নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’ এখন ব্যায়ামাগার
Published: 19th, May 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ব্যায়ামাগার। তবে সেটা দখল করে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ, যা শিক্ষার্থীরা টর্চার সেল নামেই চিনতেন।
ওই কক্ষটি ফিরেছে আগের রূপে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন কক্ষটি দখলমুক্ত করে আবারো ব্যায়ামাগারে স্থানান্তর করেছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবরে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী ব্যায়ামাগারটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকেই ব্যায়ামাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। অতীতে দখলকৃত এ ব্যায়ামাগার থেকে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
আরো পড়ুন:
জবিতে প্রথম চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টার উন্মোচন
কাজিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ দিনে ৪১ শিক্ষার্থী অসুস্থ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের তথ্যমতে, প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্যায়ামাগারের জন্য ভবনটি নির্মিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যায়ামাগারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের দাপুটে নেতাকর্মীদের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই কক্ষটি ছাত্রলীগ ব্যবহার করতো ‘টর্চার সেল’ হিসেবে। এখানে শিক্ষার্থীদের ধরে এনে নির্যাতন চালানো হত।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ছাত্রলীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার পতনের প্রায় ১০ মাস পর ব্যায়ামারটি শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এটা প্রশাসনিক ভবনের পূর্ব পাশে টিন শেড বিল্ডিংয়ে অবস্থিত। এর আগে, ছাত্রলীগ কক্ষটি দখল করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলার উন্মুক্ত স্থানে ব্যয়ামাগারের কার্যক্রম চলেছিল।
ব্যামাগারে আসা শিক্ষার্থী শান্ত দেবনাথ বলেন, “অনেক প্রতীক্ষার পরে একটা ব্যায়ামাগার পেয়েছি। তবে ব্যায়ামাগারে সরঞ্জাম অনেক কম। বৃষ্টি হলে পানি চুইয়ে ভিতরে আসে। একজন পেশাদার প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হলে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে পারবে।”
আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ নন্দী বলেন, “ব্যায়মাগার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আমাদের সকাল ৯টায় ক্লাস থাকায় তখন আসতে পারিনা। ৬টা থেকে খোলা থাকলে সকালে এসে শরীরচর্চা করতে পারতাম। ব্যামাগারে সরঞ্জাম বাড়ানোর কথা বললেও বাড়ানো হয়নি। এছাড়া ব্যায়ামাগারে পানি ও পাখার কোনো ব্যবস্থা নেই।”
ব্যায়ামাগার উদ্বোধনের পর স্থানান্তরের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মনিরুল আলম বলেন, “কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছিল অন্য জায়গায় শিফট করতে, তাই করেছিলাম। এখন বলেছে নির্ধারিত জায়গায় শিফট করার জন্য। এজন্য এখন এখানে শিফট করেছি। আর সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষকের বিষয়টি প্রশাসন দেখবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.
