নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার ও কিছু প্রশ্ন
Published: 19th, May 2025 GMT
অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনা সংস্কৃতি অঙ্গন ছাড়িয়ে নাগরিকদের মধ্যেও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খোদ সরকারেরই সংস্কৃতি উপদেষ্টা এ ঘটনাকে তাদের জন্য ‘বিব্রতকর’ বলে বর্ণনা করেছেন, যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) মতে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা যা বলেছেন, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত মত।
নুসরাত ফারিয়াকে রোববার থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, হত্যাচেষ্টা মামলার সময়কাল গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়। অকুস্থল রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এলাকা, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা ৩০০-৪০০ জনের সঙ্গে নুসরাত ফারিয়া এই হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটান। ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেছেন এনামুল হক।
পরিহাসের বিষয়, ওই ঘটনার সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে নুসরাত ফারিয়া ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। এ বিষয়ে কালের কণ্ঠ লিখেছে, সেই সময়ে ফারিয়ার অবস্থান নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় ক্যালগারির সেই অনুষ্ঠান আয়োজকদের সঙ্গে। তাদের ফেসবুক ঘেঁটে পাওয়া যায় বেশ কিছু ছবি।
কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে ফারিয়ার বিদেশ যাত্রা ও ফিরতি টিকিট। টিকিটে দেখা যায়, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে নুসরাত ফারিয়া ঢাকা থেকে উড়াল দেন ৯ জুলাই। ওইদিন দুবাই পৌঁছান তিনি। দুবাই থেকে ১০ জুলাই টরন্টোর উদ্দেশে উড়াল দেন কানাডায়। আবার ফেরার সময় ১২ আগস্ট টরন্টো থেকে উড়াল দেন, ১৩ আগস্ট দুবাই পৌঁছান। ট্রানজিট শেষে পরেরদিন অর্থাৎ ১৪ আগস্ট তিনি ঢাকায় আসেন।
শুধু তাই নয়, এ সময়টায় ফারিয়া কানাডার বিভিন্ন রাজ্যে কনসার্টে ব্যস্ত ছিলেন। ফাঁকে ফাঁকে দেশের খবরও রাখছিলেন। একই সঙ্গে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতিও সংহতি জানাচ্ছিলেন।
ফারিয়ার ফেসবুক থেকেও জানা যাচ্ছে, তিনি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি আয়োজনে অংশ নেন; ১৯ জুলাই পোস্ট করেন, ‘২ দিন হয়ে গেল, বাংলাদেশে ইন্টারনেট নেই। দেশটি বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। আমরা কি সত্যিই আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি না? এটা এত কঠিন কেন? খুব অসহায় বোধ করছি।’
এরপর ২৩ জুলাই ফেসবুকে লেখেন, ‘৬ দিন হয়ে গেল আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলিনি। আপনারা সবাই জানেন আমার বাবার অবস্থা তেমন ভালো না। কিন্তু আমি আমার সহকর্মী ছাত্র ভাই এবং বোনের জন্য অনুভব করি। সবার সুস্থতা ও দেশের শান্তি কামনা করছি।’
জুলাই আন্দোলনের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল লাল করেছিলেন। জানা যায়, ফারিয়াও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন না। প্রশ্ন উঠেছে, ‘লাল’ হয়েও ফারিয়া গ্রেপ্তার এড়াতে পারলেন না কেন?
গত সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক যে সিনেমাটি বানিয়েছিল, তাতে ফারিয়া শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অনেকে ধারণা করছেন, ওই কারণেই তাঁকে মামলাটিতে জড়ানো হয়েছে। ওই সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য তাঁর অনুশোচনা হয় কিনা– এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফারিয়া সম্প্রতি তাঁর এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তেমনটা হলে তিনি তাঁর পেশাকেই হেয় করবেন, একজন শিল্পী হিসেবে যা তিনি করতে চান না। এতে অনেকে ক্ষুব্ধ হতে পারেন। ফারিয়াকে মামলায় জড়ানোর পেছনে এটাও ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকে মনে করেন।
একই সিনেমাতেই সংস্কৃতি উপদেষ্টার স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও অভিনয় করেছিলেন শেখ হাসিনার মায়ের ভূমিকায়। এক যাত্রায় দুই ফল কেন? এ প্রশ্নও উঠেছে নেটিজেনদের মধ্যে। সর্বোপরি, ফারিয়ার গ্রেপ্তার ঘটনায় শিল্পীর স্বাধীনতা কি খর্ব হলো না?
সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ফারিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তা শেষ না হলে তাঁর মুক্তি মিলবে না। তিনি এ প্রশ্নও করেছেন, ‘তাঁর নামে মামলা থাকলে আপনি কী করবেন? তাঁকে যদি বিমানবন্দরে ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে বলতেন, ছেড়ে দিছেন। আর এখন বলছেন কেন ধরা হলো।’
কিন্তু সরকার তো বরাবরই বলে এসেছে, মামলা হলেও বিনা কারণে কেউ যেন শাস্তি ভোগ না করেন, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সে ন্যায়বিচার কি ফারিয়া পেলেন? তাঁকে তো তদন্ত শেষেও প্রমাণ সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করা যেত। ততদিন না হয় তিনি বিদেশে না গিয়ে দেশেই থাকতেন। সে ব্যবস্থার দিকে সরকার গেল না কেন? তাই আপাতত এটুকু বললে হয়তো ভুল হবে না, জুলাই-আগস্টে কেউ ‘লাল’ হলেই যে হামলা-মামলা থেকে রক্ষা পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবার মনে থাকার কথা, আরেক অভিনেতা ইরেশ যাকেরও কিন্তু রেহাই পাননি।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ফ সব ক আগস ট সরক র র ঘটন র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ৪৬ শিশুসহ নিহত ১১৪
আফ্রিকার দেশ সুদানে একটি কিন্ডারগার্টেনসহ একাধিক স্থানে আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১১৪ হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টি শিশু। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ হামলার ঘটনা ঘটে সাউথ করদোফান রাজ্যের কালোগিতে, গত বৃহস্পতিবার। কালোগির নির্বাহী পরিচালক গতকাল শনিবার আল–জাজিরাকে অন্তত ৭১ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিলেন।
এর আগে গত শুক্রবার দিনের শেষে সুদানের চিকিৎসকদের জোট সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে জানায়, ঘটনাস্থলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দ্বিতীয়বারের মতো হামলা হয়েছে।
আরও পড়ুনসুদানে আরএসএফের হামলায় নিহত ৩০০১৫ জুলাই ২০২৫সুদানের সরকার–সমর্থিত সুদানিজ আর্মড ফোর্সেসের (এসএএফ) দুটি সূত্র আল–জাজিরাকে জানায়, বৃহস্পতিবার ওই কিন্ডারগার্টেনে আরএসএফ প্রথমবার হামলা চালায়। পর উদ্ধারকাজে সেখানে জড়ো হওয়া বেসামরিক মানুষদের ওপর আরেক দফায় হামলা চালানো হয়।
এ ছাড়া শহরের হাসপাতাল ও একটি সরকারি ভবনে বোমা হামলা চালানো হয়েছে বলে জানায় একটি সূত্র।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক বলেছে, বেসামরিক মানুষ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় একের পর এক হামলার ধারাবাহিকতায় চালানো এবারের হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।সুদানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন উয়েত শুক্রবার বলেন, নিজের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিশুদের হত্যা করা শিশু অধিকারের চরম লঙ্ঘন। বিবদমান সব পক্ষের প্রতি অবিলম্বে এমন সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিশুদের কখনোই সংঘাতের মূল্য চোকানো উচিত নয়।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক বলেছে, বেসামরিক মানুষ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় একের পর এক হামলার ধারাবাহিকতায় চালানো এবারের হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
আরও পড়ুনদারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা০৩ নভেম্বর ২০২৫রাজধানী খার্তুম থেকে আল–জাজিরার হিবা মরগান জানান, প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, হতাহত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। নিহত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কেননা, হামলায় আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
নিজের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিশুদের হত্যা করা শিশু অধিকারের চরম লঙ্ঘন। শিশুদের কখনোই সংঘাতের মূল্য চোকানো উচিত নয়।শেলডন উয়েত, সুদানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি২০২৩ সাল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফের লড়াই চলছে। দেশের কেন্দ্র ও পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে সেনাবাহিনী। আর আরএসএফ পশ্চিমাঞ্চলের, বিশেষ করে উত্তর করদোফান ও দারফুর অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব জোরদার করতে চাইছে। এসব সংঘাতে দরিদ্র দেশটির লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আরও পড়ুনসুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন০২ নভেম্বর ২০২৫