বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জার্মান শেফার্ড, গোল্ডেন রিট্রিভার বা স্প্যানিয়েল প্রজাতির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর পুলিশকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিত করে। তবে করগি জাতের ছোট্ট পায়ের কুকুর পুলিশের কাজে সহযোগিতা করছে, এমন খবর খুব কমই শোনা যায়। চীনে ফু জাই নামের একটি করগি কুকুর পুলিশের দায়িত্ব পালন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুকুরটির চার লাখের বেশি অনুসারী (ফলোয়ার) রয়েছে, যেখানে প্রতিনিয়ত এটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ভিডিও পোস্ট করা হয়।
গত অক্টোবরে চীনের শানডং প্রদেশের ওয়েইফাং শহরের জননিরাপত্তা ব্যুরোতে যুক্ত হয় ফু জাই। কর্মতৎপর ছোট্ট কুকুরটি ‘স্নিফার ডগ’ হিসেবে কাজ করছে। তীক্ষ্ণ ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের বিস্ফোরক শনাক্ত করতে পারে সে। শুধু দক্ষতাই নয়, বাহ্যিক সৌন্দর্য, ছেলেমানুষি আচরণ আর খাবারের প্রতি অদম্য আসক্তি দিয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ফু জাই।
করগি প্রজাতির এই কুকুর একসময় ঘরোয়া পোষা প্রাণী ছিল। গত বছর এটি পুলিশে যোগ দেয়। সেই ঘটনাও ছিল বেশ মজার। পুলিশ প্রশিক্ষক ঝাও ছিংশুয়াই একদিন ফু জাইকে একটি পার্কে দেখতে পান। নাম ধরে ডাকতেই এটি আনন্দের সঙ্গে দৌড়ে চলে আসে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঝাও বলেন, ফু জাই খাবার দেখলে মোটেই ঠিক থাকতে পারে না। এটা প্রমাণ করে যে তার মধ্যে কাজ করার ইচ্ছাশক্তি প্রবল।
তবে এই ইচ্ছাশক্তি কুকুরটিকে অনেক সাফল্যের পাশাপাশি কিছু মজার বিপত্তির মুখেও লেছে। সম্প্রতি টহলের সময় একটি শিশুর হাত থেকে সসেজ ছিনিয়ে নেয় ফু জাই। আর সেই দৃশ্য একটি ভিডিওতে ধরা পড়ে। ওই ঘটনার পর প্রশিক্ষকেরা কুকুরটির খাবারের প্রতি দুর্বলতা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। তবে এ ঘটনায় তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থকেরা তাকে ব্যাপক উৎসাহ দেন। সঙ্গে আরও সসেজ দেওয়ার প্রস্তাব।
ফু জাই প্রমাণ করেছে যে সে পুলিশের দক্ষ সদস্য। ছোট আকারের হওয়ার কারণে এটি এমন জায়গায় ঢুকতে পারে, যেখানে বড় কুকুর যেতে পারে না। যেমন গাড়ির নিচে বা বাসের সিটের তলায় অনায়াসেই ঢুকে যেতে পারে ফু জাই। এই যোগ্যতা তাকে অনন্য ও অপ্রত্যাশিত সম্পদে পরিণত করেছে।
টিকটকের মতো চীনের আরেকটি প্ল্যাটফর্ম দাউইনে ফু জাইয়ের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। সেখানে ওয়েইফাং পুলিশ নিয়মিত এটির সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানায়। ‘ফু জাই ও তার সঙ্গীরা’ শিরোনামের একটি অ্যাকাউন্টে ইতিমধ্যে চার লাখের বেশি অনুসারী যুক্ত হয়েছে। ভক্তরা নিয়মিত তার সানগ্লাস পরা, উৎসবে পাহারা দেওয়া ও প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নেওয়ার ছবি দেখতে অ্যাকাউন্টে ঢুঁ মারেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোনোভাবেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না
আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট দেওয়ার আগে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর কথায় আগামী বাজেটের মূল দর্শন, অগ্রাধিকার, সংস্কার, করনীতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান, এলডিসি থেকে উত্তরণসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেসবাহুল হক
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটের মূল দর্শন কী হবে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবারের বাজেট গতানুগতিক হবে না। বাস্তবায়ন করা যায় এমন বাজেট দেওয়া হবে। আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে বাজেটে সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। সহায়তা না পাওয়া গেলে বাজেট দেওয়া কঠিন হয়ে যেত। তবে যথাসম্ভব অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে। বাজেটের লক্ষ্য থাকবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