তিনি বলেন, “এই অর্থবছরে পর্যাপ্ত বাজেট নেই। নতুন অর্থবছরে বাজেট আসলে ক্রীড়া কমপ্লেক্সে দোতলায় কাজ সম্পন্ন করে সেখানে ব্যায়ামাগার স্থানান্তর করবো ইনশাআল্লাহ।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জনমিতির লভ্যাংশ কর্মশক্তি হইয়া উঠুক
দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির যেই চিত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান অর্থবৎসরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাইয়া ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে উপনীত, যাহা গত বৎসর একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে উক্ত সময়ে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লক্ষ হইতে বৃদ্ধি পাইয়া ২৭ লক্ষ ৩০ সহস্রে থিতু হইয়াছে। বিষয়টা উদ্বেগজনক এই কারণে, বেকারত্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিঘাত কাহারও জন্য সুখকর নহে। বৈধ আয়ের পন্থা না পাইলে অনেকে জীবিকা নির্বাহে ক্ষেত্রবিশেষে নীতি-নৈতিকতাও বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না। সমাজবিজ্ঞানীরা উহাকেই চৌর্যবৃত্তি, ডাকাতি, রাহাজানির ন্যায় নানাবিধ অপরাধ বিস্তারের মোক্ষম কারণ বলিয়া মনে করেন। এহেন পরিস্থিতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতারও জ্বালানিরূপে সাব্যস্ত হইয়া থাকে।
দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির এই চিত্র এমন সময়ে জনসমক্ষে উপস্থিত, যখন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরিণতিতে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থামিয়া যায় নাই। বরং মব সন্ত্রাস নামক নূতন নূতন অস্থিতিশীলতা অপরাধের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়া চলিয়াছে। প্রসঙ্গক্রমে বলিয়া রাখা প্রয়োজন, বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তাহারাই, যাহারা জরিপ শুরুর পূর্বের সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কার্যে ব্যাপৃত হন নাই, কিন্তু কার্যের অভিপ্রায়ে ঐ সাত দিন এবং আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং জরিপ শুরুর পূর্বের ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কার্যের সন্ধান করিয়াছেন। বেকারের উল্লিখিত সংজ্ঞা অধুনা অচল। অর্থাৎ প্রকৃত বেকারত্ব বিবিএসের জরিপের তথ্য অপেক্ষা অধিকতর হইবার আশঙ্কাই প্রবল। এই প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব লইয়া রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকগণ, তৎসহিত নাগরিকদেরও মনোজগতে ভাবনার উদয় হইবার প্রয়োজন রহিয়াছে।
বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণ অন্বেষণে অর্থনীতিবিদগণ সঠিকভাবেই দীর্ঘদিন ধরিয়া চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার অতিরিক্ত হইবার ঘটনাকে দায়ী করিয়াছেন। বেসরকারি খাতে বটেই, সরকারি খাতেও নূতন কর্মসংস্থান বর্তমানে নাই বলিলেই চলে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-বিসিএস পরীক্ষা প্রায় এক বৎসর ধরিয়া বন্ধ। এমনকি ‘বিসিএসজট’ চলিবার সংবাদও আসিয়াছে। অন্যান্য সরকারি চাকুরিতেও নিয়োগ প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ কর্মসংস্থানের বৃহত্তম খাত বলিয়া পরিচিত বেসরকারি খাতে নিয়োগের যে খরা চলিতেছিল; যাহার কারণে তৎকালে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যঙ্গ করিয়া চাকুরিবিহীন প্রবৃদ্ধিরূপে বর্ণনা করা হইত, সেই খরা অদ্যাবধি কাটে নাই। তদুপরি, বিশেষত গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বিশৃঙ্খলার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ লইয়া বিবিধ প্রকার দুর্বৃত্ত বহু শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাইয়া সেইগুলি বন্ধ করিয়া দিয়াছে। অন্য কিছু কারণেও বহু কলকারখানার দরজা তালাবদ্ধ। ফলস্বরূপ, গত ৯ মাসে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাগরিক বেকারের খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করিয়াছেন।
আমর জানি, তারুণ্যের আধিক্যের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতির লভ্যাংশের যুগে রহিয়াছে, যাহা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ ইতোপূর্বে বিশেষত অর্থনৈতিক উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়াছে। স্বভাবতই, এই তরুণ কর্মশক্তিকে উপযুক্ত কার্যে প্রযুক্ত করিতে না পারিলে রাষ্ট্রের জন্য তাহা বিশাল অপচয়রূপে প্রতিভাত হইবে। সরকারের শীর্ষ মহল দাবি করিতেছে, অর্থনীতি ইতোমধ্যে স্থিতিশীল হইয়া উঠিয়াছে। যাহার সুফল অচিরেই জনগণ পাইতে শুরু করিবে। কিন্তু বেকারত্ব বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকিলে তো সকলই গরল ভেল!