সিটিস ফেয়ার্স কাপ’ জিতেছিল নিউক্যাসল।

বোলোনিয়ার গল্পটা অনেকটা একই রকম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ছয়টি স্কুদেত্তো জেতা ক্লাবটি সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ১৯৭৪ সালে। উত্তর ইতালির ক্লাবটির ৫১ বছরের অপেক্ষার অবসান হয় গত বুধবার। রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে ১-০ গোলে এসি মিলানকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ে বোলোনিয়া। নেদারল্যান্ডসের ক্লাব ‘গো এহেড ঈগলস’-এর নামটা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে নতুন। ১৯৩৩ সালে তারা সর্বশেষ ডাচ লিগের শিরোপা জিতেছিল। ৯৩ বছর পর তারা আবার শিরোপা জিতল। এজেড আইকমারকে পেনাল্টি শুটআউটে হারিয়ে তারা ডাচ ঘরোয়া লিগের কেএনভিবি কাপ জিতেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ইন ল বছর র ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