আগে ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষ এর সুফল পায়নি। আগামী বাজেটের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে চেষ্টা করা হবে। সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ থাকবে। এবারের বাজেটের অন্যতম চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। এখন ৯ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সাড়ে সাত বা আট শতাংশে নামিয়ে আনতে পারব। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো হবে। বাজারে কিছু মধ্যস্বত্বভোগীর প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের এখানে অনেক বেশি। একটি অংশ চাঁদা আদায় করে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যাপার নয়, আইনশৃঙ্খলার ব্যাপার। রাজনীতির ব্যাপারও রয়েছে।
সমকাল: ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কী কী উদ্যোগ থাকবে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমাদের মূল লক্ষ্য ব্যবসা আরও সম্প্রসরিত করা। এটি করা গেলে প্রত্যেক মানুষ সুবিধা পাবে। ‘অলিগার্ক’ প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে অন্যরা সুবিধা পায় না। ছোট ছোট ফার্ম আসবে। এতে গুণগত মান বাড়বে। এসএমই ডেটাবেইজ তৈরি করা হবে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল আছে। প্রয়োজনে তহবিল বাড়ানো হবে।
সমকাল: আপনি আগে বলেছিলেন, আইএমএফের ঋণ ছাড়াই বাজেট দেবেন। এখন কেন তাদের ঋণ ছাড়া বাজেট দেওয়া কঠিন হতো বলে মনে করছেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমাদের অবস্থান ছিল মুদ্রাবিনিময় হারে আইএমএফ যেভাবে চাইছে, নমনীয়তা দেখাব না। পরে আলোচনায় একটা সমঝোতা হয়েছে। আইএমএফের অর্থ না পাওয়া গেলে অন্যান্য সংস্থার বাজেট সহায়তা পাওয়া যেত না। এতে করে বাজেট আরও ছোট করতে হতো। অথবা আরও বেশি ট্রেজারি বিল-বন্ড ইস্যু করার প্রয়োজন হতো। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব চিন্তা করে অর্থ নেওয়া হয়েছে।
সমকাল: আইএমএফও কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। কর আদায় বাড়াতে গিয়ে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষের ওপর কোনো চাপ বাড়বে বলে মনে করেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমি মনে করি, চাপ বাড়বে না। জনগণ যে কর দেয় তার একটা অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। আদায়কারী করকর্তাদের পকেটে চলে যায়। ক’দিন আগে একজন কমিশনার ১০০ কোটি টাকা করের মধ্যে ৬০ কোটি টাকা ছাড় দেখিয়েছে। এর মধ্যে কত নিজে তিনি নিয়েছেন, তিনিই ভালো জানেন। বিষয়টি জানতে পেরে আমি এনবিআর চেয়ারম্যানকে বলেছি, আগে ‘সাসপেন্ড’ করো, তারপর পুলিশে দাও। এগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি কর ফাঁকি বন্ধেরও উদ্যোগ থাকবে। তাছাড়া করছাড়ও কমিয়ে আনা হবে। এসব উদ্যোগে জনগণের ওপর আর চাপ দেওয়া লাগবে না।
সমকাল: বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ থাকবে কী?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: কোনো খাতেই কোনোভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। কালো টাকার উৎস বন্ধে আমি চেষ্টা করছি, যে দামে জমি কেনাবেচা হয়, সে দামেই হবে জমির নিবন্ধন বা দলিল। এক্ষেত্রে করও কমানো হবে। এত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হবে কিনা জানি না। গুলশানে প্রতি কাঠা জমি ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি হলেও দলিল হয় ৫ কোটি টাকায়। এভাবে কেনাবেচায় দু’পক্ষই বিপদে পড়েছে। অনেকে ঘুষটুষ দিয়ে এখান থেকে পার পাচ্ছে। আমরা এ প্রবণতা বন্ধ করতে চাই।
সমকাল: জ্বালানি সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে উদ্যোক্তারা উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন। বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য কী বার্তা দেবেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: এ সরকার আসার পরই সবাই দাবি-দাওয়া নিয়ে আসছে। অনেক দাবি যে যৌক্তিক, তাও নয়। তবে সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়াতে যেভাবেই হোক জ্বালানি নিশ্চিত করা হবে। সার ও জ্বালানি বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না। যত টাকা লাগবে, দেওয়া হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে না। তবে সিস্টেম লস কমিয়ে ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সমকাল: অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী বাজেটে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এসব বিষয়ে কী থাকছে বাজেটে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশের দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ বা অবসায়নসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আলাদা নতুন আইন হয়েছে। আমানতকারীদের বহু টাকা বেহাত হয়ে গেছে। কীভাবে তাদের অর্থ পরিশোধ করা যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতোমধ্যে ৬টি ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকিগুলোও করা হবে। যাদের বড় বড় আমানত যেমন– ১০ কোটি টাকা চাইলেই হুট করে দেওয়া সম্ভব হবে না। ছোট ছোট আমানত দেওয়া সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া হবে। বড় আমানতের ক্ষেত্রে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার হওয়ার ‘অপশন’ দেওয়া হবে। কাউকে বন্ড বা শেয়ার দেওয়া হতে পারে। এসবের জন্য আলাদা একটি তহবিল গঠন করবে সরকার।
সমকাল: এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কর্মকর্তারা আন্দোলন করছেন। তারা কলমবিরতিতে রয়েছেন। এর সমাধান কীভাবে হবে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নীতি করতে আলাদা বিভাগ করায় এনবিআরের লোকজন হইচই করছেন। আমরা এখানে ‘কম্প্রোমাইজ’ করব না। ২০০৮ সালে চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন কর্মকর্তারা করতে দেননি। সচিব পদ নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা ভুল ধারণায় আন্দোলন করছেন। অধ্যাদেশের কোনো জায়গায় বলা হয়নি যে, সচিব নির্দিষ্ট ক্যাডার থেকে নেওয়া হবে। ব্যবস্থাপনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কর এবং কাস্টমসকে। তারা এতেও সন্তুষ্ট নন।
সমকাল: সার্বিকভাবে নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার কী থাকছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: সার্বিকভাবে বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, মানুষের জীবনমান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় বাড়তি নজর থাকবে। স্বাস্থ্যসেবায় টাকা কম দেওয়া হয় তা নয়, কিন্তু বাস্তবায়ন খুব খারাপ। যন্ত্রপাতি পড়ে থাকে, নষ্ট হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু মৌলিক বিষয় পরিচালন বাজেটে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে প্রকল্পনির্ভর না হয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে পরিচালন বাজেট বড় হবে। ইতোমধ্যে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের দেনাপাওনাসহ অনেক বকেয়া ইস্যু সমাধান করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা কিছুটা বাড়ানো হবে।
সমকাল: বাজেটে কর কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন থাকছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: সরকারের আয় বাড়াতে বাজেট ব্যবসাবান্ধব করা হবে। আগের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান সুবিধা পাবে এমনটি হবে না। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। এর আগে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় অনেক ভালো উদ্যোক্তা পিছিয়ে পড়েছেন। এবার তা হবে না।